করিমগঞ্জের সেই সড়ক।— ফাইল চিত্র।
অসম ও ত্রিপুরার মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম ‘লাইফলাইন’ ওই জাতীয় সড়ক। কিন্তু এক পশলা বৃষ্টিতেই স্তব্ধ হয় সেই রাস্তার যানবাহন! দাঁড়িয়ে যায় কয়েকশো গাড়ি। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এমনই করুণ দশা করিমগঞ্জের চূড়াইবাড়ি এলাকার ৮ নম্বর জাতীয় সড়কের। দু’টি রাজ্যের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সেটি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাস্তা মেরামতির দাবিতে ১৮ বার আন্দোলন হয়েছে। অবরোধ, বিক্ষোভ, মিছিল, ধর্না, বন্ধ— সবই হয়েছে। কিন্তু ৩ বছরে বদলায়নি করিমগঞ্জ-চূড়াইবাড়ি জাতীয় সড়কের অবস্থা। এ নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষস্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলাশাসকও। লাভ হয়নি তাতেও।
করিমগঞ্জ জেলার ৪ জন বিধায়কের মধ্যে রয়েছেন অসমের পূর্ত বিভাগের সংসদীয় সচিবও। চূড়াইবাড়ির যে জায়গায় জাতীয় সড়ক একেবারে বেহাল, সেখানকারই বিধায়ক তিনি— মণিলাল গোয়ালা। কিন্তু তাঁর বিধানসভা এলাকাভুক্ত ওই সড়কে এক পশলা বৃষ্টিতেই থকথকে কাদা জমে। তাতে আটকে যায় গাড়ির চাকা। বিচ্ছিন্ন হয় ত্রিপুরার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি ? প্রশাসনিক সূত্রে খবর, তিন বছর আগে করিমগঞ্জ-চূড়াইবাড়ি জাতীয় সড়ক মেরামতির জন্য ওড়িশার একটি সংস্থাকে বরাত দেয় পূর্ত বিভাগ। প্রথম পর্যায়ে কাজ ভাল ভাবে হলেও, পরবর্তী সময়ে গতি কমে যায়। কার্যত বন্ধ হয়ে যায় সংস্কারের কাজ। তার জেরে সমস্যায় পড়েন পুয়ামারা থেকে চূড়াইবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকার মানুষ। শুরু হয় আন্দোলন। দু’দিন জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। তাতে কিছুটা তৎপর হয় করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে জেলাশাসক সঞ্জীব গোঁহাই বরুয়া এ নিয়ে পূর্ত বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই বিভাগের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার ২৫ অগস্ট করিমগঞ্জের পুয়ামারা থেকে চূড়াইবাড়ি পর্যন্ত জাতীয় সড়ক পরিদর্শন করেন। অন্য একটি ঠিকাদার সংস্থাকে মেরামতির বরাত দেওয়া হয়। কিন্তু পরিস্থিতি একই থাকে।
এলাকাবাসী জানান, এখন চূড়াইবাড়িতে ওই সড়কের হাল অত্যন্ত খারাপ। যে কোনও সময় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একটু বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। গত ৬ এপ্রিল থেকে তিন দিন ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। অভিযোগ উঠেছে, ওড়িশার সংস্থাটি সড়ক মেরামতির কাজে যে রকম গাফিলতি করেছিল, নতুন সংস্থাও তেমনই করছে।
এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দক্ষিণ করিমগঞ্জের এক রাজনৈতিক নেতার ঘনিষ্ঠ লোকজন সড়কের নির্মাণ সামগ্রী জোগান দেওয়ার বদলে মোটা টাকা আদায় করার চেষ্টা করছে। তাতেই ফের থমকে গিয়েছে মেরামতির কাজ। সড়ক নির্ণের ক্ষেত্রে এ সমস্ত সমস্যার সমাধান কবে মিলবে, সেই জবাব মেলেনি করিমগঞ্জের জেলাশাসকের কাছেও।