—ফাইল চিত্র।
জগন্নাথক্ষেত্র পুরীতে পাশাপাশি বিচিত্র বৈপরীত্য! সমুদ্রের জলরাশি অনিঃশেষ, কিন্তু তার স্বাদ লোনা। অথচ সমুদ্রছোঁয়া সৈকতের মাটির তলায় অন্য জলের ভাঁড়ার, মিষ্টি জল। সেই প্রাকৃতিক ভাঁড়ার যাতে নির্বিচারে ‘লুঠ’ না-হয়, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ।
ওই আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার জানিয়েছে, ওই জল সংরক্ষণের গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন ওড়িশার মুখ্যসচিব। মিষ্টি জলের ভাঁড়ার রক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, সেই বিষয়ে ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে হবে আদালতে।
পুরীর পরিবেশ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তার অন্যতম বিষয় ভূগর্ভস্থ মিষ্টি জলের ভাঁড়ার সংরক্ষণ। সুভাষবাবু জানান, সাগরসৈকত সংলগ্ন ভূগর্ভে এমন মিষ্টি জলের ভাঁড়ার প্রকৃতির বিরল উপহার। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ সরকার পুরীর চক্রতীর্থ ও বালিয়াপণ্ডা এলাকায় এই মিষ্টি জলের ভাঁড়ার চিহ্নিত করে এবং তা সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়। ২০০০ সালে ওড়িশা সরকারও ওই দু’টি অঞ্চলকে ‘সংরক্ষিত এলাকা’র তকমা দেয়। পরিবেশ আদালতে মামলা হওয়ার পরে ২০১৬ সালের জুনে কেন্দ্রীয় ভূ-জল পর্ষদও ওই দু’টি এলাকা সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করে। সুভাষবাবুর অভিযোগ, ঘোষণাই সার। সংরক্ষণ বলতে প্রকৃত অর্থে যা বোঝায়, কার্যত তার কিছুই হচ্ছে না। ওই দুই এলাকা থেকে নির্বিচারে তুলে ফেলা হচ্ছে মিষ্টি জল।
আরও পড়ুন: আত্মসমর্পণ নয়, বলেছিল দুজানা
পাশাপাশি ভূপৃষ্ঠে লোনা জল আর ভূগর্ভে মিষ্টি জল কী ভাবে?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওশেনোগ্রাফিক স্টাডিজের শিক্ষক তুহিন ঘোষ বলেন, ভূমিকম্পের ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাটির অনেক তলায় থাকা মিষ্টি জলস্তরের একাংশ ভেঙে উপরের দিকে উঠে আসে। তখনই নোনা জলস্তরের মাঝখানে অল্প একটু এলাকায় মিষ্টি জলের ভাঁড়ার মেলে। একে বলে ‘পকেট অ্যাকুইফার’ বা ‘পার্চড অ্যাকুইফার’।
পুরীর পরিবেশ সংক্রান্ত মামলায় কঠিন বর্জ্য এবং নিকাশির দূষণের কথাও উঠে এসেছে। বর্জ্য ও নিকাশির দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরী প্রশাসনকে বেশ কয়েক বার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। এ দিনও বর্জ্য ও দূষণ ঠেকানোর জন্য জেলাশাসক এবং পুরী পুরসভাকে একাধিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।