এই ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরেই সিগন্যালিংয়ের কাজের বরাত পেয়েছিল চিনা সংস্থা। —ফাইল চিত্র
চিনা পণ্য বর্জনের দাবি উঠেছে নানা মহল থেকে। আপাতত সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও গলওয়ান উপত্যকায় সেনা সংঘর্ষের জেরে বাণিজ্য ক্ষেত্রে যে বেজিং অনেক কিছুই হারাতে চলেছে, তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্র বিএসএনএল-কে বলে দিয়েছে, ফোর জি আপগ্রেডের কাজে চিনা পণ্য ব্যবহার না করতে। তার সঙ্গে রেলের বড়সড় বরাতও হারাতে চলেছে চিনের সংস্থা। রেল সূত্রে খবর, ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের জন্য সিগনালিং সিস্টেম তৈরির জন্য ৫০০ কোটির বরাত বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের অর্থসাহায্যকারী বিশ্ব ব্যাঙ্ককেও ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে ওই প্রকল্পের আধিকারিকদের সূত্রে খবর।
ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের জন্য উত্তরপ্রদেশের নিউ ভানুপুর থেকে মুঘলসরাই পর্যন্ত ৪১৩ কিলোমিটার রেললাইন তৈরির কাজ চলছে। এই প্রকল্পে অর্থসাহায্য করছে বিশ্বব্যাঙ্ক। প্রকল্পে সিগন্যালিং এর যাবতীয় কাজের বরাত পেয়েছিল চিনের রেল যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘চায়না রেলওয়ে সিগন্যাল অ্যান্ড কমিউনিকেশন কর্পোরেশন’ (সিআরএসসি)। ২০১৬ সালে প্রাপ্ত বরাতের অঙ্ক ছিল ৫০০ কোটি টাকা। সিআরএসসি-র দায়িত্ব ছিল সিগন্যালিং-এর যন্ত্রাপাতির নকশা তৈরি করা, সেই অনুযায়ী তৈরি করে সরবরাহ করা, বসানো এবং পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর হস্তান্তর করা।
কিন্তু ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (ডিএফসিসিআইএল) সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাত পাওয়ার পর গোড়া থেকেই সিআরএসসি-র কাজে সন্তুষ্ট ছিলেন না কর্তৃপক্ষ। কাজে বিলম্ব-সহ নানা অভিযোগ ছিল সংস্থার বিরুদ্ধে। ফলে বরাত বাতিল করে অন্য সংস্থাকে দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল। তার মধ্যেই সোমবার রাতে গলওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষে সেই ভাবনা গতি পেয়েছে। ইতিমধ্যেই বরাত বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ককে জানিয়ে দিয়েছেন ডিএফসিসিআইএল-এর কর্মকর্তারা। দেশের অভ্যন্তরেও রেল ও সংশ্লিষ্ট অন্য সব পক্ষেই এ বিষয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: গলওয়ানে ফের ভারত-চিন সামরিক পর্যায়ের বৈঠক, অবস্থানে অনড় বেজিং
তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ডিএফসিসিআইএল-এর আধিকারিকরা। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অনুরাগ সাচান সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘‘সরকারি ভাবে সিলমোহর না পড়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। তবে আমরা খুশি হব, যে কোনও ভাবে ভারতীয় কোনও সংস্থা বরাত পেলে।’’
আরও পড়ুন: কাঁটা লাগানো এই লোহার রডেই চিনা হামলা, পাল্টা নয়া বর্মের পরিকল্পনা সেনার
অন্য দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাতেও চিনা যন্ত্রাংশ বর্জনের হাওয়া জোরদার। বেসরকারি দুই টেলিকম সংস্থা ভোডাফোন-আইডিয়া এবং ভারতী এয়ারটেল দীর্ঘদিন ধরে ফোর জি পরিষেবা দিলেও বিএসএনএল এখনও তা দিতে পারেনি। সেই পরিষেবা দিতে প্রযুক্তিগত আপগ্রেডেশনের কাজ চলছিল। তাতে চিনের বিভিন্ন একাধিক সংস্থার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছিল। কিন্তু বুধবারই সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে একাধিক সংবাদ সংস্থা জানিয়েছিল, টেলিকম মন্ত্রকের তরফে বিএসএনএল-কে বলে দেওয়া হয়েছে, ফোর জি প্রযুক্তির জন্য চিনা যন্ত্রপাতি বা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা যাবে না।’’ একটি সূত্র এও জানিয়েছিল যে পুরো বরাতের প্রক্রিয়াই বাতিলের কথা ভাবছে কেন্দ্র। অন্য দিকে চিনা যন্ত্রপাতির উপর নির্ভরতা কমানোর জন্য বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলিকেও সরকার বার্তা দিতে পারে বলে একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।