ছবি সংগৃহীত।
চিন ফের ‘আগ্রাসী আচরণ’ করলে সামরিক বাহিনীকে ‘যথাযথ জবাব’ দেওয়ার ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়া হল। রবিবার সকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বৈঠক করেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ ও তিন সামরিক বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে। সেখানেই এ কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ওই বৈঠকে সামরিক বাহিনীকে ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরুরি অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার আর্থিক ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সামরিক বাহিনীর উপ-প্রধানেরাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, এর ফলে সামরিক বাহিনী দ্রুত প্রয়োজন মতো অস্ত্রশস্ত্র কিনে ফেলতে পারবে। মন্ত্রকে লাল ফিতের ফাঁসে সিদ্ধান্ত আটকে থাকবে না। রবিবারের এই বৈঠকের আগেই চিনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনাবাহিনীর অস্ত্র ব্যবহার না-করার নিয়ম পাল্টানোর সিদ্ধান্ত হয়। অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে মোতায়েন সেনার কমান্ডারেরাই গোলাগুলি চালানোর নির্দেশ দিতে পারবেন।
সরকারের এই দাবির পরে অবশ্য প্রতিরক্ষা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন কি অন্য রাষ্ট্র আগ্রাসন দেখালেও সেনাকে হাত গুটিয়ে বসে থাকার নির্দেশ দেওয়া ছিল? প্রয়োজনে গোলাগুলি চালানোর নির্দেশের মধ্যেই বা নতুন কী রয়েছে?
গত সোমবার রাতে গালওয়ান উপত্যকায় চিনের সেনাবাহিনীর কাঁটালাগানো রডের ঘায়ে ২০ জন সেনা অফিসার ও জওয়ান নিহত হওয়ার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, কেন জওয়ানদের নিরস্ত্র অবস্থায় ওখানে পাঠানো হয়েছিল? কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর এই প্রশ্নের জবাবে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছিলেন, ‘‘সীমান্তে সেনার সব বাহিনীই সঙ্গে অস্ত্র রাখে। বিশেষ করে নিজের চৌকি ছেড়ে বেরোনোর সময়। গালওয়ানের জওয়ানরাও তা-ই করেছিলেন। কিন্তু ১৯৯৬ ও ২০০৫-এর চুক্তি অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না-করাটাই দীর্ঘমেয়াদি নিয়ম।’’
আরও পড়ুন: ‘সে রাতে আটক চিন সেনারাও’! ভি কে সিংহের বক্তব্যে অনেক প্রশ্ন
সেনা সূত্রের খবর, এই নিয়মেই এ বার বদল করা হচ্ছে। ১৯৯৬ ও ২০০৫-এর চুক্তি মেনে ‘রুলস অব এনগেজমেন্ট’-এ ছিল, কোনও পক্ষই গুলি ছুড়বে না। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দু’দিকে দু’কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কেউ বিস্ফোরকও ব্যবহার করবে না। কিন্তু এ বার অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কমান্ডারেরা গুলি করার নির্দেশ দিতে পারেন। খুব শীঘ্রই চিনের সঙ্গে কোর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হবে। সেখানেও এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনান্ট জেনারেল এইচ এস পনাগ আগেই যুক্তি দিয়েছিলেন, ১৯৯৬ সালের চুক্তির ষষ্ঠ অনুচ্ছেদে লেখা এই নিয়ম সীমান্ত পরিচালনার জন্য। কোনও সামরিক পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখানে এই নিয়ম খাটে না। আর এক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রামেশ্বর রায় বলেন, ‘‘এমন হয় না কি, যে জওয়ানদের ভিড় জড়ো করে পিটিয়ে মারা হচ্ছে, সেখানে তাদের ঠেকাতে গুলি চালানো হবে না? সেখানে গুলি চালাতে হবে।’’ সেই ছাড়পত্র আগেই দেওয়া থাকলে এখন নতুন কী ব্যবস্থা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন: ভারতের ১০০ বনাম চিনের ৩৫০ সেনা! গলওয়ানে সে দিন ৩ ঘণ্টা চলেছিল সংঘর্ষ
রাজনাথ সোমবারই রাশিয়া রওনা হচ্ছেন। সূত্রের দাবি, তার আগে আজকের বৈঠকে সরকারের দিক থেকে সামরিক বাহিনীকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, শুধু লাদাখে চিন সীমান্ত নয়, আকাশে ও সমুদ্রে চিনের দিক থেকে কোনও বাড়াবাড়ি দেখলে সেখানেও কড়া মনোভাব নিতে হবে। রাশিয়ায় রাজনাথ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েতের জয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সামরিক প্যারেডের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তবে চিনের কর্তাদের সঙ্গে তাঁর কোনও বৈঠকের সম্ভাবনা নেই।