প্রতীকী ছবি।
লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা হামলার প্রেক্ষিতে ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা সেনার ১৪ নম্বর কোরের নেতৃত্ব থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরেন্দ্র সিংহকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সম্ভবত আগামী সপ্তাহেই তাঁর পরিবর্তে দিল্লির সেনা সদর দফতর থেকে সমপদমর্যাদার কোনও অফিসারকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানোর কথা ভাবা হয়েছে। ৬ জুন দু’দেশের মধ্যে যে শীর্ষ সামরিক পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল তাতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন হরেন্দ্র। কিন্তু সেনা সূত্রের খবর, ওই বৈঠকের পরেও যে পরিস্থিতি এতটা ঘোরালো হয়ে উঠতে পারে তা সম্ভবত আঁচ করতে পারেননি ওই অফিসার। যার ফলে নিহত হন কুড়ি জন ভারতীয় সেনা। সেনা সূত্রের মতে, সম্ভবত সে কারণেই অগস্ট মাসে ওই পদে হরেন্দ্রর মেয়াদ শেষের আগেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্রের মতে, কারোতে অবস্থিত ৩ নম্বর ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের কমান্ডারকেও একই সঙ্গে সরানোর কথা ভাবা হয়েছে।
এ দিকে গালওয়ান নদীর উপরে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে সেতু নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছে চিন, সেই সেতু তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি সাজোসাজো রব দেখা গিয়েছে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে। সুখোই-৩০এমকেআই, মিরাজ-২০০০, জাগুয়ার বিমানগুলি লাদাখ-সহ সীমান্ত সংলগ্ন ফরোয়ার্ড বেসে পাঠানো শুরু হয়েছে। যাতে দরকারে খুব অল্প সময়ে অভিযান চালানো যায়। সীমান্তে সেনাকে দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার কথা মাথায় রেখে লাদাখ এলাকায় পাঠানো হয়েছে সদ্য আমেরিকা থেকে কেনা অ্যাপাচে হেলিকপ্টার। আইএল-৭৬ মালবাহী বিমান শ্রীনগর থেকে সেনা ও রসদ পৌঁছে দিতে গত কাল থেকেই একাধিকবার যাওয়া-আসা শুরু করেছে। উড়ছে নজরদারি বিমান। সেনা সূত্রের খবর, লাদাখে সংঘর্ষের পরেই পঠানকোটের সেনা ছাউনি থেকে দু’টি শিখ ব্যাটেলিয়নকে পাঠানো হয়েছে লে-তে। আগামিকালের মধ্যে তাদের লে-তে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
আরও পড়ুন: ১০ সেনা বন্দি ছিলেন! সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন বিরেধীদের
লাদাখের উত্তেজনাময় পরিস্থিতির মধ্যেই ওই এলাকা ঘুরে বায়ুসেনার প্রস্তুতি দেখে এলেন বায়ুসেনা প্রধান আরকেএস ভাদৌরিয়া। সোমবার রাতে গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ও চিনা সেনার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এক দিন পরেই, বুধবার সকালে লে বায়ুসেনা ঘাঁটি পরিদর্শন করতে যান বায়ুসেনা প্রধান। পরের দিন তিনি যান শ্রীনগরে। শ্রীনগর, লে ও অবন্তীপোরায় বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলির ব্যবস্থাপনা ও যুদ্ধের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন তিনি।
ভারত তৎপরতা বাড়ালেও, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার বায়ুসেনার তৎপরতার প্রশ্নে অনেকাংশেই শান্ত বলেই গোয়েন্দা সূত্রে খবর। চিনের দিকে লাদাখের সবচেয়ে কাছের বিমানঘাঁটি হল তিব্বতের নগৈরি। এছাড়া পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে স্কার্দু বিমানঘাঁটিতে চিনের বিমান রাখা থাকে। দুটি ঘাঁটিতেই কোনও উল্লেখজনক গতিবিধি না থাকলেও নজর রাখা হচ্ছে। সূত্রের মতে, চিনের বায়ুসেনার কাছে সমস্যা হল তাদের বিমানঘাঁটিগুলি সমুদ্রতল থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত। ফলে তেল ও অস্ত্রশস্ত্র বহন করার প্রশ্নে বরাবরই সমস্যার মুখে পড়তে হয় চিনের বিমানকে। তুলনায় ভারতীয় বিমানঘাঁটি রয়েছে জম্মুতে, শ্রীনগরে। ঘাঁটি হিসেবে যেগুলির উচ্চতা অনেক কম। এ ছাড়া উত্তর ভারতের বরেলী, আদমপুর, মথুরা, দিল্লির হিন্ডন থেকেও লড়াকু বিমান পূর্ণমাত্রায় অস্ত্রশস্ত্র ও তেল নিয়ে উড়তে সক্ষম। ফলে তৈরি রাখা হয়েছে গোটা উত্তর ভারতের বিমান ঘাঁটিগুলিকে।
যে ভাবে সেনা অফিসার হরেন্দ্র সিংহকে সরানোর কথা চলছে তা দেখে অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায় তাঁর ঘাড়ে চাপাতে চাইছে সরকার। অনেক প্রাক্তন সেনা কর্তাই অবশ্য মনে করছেন, হরেন্দ্র পরিস্থিতি বুঝতে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। ৬ জুন শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পরেও চিনা সেনা যে গালওয়ান ছেড়ে নড়বে না, তা বুঝতে পারেননি পোড়খাওয়া ওই সেনা কর্তা।