আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু নয়, ভারতকে আরও চাপে ফেলতে উদ্যোগী হলেন পাকিস্তানি বিদেশসচিব। দিনের শেষে তাই দিল্লিও চাঁচাছোলা ভাষায় জানিয়ে দিল, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সন্ত্রাসের প্রভাবকে উপেক্ষা করা যায় না। সেটা পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের নির্দেশেই বিদেশসচিব আজিজ আহমেদ চৌধুরি ভারত-বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন বলে মনে করছে সাউথ ব্লক।
সম্প্রতি দিল্লিতে বসে পাক রাষ্ট্রদূত আব্দুল বসিত বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা প্রক্রিয়া ঠান্ডা ঘরে চলে গিয়েছে। আজ এশিয়ার নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লিতে আসেন পাক বিদেশসচিব আজিজ আহমেদ চৌধুরি। ওই সম্মেলনের পাশাপাশি যে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে তা গতকালই জানিয়েছিল বিদেশ মন্ত্রক। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি ফের আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু হল? কিন্তু তা নিয়ে মুখ খোলেনি সাউথ ব্লক। সম্প্রতি পাকিস্তান নিয়ে বার বার হাত পোড়ার পরে সতর্ক ছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
আজ সারা দিনের কূটনৈতিক চিত্রনাট্য বুঝিয়ে দিয়েছে, সতর্ক থেকে ঠিকই করেছিল। সকালে সাউথ ব্লকের নির্দিষ্ট ঘরটিতে কুশল বিনিময় এবং করমর্দনের পর সোফায় তখন সবে বসেছেন ভারত এবং পাকিস্তানের বিদেশসচিব। আলোকচিত্রীরা কাজ শেষ করে একে একে বেরোচ্ছেন ঘর থেকে। আলোচনা শুরু হয়েছে সবেমাত্র।
এমন এক সময়ে হঠাৎই বিবৃতি দিয়ে বসলেন ভারতে নিযুক্ত পাক রাষ্ট্রদূত আব্দুল বসিত। আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, জম্মু- কাশ্মীরকে মুখ্য বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আজিজ চৌধুরি। তিনি জয়শঙ্করকে জানিয়ে দিয়েছেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত কাশ্মীরি মানুষের ইচ্ছা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব মোতাবেক।
কূটনীতিকদের মতে, এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট ভারতের উপরে চাপ বাড়াতেই এসেছিলেন আজিজ চৌধুরি। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা প্রক্রিয়া শুরুর কোনও উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। সাউথ ব্লক সূত্রের মতে, পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের কর্তৃত্ব যে একেবারেই দুর্বল হয়ে গিয়েছে তা ফের প্রমাণ হয়ে গেল। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি এখন পুরোপুরি পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের নির্দেশেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক।
পাকিস্তানের মনোভাব বুঝে সুর চড়ায় ভারতও। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, বৈঠকে জয়শঙ্কর পঠানকোট তদন্তের প্রসঙ্গ তোলেন। কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দারা কবে পাকিস্তান যেতে পারবেন তা জানাননি আজিজ। তখন বালুচিস্তানে ধৃত প্রাক্তন ভারতীয় নৌসেনা অফিসার কুলভূষণ যাদবের কথা তোলেন জয়শঙ্কর। তিনি সাফ জানান, কুলভূষণকে ইরান থেকে অপহরণ করে বালুচিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার পর তাঁকে ভারতীয় চর প্রমাণের চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। এখনই কুলভূষণের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের দেখা করতে দেওয়া উচিত। জবাবে আজিজ জানান, কুলভূষণ যে ভারতের চর তার প্রমাণ আছে। পরে পাক হাইকমিশনও বিবৃতি দিয়ে জানায়, করাচি ও বালুচিস্তানে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র-এর কাজকর্ম নিয়ে পাক নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন। সে কথা জয়শঙ্করকে জানানো হয়েছে।
দিনের শেষে তাই কড়া বিবৃতি দেয় ভারতও। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, সন্ত্রাস যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে তা লুকিয়ে লাভ নেই। পাকিস্তানের যে জঙ্গি সংগঠনগুলি ভারতকে নিশানা করছে তাদের ছেড়ে কথা বলা যাবে না। সে কথা আজিজকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন জয়শঙ্কর। আপাতত আলোচনা শুরুর যে আশা নেই, তা মেনেই নিচ্ছেন মোদী সরকারের কর্তারা।