জেএনইউয়ে বিরোধী স্লোগান ইন্দিরার সামনেই

বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ঘিরে প্রতিবাদের ধরন এবং গেরুয়া বাহিনীর পাল্টা তাণ্ডবের পর প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রছাত্রীরা কি অহিংস প্রতিবাদ জানাতে পারেন না?

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৮
Share:

দাবিপত্র পড়ছেন সীতারাম ইয়েচুরি। শুনছেন ইন্দিরা গাঁধী। ফাইল চিত্র

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে নেহরুর মূর্তি উন্মোচন করতে গিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ। ছাত্ররা তাঁর সামনেই স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘মনমোহন সিংহ মুর্দাবাদ’। কারণ, প্রধানমন্ত্রী তখন পরমাণু চুক্তি নিয়ে এগোতে চাইছেন। বামপন্থী ছাত্রদের তা পছন্দ ছিল না। তাঁরা স্লোগান দিয়েই থামেননি। কালো শাল উড়িয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখিয়েছিলেন।

Advertisement

মনমোহন জানতেন, এমন হবে। তা-ও জেএনইউ ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘তুমি যা বলছ, আমার তাতে অমত থাকতেই পারে। কিন্তু তোমার বলার অধিকার আমি প্রাণ দিয়েও রক্ষা করব। উদারবাদী প্রতিষ্ঠানের ভাবনা এমনটাই হওয়া উচিত।’ তারপরে জেএনইউ-র তৎকালীন উপাচার্য বি বি ভট্টাচার্যের কানে কানে বলেছিলেন, ‘স্যার, ছাত্রছাত্রীদের ক্ষমা করে দেবেন।’

বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ঘিরে প্রতিবাদের ধরন এবং গেরুয়া বাহিনীর পাল্টা তাণ্ডবের পর প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রছাত্রীরা কি অহিংস প্রতিবাদ জানাতে পারেন না? মন্ত্রীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে ছাত্রদের প্রশ্নের মুখে পড়লে তাঁদের আচরণই বা কেমন হওয়া উচিত?

Advertisement

২০০৫ সালের সেই ঘটনা অবশ্য প্রথম নয়। জরুরি অবস্থার সময়ে জেএনইউ ক্যাম্পাসেই ইন্দিরা গাঁধীর বক্তৃতার সময়ে ছাত্রছাত্রীরা এমন স্লোগান তুলেছিল যে রে়ডিয়োয় প্রধানমন্ত্রীর গলা স্লোগানে চাপা পড়ে যায়। জরুরি অবস্থার পরেই ছাত্র সংসদের নেতারা ইন্দিরার বাড়ি গিয়ে তাঁর সামনেই দাবি তোলেন, তাঁকে জেএনইউ-র আচার্য হিসেবে পদত্যাগ করতে হবে। ছাত্র সংসদের সে দিনের নেতা সীতারাম ইয়েচুরির দাবিপত্র পাঠ প্রথম দিকে হাসি মুখেই শুনেছিলেন ইন্দিরা। তারপর মুখ লাল করে ঘরে ঢুকে যান। পরের দিনই পদত্যাগ করেন।

শুধু কংগ্রেসের নেতানেত্রীরা নন। বাজপেয়ী জমানায় পোখরানে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার পরে জেএনইউ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদের মুখে পড়েছিলেন তৎকালীন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মুরলীমনোহর জোশী। আওয়াজ উঠেছিল, পরমাণু বোমা নয়। শিক্ষায় বরাদ্দ চাই। এবিভিপি-র সঙ্গে বামপন্থী ছাত্রদের মারামারিও হয়। কিন্তু জোশীর গায়ে হাত ওঠেনি। জোশীও পুলিশ বা গেরুয়া-বাহিনীকে কোনও নির্দেশ দেননি। ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গার পরেও আরএসএস নেতা অশোক সিঙ্ঘল একই ভাবে জেএনইউ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদের মুখে পড়েন। কিন্তু কালো ব্যাজ, হাতে কালো ব্যান্ড পরা হাত সিঙ্ঘলকে ছোঁয়নি। বাজপেয়ী সরকারও দিল্লি পুলিশকে ক্যাম্পাসে পাঠায়নি। আবার জেএনইউ-র ছাত্র রাজনীতি করে উঠে আসা প্রকাশ কারাটকে এনএসইউআই কালো পতাকা দেখাতে ছাড়েনি।

জেএনইউ-র প্রাক্তন ছাত্র নেতা প্রসেনজিৎ বসুর কথায়, ‘‘এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ক্যাম্পাসে গেলে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ রাখাও ছাত্র নেতৃত্বের দায়িত্ব। অরাজকতা তৈরি হলে, মন্ত্রীর গায়ে হাত তোলা হলে সেটা অনভিপ্রেত। এটা জেএনইউ-য়ে কখনও হয়নি।’’ জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভানেত্রী, বর্তমানে ছাত্র সংগঠন আইসা-র সভানেত্রী সুচেতা দে-র যুক্তি, ‘‘সমস্যা হল, বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতেই রাজি নন। এনআরসি হোক বা অন্য বিষয়, প্রশ্ন উঠলে উত্তর মিলছে না। প্রশ্ন ওঠা মানেই ক্যাম্পাসে, ছাত্রছাত্রীদের উপরে হামলা হচ্ছে। বাবুল সুপ্রিয় প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হাত চালাচ্ছেন।’’ সুচেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পি চিদম্বরম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সে সময় মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’-এর প্রতিবাদে তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়েছিল। চিদম্বরম প্রেক্ষাগৃহে বক্তৃতা করেছেন। বাইরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান চলেছে। কিন্তু চিদম্বরম ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। সুচেতা বলেন, ‘‘আমি তো প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামকেও প্রশ্ন করেছিলাম। তিনিও জবাব এড়িয়ে যাননি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement