দূষণ ঠেকাতে এ বার দোসর হতে পারে নিমতলা-স্বর্গদ্বার

বাঙালি পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে আছে পুরী। সেই সূত্রে কলকাতার সঙ্গে পুরীর নিবিড় সম্পর্ক দীর্ঘ কালের। পুণ্যার্জন আর বিনোদনের সঙ্গে সঙ্গে এ বার কি শ্মশানের সূত্রেও পরস্পরের কাছাকাছি আসতে চলেছে এই দুই শহর? বিষয়টি নিছক প্রশ্নেই আটকে থাকছে না। মঙ্গলবার পুরীর দূষণ মামলার শুনানির পরে অনেকেই মনে করছেন, তেমনটা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০৩:১২
Share:

বাঙালি পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে আছে পুরী। সেই সূত্রে কলকাতার সঙ্গে পুরীর নিবিড় সম্পর্ক দীর্ঘ কালের। পুণ্যার্জন আর বিনোদনের সঙ্গে সঙ্গে এ বার কি শ্মশানের সূত্রেও পরস্পরের কাছাকাছি আসতে চলেছে এই দুই শহর? বিষয়টি নিছক প্রশ্নেই আটকে থাকছে না। মঙ্গলবার পুরীর দূষণ মামলার শুনানির পরে অনেকেই মনে করছেন, তেমনটা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

Advertisement

পুরীর দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলায় পুরীর দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে স্বর্গদ্বারের শ্মশানের কথা বলা হয়েছে। এ দিন সেই মামলার শুনানিতে সুভাষবাবু কলকাতার নিমতলা ঘাটে কাঠের চুল্লির দূষণ রুখতে যে-ব্যবস্থা করা হয়েছে, আদালতে তার বিবরণ দেন। পরে আদালতের বাইরে তিনি বলেন, ‘‘নিমতলায় দূষিত ধোঁয়া জলের মধ্য দিয়ে ফিল্টার করা হয়। তার ফলে দূষণ অনেকটাই ঠেকানো যায়।’’ নিমতলা ঘাট শ্মশান হুগলি নদীর তীরে। তাই জলের অভাব নেই। আর পুরীর স্বর্গদ্বার শ্মশান জল চাইলে তা জোগান দিতে পারে সমুদ্র।

তা হলে কি জলের সৌজন্যে দূষণ রোধের সূত্রেই কাছাকাছি আসতে পারে নিমতলা ও স্বর্গদ্বার? পরিবেশ আদালত প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ দিন মামলার বিরতির সময় ওড়িশার নগরোন্নয়ন সচিব এবং অন্যান্য কর্তা নিমতলা শ্মশানের দূষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে সুভাষবাবুর সঙ্গে যে-ভাবে আলোচনা করছিলেন, তাতে স্বর্গদ্বারে নিমতলার ছায়া পড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

পরিবেশ আদালত অবশ্য ওড়িশা সরকারকে সরাসরি নিমতলা মডেল অনুসরণ করতে বলেনি। তবে ওই আদালতের চেয়ারপার্সন, বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমারের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে স্বর্গদ্বার শ্মশানকে পুরোপুরি দূষণমুক্ত করতেই হবে। সময়সীমার মধ্যে সেই কাজ শেষ না-হলে ওড়িশা সরকার তো বটেই, সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসারেরাও দায়ী থাকবেন বলে আদালত জানিয়ে দিয়েছে।

সমুদ্রসৈকত-সহ পুরী শহরের দূষণ সংক্রান্ত মামলায় এর আগেও কড়া নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ আদালত। সেই অনুযায়ী স্বর্গদ্বার শ্মশানের কাঠের চুল্লিতে (ওখানে বৈদ্যুতিক চুল্লি নেই) চিমনি বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেই পরীক্ষা বিশেষ সফল হয়নি। ওড়িশা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে সম্প্রতি জানানো হয়, ওই চুল্লিতে এ-পর্যন্ত মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি শব দাহ করা হয়েছে।

চিমনি প্রকল্প-সহ দূষণ রোধের কাজ ঠিকমতো না-হওয়ায় আদালত আগেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। পুরীতে ভক্ত ও ভ্রমণার্থী সমাগম চলে সারা বছরই। তার উপরে জগন্নাথের মন্দির ঘিরে উৎসবের মরসুম সমাগত। এই অবস্থায় ডিভিশন বেঞ্চ আগের শুনানিতে নির্দেশ দেয়, দূষণ রোধের কাজ কেন ঠিকমতো এগোচ্ছে না, ওড়িশার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য-সচিব, নগরোন্নয়ন সচিব, পুরী পুরসভার এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার এবং স্বর্গদ্বারের পরিচালন পর্ষদের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে আদালতে হাজির হয়ে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ দিন ওই অফিসারদের সামনেই অবিলম্বে স্বর্গদ্বার শ্মশানের দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দেয় আদালত।

এ দিন ওড়িশা প্রশাসন ও মামলার আবেদনকারী, দুই তরফেই আদালতে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিকল্প শ্মশান গড়ার প্রস্তাব। সুভাষবাবু জানান, সমুদ্রের কাছে আরও শ্মশান না-গড়লে স্বর্গদ্বারের উপরে চাপ কমবে না। বিকল্প শ্মশানের ব্যবস্থা না-হলে দূষণ পুরোপুরি ঠেকানো কঠিন হবে। একই কথা বলেন ওড়িশা প্রশাসনের প্রতিনিধি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement