কোচিতে চলছে টিকাকরণ। ছবি: পিটিআই
কেরলে ফের দাপট দেখাতে শুরু করেছে করোনা ভাইরাস। শেষ চার দিন ধরে সে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ পেরিয়ে গিয়েছে ২০ হাজারের গণ্ডি। শেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ৭৭২। মৃত্যু হয়েছে ১১৬ জনের। তাহলে কি করোনার তৃতীয় ঢেউ সময়ের আগেই আছড়ে পড়ল দেশে? নাকি কেরলের সংক্রমণের পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে। কেরলে এক সময় দেশের প্রথম করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। তারপর পিনারাই সরকারের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়। সাধুবাদ জোটে কেরলের। স্বাস্থ্যমন্ত্রী শৈলজা তৃণমূল স্তর থেকে তৈরি করা স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। সেই পুরো ব্যবস্থাই কি ভেঙে পড়ল?
সংক্রমণের বিচারে কেরলের মমল্লপুরম জেলায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (তিন হাজার ৬৭০)। তারপর কোঝিকোড়ে (দু’হাজার ৪৭০), এর্নাকুলাম (দু’হাজার ৩০৬) থিসুর (দু’হাজার ২৮৭), কোল্লাম (এক হাজার ৪১৫)। যে স্বাস্থ্যকর্মীদের দু’টি টিকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে, তেমন ৮১ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যদিও কেরলের পরিস্থিতি নিয়ে খুব একটা চিন্তার কারণ দেখছেন না সে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ। তিনি জানিয়েছেন, সংক্রমণের সংখ্যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত নয়। প্রথম দু’টি ঢেউয়ের ক্ষেত্রেও এমনই দেখা গিয়েছিল। গত সপ্তাহে এই কথা বলেছেন তিনি, অর্থাৎ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন সেই কেরল থেকে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
অনেকগুলি প্রশ্ন উঠে আসছে বর্তমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে। নানা রকম উত্তরও আছে তার। কেরলে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রথম কারণ হিসাবে কেউ কেউ দাঁড় করাচ্ছেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশ করা সেরো সার্ভের রিপোর্টটিকে। যে রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (হার্ড ইমিউনিটি)-এর দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে কেরল। সমীক্ষার ফলে দেখা যাচ্ছে মধ্যপ্রদেশের ৭৯ শতাংশ মানুষের শরীরে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। সেই তালিকার শেষে থাকা কেরলে এই সংখ্যা আটকে আছে ৪৪ শতাংশে। কেরলের পাশাপাশি, মহারাষ্ট্রেও কমতে চাইছে না সংক্রমণ। সেখানেও উঠছে হার্ড ইমিউনিটির প্রশ্ন। কেরলের উপরের আছে অসম, তারপরেই মহারাষ্ট্র। অর্থাৎ শেষের দিক থেকে তিন নম্বর স্থানে। সেখানে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশের কিছু বেশি মানুষের শরীরে।
মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতিও কিছুটা একই দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। শুক্রবার সেখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ফের সাত হাজারের উপর পৌঁছে গিয়েছে। মাঝে দু’দিন সামান্য সংক্রমণ কমলেও ফের সংক্রমণ বৃদ্ধি কেরলের মতোই মহারাষ্ট্রে আকাশেও কালো মেঘ ডেকে আনছে।