নটবরের গাছবাড়ি। রাঁচীর কাছে বুণ্ডুর গ্রামে।—নিজস্ব চিত্র
গাছে ভাগ্যিস চড়তে পারে না হাতিরা। না হলে নড়বড়ে গাছ-বাড়ি থেকেও সপরিবার উৎখাত হতে হতো নটবর লোহারকে!
রাঁচী থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে বুণ্ডুর প্রত্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত হুমটা। সেখানেই গিতিলডহরের ছোট্ট জনপদ লোহারটোলায় বসবাস বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তির। নিশ্চিন্তে অবশ্য নন। বুনো হাতির উৎপাতে ঘুম উড়েছিল নটবরের। লাগোয়া জঙ্গল থেকে রাতবিরেতে গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব চালাত হাতিরা। ঘর ভেঙে, ফসল খেয়ে ফের চলে যেত অরণ্যে। লোহারটোলায় ঢোকার মুখেই নটবরের কুঁড়েঘর। প্রতি বার তাই তাঁরই ঘর ভাঙত হানাদাররা।
অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন নটবর। পেশায় খেতমজুর। অন্য কোথাও ঘর তৈরির সামর্থ্য ছিল না। অনেক ফন্দি এঁটে শেষে ‘ঘর’ বাঁধলেন গাছের উপর। নটবরের পড়শি মণ্টু ওঁরাও বলেন, ‘‘হাতি হানায় আমার বাড়ি এক বার ভেঙেছে। আর কখনও কিছু হয়নি। কিন্তু হাতিদের সব রাগ যেন নটবরের ঘরের উপরই ছিল। ওরা গ্রামে ঢুকে ওঁর বাড়িটাই ভেঙে দিত!’’
নটবর বলেন, ‘‘গ্রামের পাশের জঙ্গলে হাতি ঢুকলেই রাত জেগে বসে থাকতাম। হাতিরা চার বার আমার ঘর ভেঙেছে। দু’বার কোনওমতে প্রাণে বেঁচেছি। কত দিন আর হাতিদের সঙ্গে লড়াই করা যায়? তাই গাছে ঘর গড়েছি।’’
শালগাছে ঘর গড়েছেন নটবর। ঘর বলতে বাঁশের মাচা। ত্রিপলে ঢাকা। রয়েছে মই। বৌ, দুই ছেলেকে নিয়ে সেখানেই থাকেন নটবর। রান্নাবান্না, থাকা-খাওয়া সব হয় গাছবাড়িতেই। নটবরের বছর দশেকের ছেলে রঞ্জিত বলে, ‘‘এখানে ভাল আছি। ঘুমোতে পারছি আরামে। এ বার হাতি আসুক যত খুশি। ওদের আর ডরাই না।’’
শীতকালে ঝামেলা নেই। বর্ষায় গাছবাড়িতে কী ভাবে থাকবেন, তা নিয়ে চিন্তায় নটবর। তাঁর দুর্দশার খবর পৌঁছেছে গাঁওবুড়ো ফেকলা গঞ্জুর কাছে। তিনি জানান, ওই গ্রামে ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। আগুন জ্বালিয়ে চলছে রাতপাহারা। ফেকলার আশ্বাস, নটবরদের বেশি দিন গাছে থাকতে হবে না। দ্রুত বিকল্প কোনও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।