—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
তীব্র তাপপ্রবাহ ও গরমের জেরে নাকাল দিল্লিবাসী। সম্প্রতি রাজধানীতে তাপমাত্রা পেরিয়েছে ৫২ ডিগ্রির গণ্ডি। এই পরিস্থিতিতে গাছ কাটা নিয়ে সতর্ক করল দিল্লি হাই কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, নতুন প্রজন্ম যদি গাছকাটা বন্ধ না করে, তা অচিরেই রাজধানী মরুভূমিতে পরিণত হবে। অন্য দিকে দেশ জুড়ে যেখানে গাছ লাগানোর কথা উঠে আসছে বারেবারে, সেই সময়েই অবশ্য সামনে এল পরিবেশকে উপেক্ষা করে ধর্মাচরণের পথ সুগম করে তোলার উদ্যোগ। কাঁওয়ার যাত্রার জন্য ৩৩ হাজারেরও বেশি গাছ কেটে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার। তিনটি জেলার উপর দিয়ে ওই রাস্তা তৈরির জন্যই এই পদক্ষেপ। বিষয়টি সামনে আসতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি)।
রাজধানীর প্রসঙ্গে আজ দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি তুষার রাও গেডেলা জানিয়েছেন, সম্প্রতি দিল্লিতে তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৫২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সে দিন আর বেশি দেরি নেই, যখন শহর বদলে মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে। অবিলম্বে গাছকাটার অবস্থান নবীন প্রজন্মকে সরে যাওয়ার বার্তাও দিয়েছেন বিচারপতি।
এর আগে রাজধানীতে অরণ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছিল ‘ইন্টারনাল ডিপার্টমেন্টাল কমিটি’। যার চেয়ারপার্সন ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমি ওয়াজ়িরি। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে তিনি সে ভাবে উল্লেখজনক কাজ করতে পারেননি।
আজ আদালত সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জানিয়েছে, নির্দিষ্ট, অফিস, কর্মী, যাতায়াতের সুবন্দোবস্ত করতে না পারায় বিচারপতি ওয়াজ়িরি কাজ করতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে সমস্ত পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ জন্য ১৫ জুনের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবী আর অরুণাধরী আইয়ারের পেশ করা ওই কমিটির চেয়ারপার্সনের রিপোর্ট তুলে দিল্লি সরকারকে পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছে, ওই কমিটির কাজের জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন তার উপযুক্ত বন্দোবস্ত করতে হবে প্রশাসনকে। যাতে কমিটি তার কাজ করতে পারে।
মুখ্য বনসংরক্ষক জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য নথিপত্র পাঠানো হয়েছে। তিনি সবুজ সঙ্কেত দিলে তা চূড়ান্ত সম্মতির জন্য পাঠানো হবে উপরাজ্যপালের কাছে।
গোটা বিষয়টি দেখভালের জন্য আদালতবান্ধবও নিয়োগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে হেতু নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্দিষ্ট করেছে আদালত, তাই তর মধ্যেই পরিকাঠামো সংক্রাম্ত বিভিন্ন পক্ষের ছাড়পত্রের কথা বলা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৯ জুলাই। তার আগেই সমস্ত বন্দোবস্ত করে কমিটির কাজ শুরু করতে হবে। আদালতবান্ধবের পরামর্শ মতো ইন্টারনাল ডিপার্টমেন্টাল কমিটির পরিবর্তে এর নাম স্পেশ্যাল এমপাওয়ার্ড কমিটি রাখার আবেদনও গ্রহণ করেছে আদালত।
এক দিকে যেখানে পরিবেশের চরম পরিস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে নড়েচড়ে বসেছে দিল্লি হাই কোর্ট সেই সময়েই উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার এনজিটি-কেজানিয়েছে, কাঁওয়ার যাত্রার জন্য ৩৩ হাজারেরও বেশি গাছ কেটে ফেলা হবে। গাজ়িয়াবাদ, মিরাট, মুজফ্ফরনগরের উপরে ১১১ কিলোমিটারের ওই যাত্রাপথে কেটে ফেলা হবে গাছ। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৮ জুলাই। তার মধ্যে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছে এনজিটি। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত দফতর এক লক্ষ ১০ হাজার গাছ কেটে ফেলার অনুমোদন দিয়েছে। গোটা বিষয়টির বিস্তারিত তথ্যের জন্য স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে এনজিটি। তাতে মুখ্য বন সংরক্ষক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক, পূর্ত বিভাগ ও তিন জেলার জেলাশাসককে বিষয়টি জানাতে বলা হয়েছে।
প্রশাসনের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, হরিদ্বারের গঙ্গা থেকে জল সংগ্রহের পরে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, দিল্লি এবং মধ্যপ্রদেশে প্রায় এক কোটি পুণ্যার্থীদের ফেরার বন্দোবস্ত করতেই গাছ কেটে পথ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।