হায়দরাবাদে দফতরের বাইরে সমর্থকদের সঙ্গে উৎসবে শামিল রাজ্য বিজেপির সভাপতি বি সঞ্জয়কুমার। ছবি: পিটিআই।
বিন্ধ্য পর্বতের ওপারেও হিন্দুত্বের হাওয়া ঢুকে পড়ল। হায়দরাবাদ পুরসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দল হিসেবে উঠে এল বিজেপি। ১৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৮ টিতে জয়লাভ করেছে তারা। তাই ৫৫টি ওয়ার্ডে জয়লাভ করে বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এলেও অস্বস্তিতে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)। ২০২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উত্থানে স্বভাবতই খুশির হাওয়া গেরুয়া শিবিরে। পুরসভা নির্বাচনের ফলকে ‘নৈতিক জয়’ হিসেবেই দেখছে তারা।
শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত ১৪৯টি আসনে গণনা সম্পূর্ণ হয়েছে সেখানে। তাতে টিআরএস, বিজেপির পরে তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম)। তারা ৪৪টি ওয়ার্ডে জয়লাভ করেছে। তবে র্যাঙ্কিংয়ে নেমে এলেও, আগের পুরভোটে পাওয়া আসনই ধরে রেখেছে তারা। আগের বারের মতো কংগ্রেসের দখলে রয়েছে ২টি ওয়ার্ডই রয়েছে। আসন সংখ্যা বাডা়তে না পারার দায় নিয়ে তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন উত্তমকুমার রেড্ডি। অন্য দিকে, বিজেপির থেকে এগিয়ে থাকলেও ম্যাজিক সংখ্যা ৭৬-এ পৌঁছতে পারেনি টিআরএস।
এর আগে, ২০১৬-র পুর নির্বাচনে ৯৯টি আসন পেয়েছিল টিআরএস। এমআইএম পেয়েছিল ৪৪টি আসন। বিজেপির আসনসংখ্যা ছিল ৪। কংগ্রেসের দখলে ছিল ২টি আসন। এ বছরের হিসেবে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে, আসলে টিআরএস-এর ভোটই কেটে নিয়েছে বিজেপি। মাত্র ৫১ আসনে প্রার্থী দিয়ে ৪৪টি আসন পেয়ে গিয়েছে এমআইএম। কংগ্রেসে আগের আসনই ধরে রেখেছে এখনও পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: বিয়েবাড়িতে পুলিশ! ভিন ধর্মে বিয়ে রুখতে থানায় নিয়ে যাওয়া হল পাত্র-কন্যা পক্ষকে
তাই ভোটের ফল সামনে আসতেই রাজ্য বিজেপির সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান অমিত শাহ। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপির উন্নয়নের রাজনীতেত ভরসা করার জন্য তেলঙ্গানার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। পুরভোটে বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য জেপি নড্ডাজি এবং বি সঞ্জয়কে অভিনন্দন। অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য বিজেপি কার্যকর্তাদের প্রশংসা করতেই হয়’।
অমিতের বার্তায় উৎসবের আমেজ তেলঙ্গানা বিজেপির অন্দরেও। হায়দরাবাদে দলের দফতরে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায় জি কিষাণ রেড্ডি, রাজ্য বিজেপির সভাপতি বি সঞ্জয়কুমারদের। দফতরের সামনে বাজি ফাটিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন বিজেপি কর্মীরাও। তেলঙ্গানা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘আমাদের নৈতিক জয় হয়েছে।’’
বস্তুত, হিন্দুত্বের হাওয়ায় ভর করেই যে বিজেপির এই উত্থান সম্ভব হয়েছে, সে ব্যাপারে একমত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ ‘তারকা প্রচারক’ হিসেবে এ বার সেখানে সেখানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নামিয়েছিল তারা। ‘ওয়াইসির গড়’ বলে পরিচিত ওল্ড সিটির লাল দরওয়াজায় দাঁড়িয়ে নিজামের শহরের নাম বদলে ‘ভাগ্যনগর’ করার দাবি তুলেছিলেন তিনি। শেষবেলার প্রচারে গিয়ে ভাগ্যলক্ষ্মী মন্দিরে পুজো দিয়ে সেখানে বিজেপির ‘ভাগ্যপ্রসন্ন’ করার রাস্তা আরও প্রশস্ত করে তোলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আসন কমলেও বিজেপির থেকে এগিয়ে থাকায় উচ্ছ্বাস টিআরএস সমর্থকদের। ছবি: পিটিআই।
আরও পড়ুন: দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ধারাবাহিকতা নেউ রাহুলের, দাবি পওয়ারের
শুক্রবার শুরুতে পোস্টাল ব্যালটের গণনা শুরু হয়। তাতে বিজেপি উপরের দিকে থাকায় হম্বিতম্বি শুরু হয়ে যায় গেরুয়া শিবিরের। দলের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষ টুইটারে লেখেন, ‘ওয়েল ডান ভাগ্যনগর। দারুণ ভাবে এগোচ্ছে বিজেপির তেলঙ্গানা টিম। দাগ কাটতে পেরেছো তোমরা’। তেলঙ্গানার বিজেপি সাংসদ ডি অরবিন্দ বলেন, ‘‘তেলঙ্গানায় পরিবর্তন শুরু হয়ে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচন দেখেছেন। দুব্বাকা উপনির্বাচনও দেখেছেন। এ বার গ্রেটার হায়দরাবাদ পুরসভা নির্বাচন। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তবে টিআরএস-এর কাছে বার্তা পৌঁছে গিয়েছে। মানুষ পরিবর্তন চান।’’
রকেটের গতিতে বিজেপির এই উত্থানকে ২০২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবেও দেখছেন দেখা হচ্ছে। এমনকি তাদের এই উত্থানের পিছনে এমআইএম-এর ভূমিকা নিয়েও নতুন করে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। বিজেপির ‘বি টিম’ হিসেবে কাজ করার অভিযোগ আগেই উঠেছে ওয়াইসির দলের বিরুদ্ধে। লাগাতার আক্রমণের মুখে পড়ে হায়দরাবাদে বিজেপিকে তারা কড়া টক্কর দেবে বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই নিজের আখের গুছোতেই বেশি মনোযোগী ছিল তারা। বিজেপি ১৪৯ ওয়ার্ডে প্রার্থী দাঁড় করানোর পর তার জবাবে ১৫০টি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দিয়েছিল টিআরএস। কংগ্রেস প্রার্থী দাঁড় করায় ১৪৬টি ওয়ার্ডে। ১০৬ ওয়ার্ডে প্রার্থী দেয় টিডিপি। সেই তুলনায় মাত্র ৫১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল এমআইএম।