কংগ্রেস সদর দফতরে রাহুল গাঁধীর সাংবাদিক বৈঠক। ছবি: পিটিআই।
পঞ্চাশ দিন শেষ হওয়ার মুখে। এই সময়ের মধ্যে ঠিক কতটা কালো টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হল? দেশকে জানান।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বুধবার এই আহ্বানই রাখলেন কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী। দলের ১৩২তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এ দিন নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সদর দফতরে ভাষণ দিয়েছেন রাহুল। তার পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি পাঁচটি প্রশ্ন রেখেছেন। বিজেপি বা সরকারের তরফ থেকে রাহুল গাঁধীর প্রশ্নগুলির জবাব দেওয়ার কোনও চেষ্টা হয়নি। বরং পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বিজেপির কটাক্ষ, রাহুল গাঁধী আগে জানান, ভিভিআইপি চপার কেলেঙ্কারি থেকে কারা লাভবান হয়েছেন?
৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে দেওয়ার কথা ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই ঘোষণা করেছিলেন। সেই ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীই ফের জানান, ৫০ দিন কষ্ট করতে হবে দেশবাসীকে। ৩০ ডিসেম্বরের পর আর কোনও সঙ্কট থাকবে না। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার ঠিক দু’দিন আগে রাহুল গাঁধী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে পাঁচটি প্রশ্ন রাখলেন।
প্রশ্ন-১: নোট বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী ঠিক কতটা কালো টাকা উদ্ধার করতে পারলেন?
প্রশ্ন-২: নোট বাতিলের জেরে দেশের অর্থনীতি ঠিক কত টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হল?
প্রশ্ন-৩: কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের কারণে দেশে ঠিক কত জনের মৃত্যু হয়েছে? যাঁদের মৃত্যু হল, সরকার কি তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন? যদি না দিয়ে তাকে, তা হলে কেন দেয়নি?
প্রশ্ন-৪: কাদের পরামর্শ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিল করার মতো পদক্ষেপ করেছিলেন? আমাদের সেই নামগুলো জানানো হোক।
প্রশ্ন-৫: ৮ নভেম্বর, ২০১৬-র আগে কারা ব্যাঙ্কে ২৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি জমা দিয়েছিলেন? সেই তালিকাটা সরকার প্রকাশ করুক।
কংগ্রেস সহ সভাপতির তোলা পাঁচটি প্রশ্নই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে নেওয়া ৫০ দিনের সময়সীমা শেষ হলে লাভ-ক্ষতির অঙ্কটা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হতই। রাহুল গাঁধী সেই স্বাভাবিক প্রশ্নগুলোই তুলে দিয়েছেন, বলছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর তরফে এখনও কংগ্রেস সহ সভাপতির প্রশ্নগুলির কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি। রাহুলের সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিজেপি তার প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। কিন্তু তাতে রাহুলের তোলা প্রশ্নগুলির কোনও উত্তর নেই। কংগ্রেস তথা গাঁধী পরিবারকে কটাক্ষ করে বিজেপির বক্তব্য, অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড সংস্থার কাছ থেকে ভিভিআইপি চপার কেনার বিষয়ে ঘুষের আদানপ্রদানের যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে কারা লাভবান হয়েছেন, রাহুল গাঁধী আগে সেই প্রশ্নের জবাব দিন।
আরও পড়ুন: গুরু গড়তেন জোট, শিষ্য নিরুপায়
রাহুল গাঁধী কিন্তু এ দিন অত্যন্ত সুকৌশলে বিজেপি বা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণের ধার কমিয়ে এনে লক্ষ্য নিবদ্ধ করেছেন শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদীর উপর। বিজেপিতে যে আর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র বলতে কিছুই নেই, রাহুল সে ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, নরেন্দ্র মোদী দলের কারও পরামর্শও কানে নেন না, একা সিদ্ধান্ত নেন। রাহুলের চতুর্থ প্রশ্নটিতে সেই ইঙ্গিতই কিছুটা রয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, নরেন্দ্র মোদী জানান, তিনি ঠিক কাদের পরামর্শে এই পদক্ষেপটা করেছিলেন। রাহুল এই প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে রাহুল এক দিকে বোঝাতে চেয়েছেন, কোনও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদই এই রকমের পদক্ষেপ করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীকে দেননি। অন্য দিকে রাহুল বোঝাতে চেয়েছেন, নরেন্দ্র মোদী এ বিষয়ে দলের কারও পরামর্শও নেননি।
অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিজেপির সঙ্গে এ দিন নিজের দলের তুলনা টেনেছেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস আপনাদের কথা শোনে, আপনাদের জন্য কাজ করে। আমরা কী করতে চাই, কংগ্রেসের কাছে শুধু সেটাই বড় কথা নয়।’’ রাহুল আরও বলেন, ‘‘কংগ্রেস হল একটি ধারণা, যা বলে যে শুধুমাত্র আমার দৃষ্টিভঙ্গিটাই মান্যতা পাবে, তা নয়। আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গিটাও আমাকে জানতেই হবে।’’ নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও এ দিন ফের তুলেছেন রাহুল। তিনি বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী মুদ্রারহিতকরণ যজ্ঞ করেছেন দেশের মাত্র ৫০টি পরিবার এবং সেই ১ শতাংশ নাগরিকদের জন্য, যাঁরা সর্বোচ্চ বিত্তশালী।’’ বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, রাহুল গাঁধী ‘অপরিণত’ কথাবার্তা বলছেন।