সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ঠিক সাত বছর আগে যন্তর মন্তরে মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জনসমাবেশ করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জনসভার মুখ্য বক্তা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তখন ছিল ঘোর কালো চুল। তার কয়েক মাসের মধ্যেই সিবিআই গ্রেফতার করে তাঁকে।
তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ এখন সম্পূর্ণ পক্ককেশ। আজ দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা রাতের বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগে বললেন, “ইতিহাস এ ভাবেই ঘুরে আসে। সে বারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদী সরকারের ডেকে আনা বিপদে (সাধারণ মানুষের) পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ বার তিনি নিজে না থাকতে পারলেও মমতার দল বাংলার সাধারণ মানুষের বঞ্চনার প্রতিবাদে দিল্লির রাস্তায় নামতে চলেছে।” তবে অভিষেক নিজে অবশ্য জানিয়েছেন, যন্তর মন্তরে সমাবেশ করার কোনও লিখিত অনুমতি এখনও তাঁদের দেওয়া হয়নি। মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে মাত্র। যন্তর মন্তরে এই মুহূর্তে ১৪৪ ধারা জারি করে রাখা হয়েছে।
তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতা এবং বিধায়কেরা দিল্লি এসে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। অন্য দিকে বিজেপি সূত্রের খবর, রবিবার রাতে বাংলার বিজেপি সাংসদেরাও দিল্লিতে পৌঁছেছেন। তৃণমূলের পাল্টা দিতে সোমবার তাঁরা কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে গিয়ে অভিযোগনামা দিতে পারেন বলে খবর। সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় আজ দিল্লিতে নেমে বলেন, ‘‘গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখেছি, কী ভাবে তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করেছেন। টাকা উদ্ধার করতে হলে নেতাদের বাড়ি থেকে তা করা দরকার। দিল্লিতে নাটক করে লাভ নেই।’’
তৃণমূলের তরফে এখনও পর্যন্ত যা পরিকল্পনা, সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাতে অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূল সাংসদেরা রাজঘাটে যাবেন। সকাল ৮টায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী, একে একে মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তার পর যাবেন সনিয়া গান্ধী। এখন থেকেই ১৪৪ ধারা জারি হয়ে গিয়েছে ওই অঞ্চলে। ফলে তৃণমূলের সব সাংসদের একসঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে দফায় দফায় যাওয়া হবে, তা নিয়ে কথা চলছে দলের মধ্যে। কাল বিকেল সাড়ে ৪টেয় ১৫ জন নেতা-সাংসদকে নিয়ে আবার সুদীপের বাড়িতে বৈঠকে বসবেন অভিষেক। মঙ্গলবারের কর্মসূচি সেখানে ঠিক হবে। করবেন সাংবাদিক সম্মেলনও।
তৃণমূলের কর্মীদের নিয়ে কলকাতা থেকে আসা বাসগুলি দিল্লিতে ঢুকবে সোমবার ভোরে। এখন থেকেই দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমায়, নয়ডা এবং এবং গাজিপুর সীমায় ব্যারিকেড বসিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, গান্ধী জয়ন্তীকে ঘিরে রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা। বাসগুলিকে একান্তই ঢুকতে দেওয়া না হলে কর্মীরা দিল্লি সীমানায় নেমে হেঁটে শহরে আসবেন বলে স্থির হয়েছে। বঙ্গভবন, মহারাষ্ট্র ভবন, পাহাড়গঞ্জ, করোলবাগের হোটেল, ধর্মশালা এবং সেই সঙ্গে কিছু নেতা-সাংসদের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাঁদের। দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাসে আসা সব কর্মী চলে এলে আগামী দু’দিন নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়ক, জেলা সভাপতি এবং সাধারণ কর্মী মিলিয়ে সাড়ে চার হাজারের বেশি তৃণমূল-কর্মী উপস্থিত থাকবেন রাজধানীতে। সোমবার একশো দিনের কাজের টাকা থেকে বঞ্চিতদের নতুন সংসদ ভবন দেখাতে নিয়ে যাবেন তৃণমূলের ছাত্র ও যুব নেতারা। দলের পক্ষ থেকে বলা হবে, একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখে কেন্দ্র নতুন সংসদ ভবন তৈরি করেছে।
এ দিকে লোধি এস্টেটে তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ সৌগত রায়ের বাংলোয় আজ দুপুর থেকেই চলছিল রাত্রিকালীন বৈঠকের প্রস্তুতি। বাইরের প্রশস্ত লনে ম্যারাপ বেঁধে এবং সবুজ কার্পেট বিছিয়ে ছোট ছোট টেবিল। প্রতিটি টেবিলে মাইক। সঙ্গে মাটন কোর্মা, গন্ধরাজ চিকেন-সহ নৈশাহারের আয়োজন। নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন যোগ দেন বৈঠকে।
দলীয় সূত্রে খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে দলের নেতাদের বলেন, ‘‘নব জোয়ার কর্মসূচির সময় জেলায় জেলায় গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি, কেন্দ্রীয় বকেয়া আটকে রাখার জন্য মানুষের জীবন কী ভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। তখনই স্থির করি, এই আন্দোলনকে দিল্লি নিয়ে আসব। কিন্তু প্রতিবাদ আন্দোলন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রেল, বিমানও বাতিল করা হয়েছে।’’
এর পাশাপাশি বিজেপি সূত্রের খবর, সোমবার দিল্লিতে বিজেপির বাংলা শাখাও সক্রিয় হবে। বঙ্গ বিজেপির সাংসদরা কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজে বেনিয়ম ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগপত্র জমা দেবেন। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সৌগত বলেন, “বাংলা বিজেপি সাংসদরা তাঁদের নিজ নিজ বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত কেন্দ্রই জেতাতে পারেন না। এখানে এসে এই নিয়ে পাল্টা কর্মসূচি করার চিন্তা মূর্খামি।’’