West Bengal Day

‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে প্রশ্ন ইতিহাসবিদদের

রাজভবন বা রাজ্যপালের তরফে এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ দিবসের তাৎপর্য নিয়ে মুখ খোলা হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজভবনগুলিতে সব রাজ্যেরই প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩ ০৯:৩৬
Share:

রাজভবন। —ফাইল চিত্র।

বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতিতে এমন দিনের গুরুত্ব বড় একটা শোনা যায়নি আগে। দেশভাগের ইতিহাসে তারিখটির কথা জানা থাকলেও তাতে উৎসবের তাৎপর্য কার্যত খুঁজে পায়নি পশ্চিমবঙ্গবাসী। কাল, মঙ্গলবার সেই ধারাই কিছুটা বদলাতে চলেছে। রাজভবনের তরফে ২০ জুন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করার কথা ঘোষণা করা হলেও এর উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ইতিহাসবিদদের একাংশ।

Advertisement

১৯৪৭ সালের ২০ জুন অখণ্ড বাংলার প্রাদেশিক আইনসভার ভোটাভুটিতেই দুই বাংলা ভাগের বিষয়টি নির্ধারিত হয়। তবে ইতিহাসবিদ তথা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসু বলছেন, “এই ভোটাভুটির আগেই ব্রিটিশ সরকারের দেশভাগের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। ৩ জুন ১৯৪৭-এই মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা সম্প্রচার হয়েছিল। দিল্লিতে ক্ষমতা নিতে অগ্রণী নেতারা পঞ্জাবের মতো বাংলা ভাগের পক্ষেও সায় দিয়েছিলেন। বিষয়টা কংগ্রেসের রাজনৈতিক অবস্থানের জেরেও এক রকম চূড়ান্ত হয়ে যায়। বরং গান্ধী প্রাথমিক ভাবে বাংলা ভাগের বিরুদ্ধেই ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ইংরেজের প্রস্তাবে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগে সিলমোহর পড়াটা লজ্জার বিষয়। তা মানুষ ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ। এর উদযাপনে গৌরব নেই।”

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক কিংশুক চট্টোপাধ্যায়ের মতেও, “আমাদের ইতিহাস শিক্ষায় সব সময়ে জেনেছি দেশভাগ একটা বিপর্যয়। একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্রে বিশ্বাসী বা দ্বিজাতি তত্ত্বে বিশ্বাসীরাই বাংলা ভাগে আনন্দ পাবে। দেশভাগে যাঁরা কিছুই হারাননি, মনে হয় শুধু তাঁরাই রাজনৈতিক মতলবে দিনটা উদযাপন করবেন।” অনেকে আবার মনে করেন, দেশভাগ হলেও দুই বাংলার সাংস্কৃতিক ঐক্যর সুরটি আজও বারে বারে প্রকট হয়। দেশভাগের উদ্‌যাপনে সেই ভাবটিকেও ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে।

Advertisement

রাজভবন বা রাজ্যপালের তরফে এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ দিবসের তাৎপর্য নিয়ে মুখ খোলা হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজভবনগুলিতে সব রাজ্যেরই প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আপাত ভাবে দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র উদযাপনের অঙ্গ বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে সমাজমাধ্যমে স্পষ্টতই এক ধরনের বিভাজনপন্থী বা বিভেদমূলক রাজনৈতিক প্রচার চলছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকেরা। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানে সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুকে বাঁচাতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তথা হিন্দু মহাসভার লড়াইয়েই অখণ্ড বাংলার আইনসভার পশ্চিম অংশের প্রতিনিধিরা বাংলা ভাগের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। শ্যামাপ্রসাদকে বাংলা ভাগের নায়ক বা বাঙালি হিন্দুর রক্ষাকর্তা হিসেবেই তুলে ধরা হচ্ছে। সুগত কিন্তু বলছেন, “হিন্দু মহাসভার ক্ষমতা তখন বেশি ছিল না। একা শ্যামাপ্রসাদের পক্ষে নির্ণায়ক ভূমিকা নেওয়াও সম্ভব ছিল না।” তাঁর মতে, “একই সময়ে শরৎচন্দ্র বসু, আবুল হাশেমরা অখণ্ড বাংলার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তা পাকিস্তানে মিশে যেত না। অখণ্ড বাংলা পরে যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারতের সঙ্গে তার সমীকরণ ঠিক করত। ইতিহাসে দেখা গিয়েছে, পূর্ববঙ্গের অংশটুকু পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে পারেনি। অখণ্ড বাংলার ক্ষেত্রেও তা ঘটত না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement