হেমার ভাইয়ের সন্দেহ চিন্তনকেই

চিত্রশিল্পী হেমা উপাধ্যায় এবং তাঁর আইনজীবী হরিশ ভামভানির খুনে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে মুখ্য অভিযুক্ত বিদ্যাধর রাজভরকে। কিন্তু হেমার সম্পর্কিত ভাই বলছেন অন্য কথা। তাঁর সন্দেহ, হেমার বিচ্ছিন্ন স্বামী চিন্তন উপাধ্যায়েরই ভূমিকা রয়েছে এই জোড়া খুনে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

বিচ্ছেদের আগে চিন্তন ও হেমা।-ফাইল চিত্র।

চিত্রশিল্পী হেমা উপাধ্যায় এবং তাঁর আইনজীবী হরিশ ভামভানির খুনে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে মুখ্য অভিযুক্ত বিদ্যাধর রাজভরকে। কিন্তু হেমার সম্পর্কিত ভাই বলছেন অন্য কথা। তাঁর সন্দেহ, হেমার বিচ্ছিন্ন স্বামী চিন্তন উপাধ্যায়েরই ভূমিকা রয়েছে এই জোড়া খুনে।

Advertisement

দীপক প্রসাদ নামে ওই ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, তাঁর এবং পরিবারের অনেকের ধারণা, খুনের ষড়যন্ত্রের পিছনে চিন্তনেরই হাত রয়েছে। হেমার আত্মীয়রা এই মামলায় সিবিআইয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। ৫ লক্ষ টাকার জন্য বিদ্যাধর আর তার দলবল হেমা-হরিশকে খুন করে থাকতে পারে বলে পুলিশ যে তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করছে, তাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন দীপক। তাঁর কথা মতো, হেমা এর আগেও বিদ্যাধরকে নানা সময় আর্থিক সাহায্য করেছেন। আর সেই টাকা তিনি ফেরতও চাননি।

কিন্তু চিন্তনকে সন্দেহের পিছনে কী কারণ? দীপক বলেছেন, ‘‘বেশ কিছু বছর আগে হেমাকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন চিন্তন। বলেছিলেন, হেমাকে মারার জন্য যা করতে হয় তিনি করবেন!’’

Advertisement

হেমাকে যে দিন খুন করা হয়, তার আগের দিন অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার চিন্তন তাঁর ফেসবুক ওয়াল-এ ‘ডি ডে’ ছবির ‘অলবিদা’ গানটির লিঙ্ক পোস্ট করেন। পরিচিতদের প্রশ্ন, এটা কি ইঙ্গিতবাহী? স্ত্রীকে বিদায় জানাতে ওই গানটি পোস্ট করেন চিন্তন, না স্রেফ খারাপ সময়ের ইঙ্গিত দিতে?

দীপক এমন আরও বেশ কিছু কথা জানিয়েছেন যা থেকে উঠে এসেছে, হেমার উপরে শারীরিক নিগ্রহ করতেও পিছপা হননি তিনি। ওয়াডালায় একটি প্রদর্শনীতে যাওয়ার পথে হেমার সঙ্গে তুমুল ঝগড়া হয় চিন্তনের। যার জেরে হেমাকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলেছিলেন চিন্তন। সে দিন খুব বিধ্বস্ত অবস্থায় চেম্বুরে দীপকের বাড়িতে হাজির হন হেমা। তাঁকে বুঝিয়ে শান্ত করে ফেরত পাঠান দীপক। তবে সেই রাতেই ফের ঝামেলা। দীপক বলছেন, হেমাকে লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দিয়েছিলেন চিন্তন। চিন্তন যে অনেক দিন ধরেই বেসুর গাইছিলেন তার প্রমাণ দিতে দীপক জানিয়েছেন, ‘‘ওরা আনুষ্ঠানিক ভাবে বিচ্ছেদের মামলা করে ২০১০ সালে। তার আগে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ওদের আলোচনায় বসানো হয়েছিল। যদি কোনও সমাধানসূত্র মেলে এই আশায়। কিন্তু চিন্তন সেই সময়েই বলতে শুরু করে, যা-ই হোক না কেন, হেমাকে ও খোরপোষ দিতে পারবে না।’’ চিন্তন যদিও দাবি করেছেন, তাঁদের মধ্যে সমস্যা তৈরি হলেও তিনি হেমাকেই ভালবাসতেন। বিচ্ছেদের মামলা চললেও আর্থিক বিষয়ে বোঝাবুঝি নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি ছিল না।

চিন্তন-হেমার বিয়ে হয় ১৯৯৮ সালে। তার পরে ওঁরা চলে আসেন মুম্বই। শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জন্য দু’জনেই তখন লড়াই করছেন। দহিসর এবং বোরিভলির অ্যাপার্টমেন্টে প্রথম দিকে থাকতেন তাঁরা। ২০০৫-এ জুহুতে ফ্ল্যাট কেনেন দু’জনে। তত দিনে ওরা আর্থিক ভাবে অনেকটাই সচ্ছল। সমস্যার শুরুও তখন থেকে।

হেমার ভাই দীপক জানাচ্ছেন, জুহুর ওই ফ্ল্যাট কেনার এক বছরের মধ্যে ফাটল ধরে ওদের সম্পর্কে। ‘‘চিন্তন হতাশ হয়ে পড়ছিল। কারণ ও আন্তর্জাতিক স্তরে হেমার মতো খ্যাতি অর্জন করতে পারেনি। হেমার সাফল্য মানতে পারেনি ও। প্রায়ই দু’জনের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতো।’’ দু’জনের মধ্যে আরও একটি বিষয় নিয়ে টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। দীপক বলেছেন, ‘‘মা হতে ভয় পাচ্ছিল হেমা। ওর থ্যালাসেমিয়া ছিল। চিন্তনেরও এই রোগ রয়েছে কি না, ও জানত না। তাই পরীক্ষা করাতে বলেছিল। কিন্তু চিন্তন সেটাকে অপমান হিসেবে নিয়েছিল।’’

হেমার আত্মীয় চিন্তনের দিকে আঙুল তোলায় পুলিশ কী মনে করছে? জোড়া খুনের মামলায় তদন্তকারী এক অফিসার বলেছেন, ‘‘অস্বাভাবিক অবস্থায় কোনও মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পরেই পুলিশ দ্রুত মৃতের আত্মীয়দের বয়ান রেকর্ড করে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হেমার আত্মীয়দের কেউ কেউ বলেছেন, চিন্তনই খুনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। সেই বিবৃতির ভিত্তিতেই টানা চার দিন জেরা করা হয়েছে চিন্তনকে।’’ ওই অফিসারের বক্তব্য, ‘‘এই মামলায় চিন্তন এখনও আমাদের সন্দেহভাজন-তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু যথাযথ প্রমাণ ছাড়া শুধু সন্দেহের বশে তো কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। হেমা-হরিশকে খুনের পিছনে চিন্তনের উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।’’ বিদ্যাধরকে গ্রেফতারের পরেই সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন।

কিন্তু ওই অফিসারের অভিযোগ, হেমার পরিবার তদন্তকারীদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন। পুলিশকে দেওয়া বিবৃতি তাঁরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করায় তদন্তে অসুবিধা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement