সাফাইকর্মী থেকে আইএএস কেরলের আব্দুল নাসার। ছবি: সংগৃহীত।
তাঁর তখন পাঁচ বছর বয়স। বাবাকে হারান আব্দুল। ফলে তাঁদের পুরো পরিবারই অথৈ জলের মধ্যে পড়ে। সাংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি বলতে ছিলেন আব্দুলের বাবা। কিন্তু পরিবারের মাথারই মৃত্যু হওয়ায় আব্দুলদের সংসারে হাহাকার দেখা দেয়।
আব্দুলেরা চার ভাইবোন। সংসারের বোঝা টানতে যখন আব্দুলের মায়ের নাভিশ্বাস উঠছিল, সন্তানদের মানুষ করতে অনাথাশ্রমে পাঠিয়ে দেন। অতন্ত সেখানে খেয়েপড়ে বাঁচবে এই আশায়। তার পর থেকে অনাথাশ্রমই হয়ে উঠেছিল আব্দুলদের স্থায়ী ঠিকানা। ১৩ বছরে এক অনাথাশ্রম থেকে অন্য অনাথাশ্রমে পাঠানো হয়েছে আব্দুলকে। সেখান থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।
পুরো নাম বি আব্দুল নাসার। কেরলের থালাসেরির বাসিন্দা। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মা পরিচারিকার কাজ শুরু করেন। সংসারে টাকা জোগাতে দায়িত্ব এসে পড়ে ছোট আব্দুলের উপরও। তাঁর যখন দশ বছর বয়স, হোটেলে কাজ নেন আব্দুল। সেখানে সাফাইকর্মীর কাজ করেন তিনি। কিন্তু আব্দুলের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, তাই অন্য সন্তানদের মতোই আব্দুলকে অনাথাশ্রমে পাঠিয়ে দেন তাঁর মা। সেখান থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন আব্দুল।
স্কুলজীবন উত্তীর্ণ হওয়ার পর থালাসেরি সরকারি কলেজে ভর্তি হন আব্দুল। কিন্তু পড়াশোনার খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য ছিল না তাঁর। তাই কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি কখনও সংবাদপত্র বিক্রির কাজ করেছেন, কখনও ফোনের দোকানে, আবার টিউশন পড়িয়েও রোজগার করেছেন। আব্দুল এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অনাথাশ্রমে থাকার সময় বেশ কয়েক বার তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পড়াশোনার টানে প্রতি বারই ফিরে এসেছিলেন।
স্নাতক পাশ করে প্রথম সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেন আব্দুল। কিন্তু সাফল্যে আসেনি। তবে চেষ্টা ছাড়েননি তিনি। স্নাতকোত্তরও পাশ করেন আব্দুল। আর তার পরই তাঁর জীবনের প্রথম সরকারি চাকরি পান রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে। তাঁর অধ্যাবসায় আর নিষ্ঠার জোরে সেখান থেকে ধাপে ধাপে অতিরিক্ত জেলাশাসকের পদে উন্নীত হন। তার পর কোলামের জেলাশাসক হিসাবেও কাজ করেন তিনি।