কেউ নিছক মজা পেতে, কেউ টাকার লোভে, কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে একের পর এক খুন করে গিয়েছে। বেশির ভাগই ধরা পড়েছে। কিন্তু তার পরও কৃতকর্মের জন্য সামান্যতম অনুশোচনা দেখা যায়নি তাদের মধ্যে। এরা ভারতের পাঁচ সিরিয়াল কিলার। তাদের কাহিনি শুনে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে আজও।
কেডি কেম্পাম্মা। লোকে তাকে চিনতেন 'সায়ানাইড মল্লিকা' বলে। সে মৃত্যুর সাজাপ্রাপ্ত ভারতের প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার। যদিও পরবর্তী কালে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। তার খুন-পর্ব শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। কী ভাবে খুনের ছক সাজাত সে?
বেঙ্গালুরু শহরের মন্দিরগুলিই ছিল তার লক্ষ্য। সন্ন্যাসিনীর বেশে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরত। বুঝে নিত, আগত মহিলা ভক্তদের মধ্যে কে কে পারিবারিক সমস্যার কারণে অবসাদে রয়েছেন। তার পর তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে বিশ্বাস অর্জন করত এবং অন্য কোনও ফাঁকা মন্দিরে সমস্যা সমাধানের জন্য যজ্ঞ করার উদ্দেশ্যে তাঁদের ডেকে পাঠাত। শর্ত থাকত একটাই, তাঁদের আলমারিতে থাকা সবচেয়ে দামি শাড়ি এবং সমস্ত গয়না পরে আসতে হবে। তার পর সুযোগ বুঝে সায়ানাইড মেশানো জল খাইয়ে খুন করে গয়না নিয়ে চম্পট দিত সে।
সায়ানাইড মল্লিকা কর্নাটকের কাগ্গালিপুরার বাসিন্দা ছিল। এক জন দর্জির সঙ্গে সংসারও পেতেছিল। কিন্তু এই ভয়ানক কারবার করে যাচ্ছিল স্বামীর অজান্তেই। সেটা জানতে পারার পর ১৯৯৮ সালে স্বামী তাকে ঘর থেকে বার করে দেন। তার পর থেকেই মূলত তার টাকা-পয়সার লোভ এতটাই বেড়ে যায় যে সে খুনি হয়ে ওঠে।
নিঠারি খুনিরা: নৃশংস সিরিয়াল কিলার। শুধু খুনই করত না তারা, ধর্ষণ করত এবং মৃতদেহ খুবলে মাংসও খেত। সেই ঘটনা সামনে আসার পর গা শিউরে উঠেছিল দেশবাসীর। নয়ডার একটি গ্রাম নিঠারি। এই গ্রামেই থাকত ব্যবসায়ী মণীন্দ্র সিংহ পান্ধের এবং তার পরিচালক সুরেন্দ্র কোহলি। বাচ্চাদের ফুসলিয়ে বাড়িতে আনা থেকে তাদের খুন করা এবং তার পর দেহ লোপাট-- পুরো ছকটাই কষত দু’জনে মিলে।
২০০৫ থেকে ’০৬ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের নয়ডার কাছে নিঠারি এলাকায় ২০টি শিশুর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। বেশ কিছু দিন পরে ওই এলাকার আশপাশ থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশুদের কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ।
২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর নয়ডার নিঠারিতে ব্যবসায়ী পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৯টি কঙ্কাল এবং কিছু দেহাবশেষ। জানা যায়, বেশ কিছু শিশু-কিশোর-কিশোরীর উপর যৌন অত্যাচার চালিয়ে খুন করে তাদের দেহের অংশ প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে খেয়ে ফেলেছিল তারা। শেষ পর্যন্ত দু’জনেরই ফাঁসির সাজা শোনায় আদালত।
দ্য স্টোনম্যান: পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করত অজ্ঞাত পরিচয় এই আততায়ী। তার প্রতিটি শিকার মাথা থেঁতলানো অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল। ১৯৮৯ সাল নাগাদ তার কর্মকাণ্ডে ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছিল কলকাতা। রাতের অন্ধকারে ঘুমের সুযোগে ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা অন্তত ১৩ জনকে মাথা থেঁতলে খুন করেছিল সে।
স্টোনম্যানের রহস্যের কোনও সমাধান আজও হয়নি। কোনও এক জন এতগুলি খুন করেছিল, নাকি দল বেঁধে কলকাতার বুকে এই হত্যালীলা চালানো হয়েছিল, তা অজানাই রয়ে গিয়েছে।
রামন রাঘব: নিজে ছিল গৃহহীন । আর আক্রমণের নিশানাও ছিল আশ্রয়হীন ফুটপাতবাসী অথবা বস্তির বাসিন্দারা। ষাটের দশকে মুম্বই শহরতলির আতঙ্কের আর এক নাম ছিল রামন রাঘব। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ অবধি সে অন্তত ৪২ জনকে খুন করেছিল। রামনের জন্ম ১৯২৯ সালে, পুণে শহরে। তার শৈশব নিয়ে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। কোন পরিস্থিতি তাকে হত্যাকারী করে তুলেছিল, সে অধ্যায় এখনও অন্ধকারেই।
সে সময়ে সেন্ট্রাল রেলওয়ে পরিচিত ছিল গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে নামে। এর রেললাইন বরাবর ঘিঞ্জি বস্তি এলাকা ছিল রামনের অপরাধের বিচরণক্ষেত্র। পুলিশের কাছে স্বীকার করেছিল, ১৯৬৬ সালে সে খুন করেছিল ৪১ জনকে। কিন্তু তার শিকারের মোট সংখ্যা কত, সেটা সে বলতে পারেনি। নিজেই নাকি ভুলে গিয়েছিল!
সিন্ধি ডালওয়ানি, আন্না, থাম্বি, তালওয়ানি, ভেলুস্বামী ইত্যাদি নামেও পরিচিত ছিল সে। রামন রাঘবের অপরাধ শুরু হয়েছিল তার পরিবারেই। ধর্ষণের পরে একাধিক বার ছুরির আঘাতে নিজের বোনকে খুন করেছিল সে। গ্রেফতারের পর প্রথমে তার মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। পরে মানসিক রোগের শিকার হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। কিডনি নিষ্ক্রিয় হয়ে ১৯৯৫ সালে তার মৃত্যু হয়।
ঠগ বেহরাম: সারা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলারদের সঙ্গে এক সারিতে নাম নেওয়া হয় এই ঠগী দস্যুর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে মধ্য ভারতের ত্রাস হয়ে উঠেছিল সে। ১৭৯০ সাল থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে অন্তত ৯৩১ জনকে গলায় রুমাল পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল সে।
১৮৪০ সালে ফাঁসি হয় তার। মূলত ডাকাতির উদ্দেশেই নিরীহ মানুষদের খুন করত সে। খুনের পর সর্বস্ব লুঠ করে চম্পট দিত।