রবিবার হাথরসে পঙ্কজ ধবরৈয়া।
হাথরসে দলিত তরুণীর গণধর্ষণ ও মৃত্যুকে ‘পরিবারের সম্মান রক্ষায় খুন’ বা ‘অনার কিলিং’ বলে প্রচারের চেষ্টা চলছিলই। এ বার তার পিছনে আরএসএসের হাত রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল।
রবিবার এবং তার আগেও হাথরসের বুল গড়হী গ্রামে ঠাকুর তথা উচ্চবর্ণের লোকেরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, অভিযুক্তেরা নিরপরাধ। নির্যাতিতার পরিবারই মিথ্যে বলছে। উচ্চবর্ণের সংগঠন রাষ্ট্রীয় সবর্ণ পরিষদের ওই বিক্ষোভে বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক রাজবীর সিংহ পালোয়ানও হাজির ছিলেন।
এখন জানা গিয়েছে, পরিষদের জাতীয় অধ্যক্ষ পণ্ডিত পঙ্কজ ধবরৈয়া টানা ১৪ বছর আরএসএস-এর প্রচারক হিসেবে কাজ করেছেন। পঙ্কজ ২০০২ থেকে ২০১৬, টানা ১৪ বছর আরএসএস-এর প্রচারক হিসেবে কাজ করতেন।
আরও পড়ুন: পঞ্জাবে রাহুলের সভাতেই কোন্দল
তাঁর সঙ্গে আরএসএস-এর যোগাযোগের কথা স্বীকার করে নিয়ে পঙ্কজ আনন্দবাজারকে ফোনে বলেন, ‘‘আমি এক সময় আরএসএস-এর হয়ে কাজ করতাম। তবে অনেক দিন আগে। এখন সবর্ণ পরিষদের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করি। আমাদের কাজ হল সংরক্ষণ এবং তফসিলি জাতি-উপজাতি নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের বিরুদ্ধে প্রচার।’’
আরও পড়ুন: কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ‘কালা কানুন’ বাতিল করবে, কৃষি বিল নিয়ে আশ্বাস রাহুলের
প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা আজ অভিযোগ করেছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কি নির্যাতিতার পরিবারের কথা শুনবেন? ন্যায়বিচারের প্রথম ধাপ হল নির্যাতিতের কথা শোনা। বাস্তব হল, বিজেপি আজও ওই তরুণীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’’ পঙ্কজের যুক্তি, ‘‘ওই পরিবার মিথ্যে কথা বলছে। মূলত রাজনৈতিক দলের চাপে। তাদের টাকার লোভও দেখানো হয়েছে। যে চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাদের মধ্যে তিন জন ঘটনাস্থলেই ছিল না। অন্য জনের সঙ্গে ওই তরুণীর বন্ধুত্ব ছিল। মেয়েটির বাবা তাকে মারধর করে। এর পরে মেয়েটির মা ও ভাই অভিযোগ তুলেছে। মেয়েটির ভাই ও ছেলেটির নাম এক। মেয়েটি মৃত্যুর আগে ওই নামের ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছিল। এখন সেই ব্যক্তিটি কে, তার জন্যই আমরা তদন্ত চাই। সেই কারণেই আমরা সিট, নার্কো পরীক্ষার দাবি করেছিলাম। রাজ্য সরকার আমাদের সহযোগিতা করেছে।’’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে দায়িত্ব পেয়ে আমি গর্বিত: দোরাইস্বামী
এখানেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, এই সবর্ণ সমাজ যা চাইছে, কার্যত সেটাই যোগী সরকার মেনে নিয়েছে। সবর্ণ সমাজের দাবি মেনেই পরিবারের নার্কো পরীক্ষার সুপারিশ করেছে সিট। পঙ্কজের নেতৃত্বেই রবিবার হাথরসে সাত-আটশো লোক জড়ো হয়েছিল। তিনি গ্রামের বাইরে থেকে ভীম আর্মির নেতা চন্দ্রশেখর আজাদকে হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ তাঁর চারপাশেই নিরাপত্তার বলয় তৈরি করে রেখেছিল। আজাদদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা হলেও সবর্ণ পরিষদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।
জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব বলেন, ‘‘নির্যাতিতার পরিবার কর্মরত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারবিভাগীয় কমিশনের তদন্তের দাবি জানিয়েছে। কারণ, সিটের পুলিশ অফিসারেরা ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিবিআই এখনও মাঠে নামেনি।’’
যোগী সরকারের পুলিশ আজ হাথরসে গোষ্ঠী সংঘর্ষ বাধানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছিল বলে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। ‘প্রাক্তন আরএসএস প্রচারক’ পঙ্কজ আজ নিজেই হাথরসে গোষ্ঠী সংঘর্ষের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আনন্দবাজারকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘বাইরে থেকে রাজনীতিকরা এসে উস্কানি দিচ্ছেন। গোটা জেলার মানুষ আমার কথা শোনেন। আমি যদি বলে দিই হিংসা হয়ে যাক, তা হলে রক্ত বইবে। সকলেরই ক্ষোভ রয়েছে।’’
পঙ্কজের দাবি, সবর্ণ পরিষদ দলিতদের বিরুদ্ধে নয়। পরিষদে তাঁর মতো ব্রাহ্মণ নেতার পাশাপাশি ঠাকুর তো বটেই, তফসিলি জাতি-উপজাতির মানুষও রয়েছে। কিন্তু তাঁরা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে। তফসিলি জাতি-উপজাতি নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের মতো উচ্চবর্ণ বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে। সিপিআই (এমএল) নেত্রী কবিতা কৃষ্ণনের মন্তব্য, ‘‘উত্তরপ্রদেশের মনুবাদী মুখ্যমন্ত্রী সংরক্ষণের বিরুদ্ধে, মহিলাদের দাসত্বের পক্ষে। যোগীর নিজের ওয়েবসাইটেই এ বিষয়ে তাঁর লেখা নিবন্ধ ছিল। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তা সরানো হয়েছে।’’