আহত কমল কিশোর। পিটিআই
পাশ থেকে এক পুলিশকর্মী নীল রঙের কুর্তি টেনে ধরেছেন। সামনে দুই পুলিশকর্মী লাঠি দিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। হাত দিয়ে লাঠি সরিয়ে কংক্রিটের ব্যারিকেডের উপরে উঠে পড়লেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের মহিলা কনস্টেবলরা হাত ধরাধরি করে মানব-প্রাচীর তৈরি করে ফেলেছিলেন। তাতেও ঠেকানো গেল না। প্রিয়ঙ্কা চোখের নিমেষে কমল কিশোর ‘কমান্ডো’-র কাছে পৌঁছে গেলেন। পুলিশের লাঠির আঘাতে কমল কিশোর তখন পায়ে আঘাত পেয়ে বসে পড়েছেন। তাঁকে চোট পেতে দেখে রাহুল গাঁধীও এগিয়ে এসে জানতে চাইলেন, কী হয়েছে। রাহুলের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে নিজেদের গাড়িতে তুলে নিলেন প্রিয়ঙ্কা।
কংগ্রেসের অভিযোগ, এক পুরুষ পুলিশকর্মী প্রিয়ঙ্কার পোশাক টেনে ধরে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেই ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব বলেন, ‘‘অধার্মিক, আততায়ী, অজয় বিষ্ট (যোগী আদিত্যনাথের পূর্বাশ্রমের নাম) সরকারের হাতের পুতুল পুরুষ পুলিশের কী ভাবে এক মহিলা নেত্রীর পোশাকে হাত দেওয়ার সাহস হল? এর জবাব মিলবে।’’ শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউতও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘যোগীজির রাজত্বে কি মহিলা পুলিশ নেই?’’ কমল কিশোর ছাড়াও দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অনিল চৌধুরী-সহ আরও কয়েক জন পুলিশের লাঠিতে এ দিন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ।
শনিবারের দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় ডিএনডি ফ্লাইওভার প্রিয়ঙ্কাকে অন্য চেহারায় দেখল আজ। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, প্রিয়ঙ্কার এই ‘রণং দেহি’ মূর্তি এ দিন নতুন করে তাঁর ‘দাদি’ ইন্দিরা গাঁধীর স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। শুধু পুলিশের সঙ্গে লড়াই নয়। যে ভাবে কংগ্রেসের এক জন নেতাকে পুলিশের লাঠিতে আহত দেখে নিজের কথা না-ভেবে পুলিশের প্রাচীর ঠেলে এগিয়ে গিয়েছেন, তাতেও কংগ্রেস নেতারা বাহবা দিচ্ছেন। কমল কিশোরের নিজের বক্তব্য, ‘‘দলের কর্মকর্তাদের আগলানো প্রকৃত নেতার ধর্ম। এটাই কংগ্রেসের বরাবরের পরম্পরা।’’
আরও পড়ুন: হাথরসে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা
বাহরাইচের প্রাক্তন সাংসদ ৬৪ বছর বয়সি এই কমল কিশোর আগে এনএসজি-র কমান্ডো ছিলেন। প্রায় সাত বছর তিনি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর নিরাপত্তা বাহিনীতে কাজ করেছেন। সেই সুবাদে গাঁধী পরিবারের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে।
এআইসিসি সদর দফতর থেকে রাহুলের নেতৃত্বে যখন কংগ্রেস সাংসদদের প্রতিনিধি দল এ দিন হাথরস রওয়ানা হয়, প্রিয়ঙ্কা নিজেই তখন গাড়ির চালকের আসনে। পাশে সামনের আসনে রাহুল। পিছনে ‘টিম রাহুল’-এর সদস্যরা। উত্তরপ্রদেশ সীমানায় পুলিশের বাধায় কংগ্রেস নেতাদের কনভয় আটকে যায়। সামনে পুলিশের মানবপ্রাচীর এবং কংগ্রেস সমর্থকদের ভিড়। প্রিয়ঙ্কা বাকিদের বলেন, “সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।”
আরও পড়ুন: হাথরস কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে মমতা, নিশানা বিজেপিকে
পাঁচ জনের যাওয়ার অনুমতি মেলায় রাহুল-প্রিয়ঙ্কার গাড়িতেই অধীর চৌধুরী ও বাকি নেতারা উঠে পড়েন। গাড়ির চালকের আসনে চলে যান ‘টিম রাহুল’-এর সদস্য, কংগ্রেস নেত্রী মার্গারেট আলভার ছেলে নিখিল। প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা এত দিন ধরে রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে এ ভাবেই সক্রিয় দেখতে চাইছিলেন। মার্গারেট নিজেই বলেন, ‘‘রাহুল-প্রিয়ঙ্কার নেতৃত্বে কংগ্রেস রাস্তায় নেমে পড়েছে দেখে ভাল লাগছে। কংগ্রেস বরাবর দলিত, প্রান্তিক মানুষের অধিকারের দাবিতে দাঁড়িয়েছে। আমি যদি ওখানে থাকতে পারতাম!”