হাথরসে নির্যাতিতাকে এ ভাবেই মধ্যরাতে শেষকৃত্য করা হয়েছিল। —ফাইল চিত্র
হাথরসে দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব হাতে তুলে নিল সিবিআই। নিযাতিতার ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে আজ ধৃতদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে তারা। সেখানে আনা হয়েছে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ। রয়েছে ‘তফসিলি জাতি ও জনজাতি (নিপীড়ন প্রতিরোধ) আইন’ ভঙ্গের অভিযোগও। সিবিআই জানিয়েছে, তাদের গাজ়িয়াবাদের দফতরকে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গড়া হয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল। উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রস্তাবের পরে হাথরসের ঘটনা নিয়ে সিবিআই তদন্তের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তার ভিত্তিতেই তদন্তের দায়িত্ব নিল সিবিআই। তবে হাথরসে কী ধরনের তদন্ত হবে, সে ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলার শুনানি এখনও শেষ হয়নি।
মৃত্যুর আগে হাথরসের নির্যাতিতা গণধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন। তবে ঘটনার ১১ দিন পরে ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো নমুনা পরীক্ষায় বীর্যের অস্বিত্ব না মেলায় উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ নানা ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে তরুণীকে আদৌ ধর্ষণ করা হয়নি। বিজেপির কোনও কোনও নেতা ধর্ষিতা মেয়েটির চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এই ঘটনা নিয়ে তুমুল বিক্ষোভের পিছনে বিদেশি চক্রান্তের হাত দেখেছে যোগী সরকার। তবে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে ধর্ষিতার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে হাথরসের ঘটনার তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আদিত্যনাখ। সেই অনুরোধের পরে সিবিআই তদন্ত নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানে তরুণীকে খুন, ধর্ষণের অভিযোগের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কোনও চক্রান্ত বা অন্য কোনও অপরাধ সংগঠিত হয়েছে কিনা, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে। সিবিআইয়ের আজকের এফআইআরে খুন, গণধর্ষণের অভিযোগ জায়গা করে নিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা ১৪ সেপ্টেম্বর হাথরসের চাঁদপা থানায় দায়ের হওয়া নির্যাতিতার ভাইয়ের অভিযোগটি গ্রহণ করেছে। যেখানে তিনি বলেছেন, অভিযুক্তরা বাজরা খেতে তাঁর বোনকে টেনে নিয়ে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। এই মামলায় তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিএসপি সীমা পাহুজাকে।
হাথরসের তরুণীকে নিয়ে আজও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিশানা করেছেন রাহুল গাঁধী। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘লজ্জার বিষয় হল, অনেক ভারতীয় এখনও দলিত, মুসলিম, জনজাতিদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে না। হাথরসের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পুলিশ বলছে, কেউ ধর্ষিতা হননি। কারণ, তাঁদের কাছে ওই তরুণী আসলে কেউ নন।’’
আরও পড়ুন: চাষির ভাল চাই বলেই রাগ: মোদী ॥ পাল্টা প্রশ্ন বিরোধীদের
আগামিকালই হাথরসের তরুণীর পরিবারের বক্তব্য শুনবে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের বিচারপতিদের সামনে নিয়ে আসা হবে। ১ অক্টোবর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মৃতা তরুণীর বাবা-মা’কে ডেকে পাঠিয়েছিল তাঁদের বক্তব্য শোনার জন্য। তাঁরা যাতে কোর্টে হাজির থাকতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হাথরস জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যেদের যাতায়াতের ব্যাপারে কোনও তথ্য দেয়নি পুলিশ। হাথরসের নির্যাতিতার পরিবার ও সাক্ষীদের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ক’দিন আগেই যোগী সরকারের থেকে জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।