মধ্যরাতে এ ভাবেই দাহ করা হয়েছিল হাথরসের নির্যাতিতার দেহ। —ফাইল চিত্র
তদন্তে নামার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনার এফআইআর নিয়ে যে দোলাচল সিবিআই দেখাল, তার ফলে হাথরসে খুন হওয়া দলিত কিশোরীর বিচার পাওয়া নিয়ে অনেকেই সংশয়ে। অভিযুক্তরা কেন গোড়া থেকেই সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছিল, উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া মাত্র অভিযুক্তদের স্বজনেরা কেন সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা স্পষ্ট হয়েছে বলে সোশ্যাল সাইটে মতামত দিয়েছেন অনেকে। নির্যাতিতার স্বজনেরা এ দিন এলাহাবাদ হাইকোর্টে হাজিরা দিয়েছেন, সেখানে পুলিশ কর্তাদের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘‘কী করে বলছেন ধর্ষণ হয়নি, তদন্ত কি শেষ হয়ে গিয়েছে? আপনার বা কোনও ধনী পরিবারের মেয়ে হলে পারতেন তার দেহ এ ভাবে পুড়িয়ে দিতে?” আবার হাথরসে যেতে চাওয়ার জন্য ইউএপিএ-তে গ্রেফতার করা সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের মুক্তির বিষয়ে কেরলের সাংবাদিক সংগঠনের আবেদন এক মাস পরে শোনা হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। তত দিন হয়তো জেলেই থাকতে হচ্ছে কাপ্পানকে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা সিবিআই রবিবার হাথরসের তদন্তভার গ্রহণের পরে যে এফআইআর-টি করে, তাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও খুন এবং হত্যার চেষ্টার মতো অভিযোগ আনা হয়। সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও সেই অভিযোগগুলির কথা উল্লেখ করা হয়। তার পরে সিবিআইয়ের ওয়েবসাইটে সেই এফআইআরের কপি এবং প্রেস রিলিজ় প্রকাশ করা হয়। নির্যাতিতা এবং অভিযুক্তদের বয়স ২১ বছরের কম হওয়ায় প্রকাশিত দুই নথিতে তাদের নাম সাদা কালি দিয়ে মোছা ছিল।
কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরে এফআইআর এবং প্রেস রিলিজ় সাইট থেকে সরিয়ে নেয় সিবিআই। জানানো হয়, নাম না-দেওয়া হলেও এগুলি প্রকাশে সুপ্রিম কোর্টের বিধিভঙ্গ হতে পারে আন্দাজ করে এই সিদ্ধান্ত। তবে এর পরে সরকারি প্রেস রিলিজ়টি ফের সাইটে প্রকাশ করা হয়, যাতে অভিযোগের খতিয়ানে কেবলই ‘খুনের চেষ্টা’-র উল্লেখ রয়েছে। ধর্ষণ ও খুনের কথা বলাই নেই!
ঘটনা হল, ১৪ সেপ্টেম্বর কিশোরী নির্যাতিতা হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে পরিবার স্থানীয় থানায় গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করলেও তা না-লিখে শুধু ‘খুনের চেষ্টা’ লেখা হয়। পরে নির্যাতিতা দিল্লির হাসপাতালে মারা যাওয়ায় ‘খুন ও ধর্ষণ’-এর অভিযোগ সংযোজন করা হলেও আগাগোড়া পুলিশ বলে আসছে কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়নি। অভিযুক্তরাও সেই দাবি করে আসছে। এই পরিস্থিতিতে সিবিআই সম্ভাব্য অভিযোগের মধ্যে ‘খুন ও ধর্ষণ’ যোগ করলেও পরে প্রেস রিলিজ থেকে তা বাদ দেওয়া হল। এ দিন এলাহাবাদ হাইকোর্টে পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)ও দাবি করেন, হাথরসের ঘটনা যোগী সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ‘আন্তর্জাতিক চক্রান্ত’। ধর্ষণের কোনও ঘটনাই হয়নি। বিচারপতি তাঁকে প্রশ্ন করেন— “কী করে জানলেন ধর্ষণ হয়নি? তদন্ত কি শেষ হয়ে গিয়েছে?” তার পরে বলেন, “আপনার নিজের মেয়ে হলে এই কথা বলতে পারতেন? দরিদ্র দলিতের মেয়ে না-হয়ে কোনও ধনী পরিবারের মেয়ে হলে পারতেন তার দেহটা এই ভাবে রাতের অন্ধকারে জ্বালিয়ে দিতে?”
আরও পড়ুন: জিএসটি কাউন্সিলে ঐকমত্য অধরাই, ধারের পথে ২১টি রাজ্য
কংগ্রেস নেত্রী রাহুল গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা টুইটে হাথরস নিয়ে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। রাহুল বলেন, ‘হাথরস নিয়ে রাজ্যের বিজেপি সরকারের অবস্থান অমানবিক এবং অন্যায্য। নির্যাতিতার পরিবারের বদলে সরকার অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।’ প্রিয়ঙ্কা যোগী সরকারকে নারী-বিদ্বেষী আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘এক জন নির্যাতিতা হয়েছেন, কিন্তু উত্তরপ্রদেশের সব নারী এই সরকারকে উপযুক্ত শিক্ষা দেবেন।’
আরও পড়ুন: রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় ভেলোরের হাসপাতাল
দিল্লিবাসী মলয়ালি সাংবাদিক কাপ্পান ও তাঁর দুই সঙ্গী যে গাড়ি ভাড়া করে হাথরসে নির্যাতিতার গ্রামে যাচ্ছিলেন, তার চালকের বিরুদ্ধেও ইউএপিএ-তে মামলা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ, আনা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও। চালকের পরিবার জানিয়েছেন, সওয়ারিদের চিনতেনই না চালক। ‘ওলা’ অ্যাপ -এর মাধ্যমে কাপ্পান ও তাঁর সঙ্গীরা যে ট্যাক্সিটি বুক করেন, ঘটনাচক্রে সেটির চালক ছিলেন দিল্লির সুন্দরনগরী এলাকার বাসিন্দা আলম। মথুরার কাছে গাড়িটি আটকায় পুলিশ। তাদের অবশ্য অভিযোগ, চার জনের যোজসাজশ ছিল।