কাশ্মীরে সফরকারী ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা—ছবি এএফপি
বাছাই করা আন্তর্জাতিক গ্যালারির সামনে পাক-মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাসের বিষয়টিকে তুলে ধরতে সক্রিয় হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তা যে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে, তা নয়। তবু ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীর দেখিয়েও মোটের উপরে মোদী সরকারের পড়তায় পোষাল না বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
এটা ঠিক যে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফরাসি, পোলিশ, ব্রিটিশ সদস্যেরা সফর শেষে সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ সদস্য নিউটন ডান। আজ এই দিকটিকে তুলে ধরে বিদেশ মন্ত্রক বোঝাতে চেয়েছে— সফর ঘিরে যত বিতর্কই হোক, শেষ পর্যন্ত লাভবান হয়েছে ভারত। মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমারের কথায়, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় সমস্যা সন্ত্রাসবাদ, সেটা ওঁরা বলেছেন। আমরাও এ ব্যাপারে আমাদের মতাদর্শ এবং অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পেরেছি। বাস্তব পরিস্থিতি বোঝানোটা প্রয়োজন ছিল।’’
কিন্তু ‘বাস্তব’ কি সত্যিই বোঝানো গেল? নাকি পুরোটা বুমেরাং হয়ে কাশ্মীর সমস্যাকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় ঠেলার সম্ভাবনা তৈরি করল? সেই চেষ্টাই তো করছে পাকিস্তান!
বিদেশ মন্ত্রক বলে থাকে, বিদেশনীতির প্রশ্নে ‘দৃশ্যবার্তা’ (অপটিক্স)-কে সর্বদা গুরুত্ব দেন মোদী। মমল্লপুরমে চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। কিন্তু কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যেরা কাশ্মীরের যে ছবি সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরলেন, তা যথেষ্টই ম্লান। তাঁরা দেখে গেলেন, উপত্যকায় অধিকাংশ সময়েই দোকানপাট বন্ধ, মূল স্রোতের রাজনৈতিক নেতারা আটক, জনসাধারণের ক্ষোভও চাপা থাকছে না। বিদেশি রাজনীতিকরা আসছেন, অথচ ভারতের বিরোধী নেতাদের কাশ্মীর সফরের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে রাখা হয়েছে। কাজেই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগ দিকটি যতই তুলে ধরা হোক, সাধারণ নাগরিকদের অধিকার খর্ব করা, রাজনৈতিক নেতাদের আটক রাখার মতো বিষয়গুলির যৌক্তিকতা বিদেশি অতিথিদের বোঝানো কঠিন হতে পারে সাউথ ব্লকের কর্তাদের কাছে।
আরও একটি বিষয় আছে। সূত্রের বক্তব্য, সফরকারী দলটির অধিকাংশ সদস্যই দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শের। অনেকেরই বিতর্কিত মন্তব্য (ইসলাম নিয়েও) করার ইতিহাস রয়েছে। তাঁদের সফরের পরেও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের তথা বিভিন্ন রাষ্ট্রের বাম ও উদারপন্থী অংশ কাশ্মীর নিয়ে সুর চড়াতেই পারে। বিদেশ মন্ত্রক গোড়াতেই সফরটি ‘সরকারি নয়’ বলে দেওয়ায় এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আমন্ত্রণে গোটা বিষয়টি ঘটায় এর কূটনৈতিক মান্যতাও কমেছে বলে অনেকের মত।