কাঠুয়া ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদ। —ফাইল ছবি
ধর্ষণ, খুন এবং মৃতদেহ মাটিতে পোঁতার সময়কালে তিনি মেরঠে ছিলেন, কাঠুয়ায় যাননি। এই দাবি করেছিলেন কাঠুয়া ধর্ষণকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত বিশাল জঙ্গোত্র। কিন্তু অভিযুক্তের হাতের লেখা পরীক্ষার পর প্রাথমিক ভাবে সেই দাবি নস্যাৎ করে দিলেন হস্তলিপি বিশারদরা। শুধু তাই নয়, ওই পরীক্ষার খাতা এবং অ্যাটেন্ডেন্স শিট পরে তৈরি করা হয়েছে বলেও বিস্ফোরক দাবি করেছেন তাঁরা।
এ বছরের গোড়ায় ১০ জানুয়ারি কাঠুয়ায় আট বছরের কিশোরীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। লাগাতার ধর্ষণের পর ১৩ জানুয়ারি রাতে তাকে খুন করা হয়। ১৭ জানুয়ারি উদ্ধার হয় কিশোরীর মৃতদেহ। তার পরই দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় চার্জশিট পেশ করেছে পুলিশ। চার্জশিটে মূল অভিযুক্ত বিশাল জঙ্গোত্র ও তাঁর খুড়তুতো ভাই, তাঁর বাবা সঞ্জি রাম এবং পুলিশ অফিসার দীপক খাজুরিয়া ওরফে দীপু।
কিন্তু বিশাল দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি কাঠুয়ায় ছিলেন না। উত্তরপ্রদেশের মেরঠের যে কলেজে তিনি পড়াশোনা করেন, সেই এলাকাতেই ছিলেন। প্রমাণ হিসাবে দাবি করেন, ১২ জানুয়ারি এবং ১৫ জানুয়ারি কলেজের পরীক্ষাও দিয়েছেন। কিন্তু ক্রাইম ব্রাঞ্চের তদন্তকারী অফিসাররা সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে চার্জশিট পেশ করে আদালতে জানান, ওই দু’দিনের পরীক্ষার উত্তরপত্র এবং হাজিরার নথিতে কারচুপি করা হয়েছে। হাজিরা খাতায় পরে সই করানো হয়েছে এবং উত্তরপত্রেও বিশালকে দিয়ে পরে লেখানো হয়েছে। প্রমাণ হিসাবে কলেজ থেকে বিশালের উত্তরপত্র এবং হাজিরার নথি বাজেয়াপ্ত করেন গোয়েন্দারা। সেগুলির ফরেনসিক পরীক্ষার পাশাপাশি হস্তলিপি বিশারদদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়। আর সেই পরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞরাও কার্যত তদন্তকারীদের দাবিতেই সিলমোহর দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: স্রেফ আঠা দিয়েই স্ত্রীকে খুন করলেন স্বামী!
হস্তলিপি বিশারদদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, হাজিরা খাতায় ১২ এবং ১৫ জানুয়ারি তারিখে বিশালের নামের প্রথম অংশ ‘বিশাল’ অন্য দিনগুলির সঙ্গে মেলেনি। পদবী ‘জঙ্গোত্র’ অংশটি ‘‘পরে ঢোকানো হতে পারে’’ বলেও মত বিশেষজ্ঞদের। ৯ জানুয়ারি বিশাল যে পরীক্ষায় বসেছিল, তার উত্তরপত্রও বাজেয়াপ্ত করেন গোয়েন্দারা। সেটির সঙ্গে ১২ ও ১৫ তারিখের উত্তরপত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, পরপর অক্ষর এবং শব্দগুলির দূরত্ব তথা ব্যবধান দেখে মনে করা হচ্ছে, প্রচণ্ড তাড়াহু়ড়োর মধ্যে লেখা হয়েছে। লেখার সময় লেখকের মানসিক সুস্থিরতা ছিল না। মস্তিষ্কের সঙ্গে স্নায়ুর সমন্বয়ের অভাব ছিল।
আরও পড়ুন: শিশু পর্নোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে আমেরিকায় হাজতবাস ভারতীয়ের
সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন অনুযায়ী কাঠুয়া ধর্ষণকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া চলছে পাঠানকোট জেলা দায়রা আদালতে।