শহরে ফের দমকল বাহিনী চায় লালা

শহরবাসীর একাংশের হামলার ভয়ে মাস পাঁচেক আগে লালা ছেড়েছিলেন দমকলকর্মীরা। বেগতিক দেখে এ বার ফের তাঁদের শহরে ফেরাতে চাইছেন সাধারণ মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৯
Share:

শহরবাসীর একাংশের হামলার ভয়ে মাস পাঁচেক আগে লালা ছেড়েছিলেন দমকলকর্মীরা। বেগতিক দেখে এ বার ফের তাঁদের শহরে ফেরাতে চাইছেন সাধারণ মানুষ।

Advertisement

আচমকা আগুন লাগলে কী হবে, সেই আশঙ্কাতেই তটস্থ তাঁরা সকলে।

শহরবাসী অবশ্য মানছেন, দোষটা দমকলকর্মীদের নয়। লালার দমকলকেন্দ্র থেকে আগুন নেভাতে যেতে কয়েক মিনিট দেরি হলেই কোথাও কোথাও হামলার মুখে পড়ছিলেন দমকলকর্মীরা। নিরাপত্তার কারণে সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হয়। হাইলাকান্দির লালা শহরে দমকল বাহিনীর শাখার তৈরির দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জনতার দাবি মেনে, ওই শহরে একটি অগ্নিশমন গাড়ি মোতায়েন করা হয়। সঙ্গে চালক-সহ ৪ কর্মী। পূর্ত বিভাগের বাংলোয় গাড়িটি রাখার ব্যবস্থা করা হয়। অস্থায়ী ভাবে দমকলকর্মীরা সেখানেই থাকছিলেন।

Advertisement

কিন্তু আগুন নেভাতে গিয়ে একের পর এক ঘটনায় দমকলকর্মীরা আক্রান্ত হতে থাকেন। কিছুটা সময় দেরি হলেই ক্ষিপ্ত জনতা তাঁদের উপর চড়াও হতো। তার জেরে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে লালা থেকে বিভাগীয় কর্মীদের সরিয়ে নেয় দমকল দফতর। বর্তমানে লালার কাছাকাছি দমকল বাহিনী মোতায়েন রয়েছে হাইলাকান্দি বা কাটলিছড়ায়। তাই লালার কোথাও আগুন লাগলে দমকল পৌঁছতে অনেকটা সময় লাগছে।

তত ক্ষণে পুড়ে ছাই হচ্ছে অনেক সম্পত্তি। গত ৫ মাসে লালায় কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সব ক্ষেত্রেই হাইলাকান্দি থেকে দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। শহরবাসী জানান, গত ২১ মার্চ বিমলাদেবীর ঘরে আগুন লাগে। পড়শিরা আপ্রাণ চেষ্টা করলেও, লাভ হয়নি। দমকল যখন পৌঁছয়, তত ক্ষণে সব শেষ। লালার এস পি রোডে বিশাল নাথের বাড়িতেও আচমকা আগুন লেগেছিল। দমকলের গাড়ি সেখানে পৌঁছয় আগের চেয়ে অনেকটা পরে।

এ সবের জন্য শহরেরই একাংশ বাসিন্দার উপর ক্ষোভে ফুঁসছেন অন্যরা। তাঁরা বলছেন, ওই সব হঠকারী লোকেদের জন্যই লালা শহর ছেড়েছে দমকল। স্থানীয় সূত্রে খবর, আগুন নেভাতে গিয়ে জনতার একাংশের হামলার মুখে পড়তে হতো দমকল কর্মীদের। হাইলাকান্দির লালায় এই ঘটনা ঘটত মাঝেমধ্যেই। পাঁচ মাস আগে তা মারাত্মক আকার নেয়। বাধ্য হয়ে থানায় মামলা রুজু করেন দমকল কর্মীরা। কিন্তু এখনও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর পরই দমকলকর্মীরা তাঁদের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। গাড়ি-সহ লালা থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে দেখে, এখন লালার সাধারণ মানুষ ওই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছেন। দমকলকর্মীদের শহরে ফেরানোর অনুরোধও জানিয়েছেন। জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন শহরবাসী।

হাইলাকান্দির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজমোহন রায় দমকল কর্মীদের হেনস্থার তদন্তে পুলিশ তত্‌পর বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “দ্রুত দুষ্কৃতীদের ধরা হবে।”

হাইলাকান্দির দমকল দফতরের কর্তা গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, “তত্‌কালীন মন্ত্রী গৌতম রায়ের অনুরোধে লালা শহরে একটি গাড়ি ও চার কর্মীকে পাঠানো হয়। কিন্তু হামলা ক্রমে বেড়ে যাওয়ায়, কর্মীরা ভয়ে শহর ছেড়ে চলে আসেন।” তিনি জানান, অন্য কোনও জায়গাতেও আগুন নেভাতে গেলে উত্তেজিত জনতার কথা শুনতে হয়। কিন্তু লালার ডাকবাংলোয় দমকলকর্মীদের অস্থায়ী ঠিকানায় ঢুকে নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। তিনি জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে ফের আগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement