স্বাতী গর্গ। নিজের প্রাণের বিনিময়ে অন্যদের বাঁচিয়েছেন তিনি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নিজের প্রাণের বিনিময়ে অন্যদের যেন নতুন জীবন দিয়ে গেলেন স্বাতী।
রাত আড়াইটা নাগাদ যখন ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছিল পাঁচতলাটা, তিনিই প্রথম দেখতে পান। নিজেকে বাঁচানোর আগে পাগলের মতো একটার পর একটা প্রতিবেশীদের দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন। ঘুম থেকে ডেকে তুলে তাঁদের মর্মান্তিক পরিণতির থেকে রক্ষা করেন। আগুনের গ্রাস থেকে সকলকে বাঁচালেন, শুধু পারলেন না নিজেকে বাঁচাতে। কালো, বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে ছাদের দরজার কাছেই সিঁড়িতে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করেন দমকল কর্মীরা। দেওয়ালে, দরজায় তখনও তাঁর ছাপের ছাপ স্পষ্ট। তিনি ৩২ বছরের স্বাতী গর্গ।
রবিবার রাত ২টো। হরিয়ানার গুরুগ্রামের টিউলিপ রেসিডেন্সি তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রেসিডেন্সির ১১টা টাওয়ারে ফ্ল্যাটের সংখ্যা ৫০০। স্বাতী গর্গ যে টাওয়ারে থাকতেন, সেটা ১১ তলা। তারই ৬ তলার একটি ফ্ল্যাটে তিনি থাকতেন।
স্বাতীর স্বামী জানান, রাতে ফ্ল্যাটের ভিতরটা ধোঁয়ায় ভরে যেতে শুরু করে। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। মেয়ে, এবং শাশুড়িকে নিয়ে তাঁরা দুজনেই ফ্ল্যাট থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। বাইরেটা অর্থাৎ সিড়ির সামনের প্যাসেজের অবস্থা ছিল আরও ভয়ানক। আরও বেশি ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল জায়গাটা। সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামার মতো পরিস্থিতি ছিল না। বাঁচতে হলে উপরে ছাদের দরজা দিয়েই বেরতে হত।নিজেকে বাঁচানোর আগে স্বাতী ঝাপিয়ে পড়েন প্রতিবেশীদের বাঁচাতে। প্রতিটা ফ্ল্যাটের দরজায় ধাক্কা দিয়ে সবাইকে ডেকে তোলেন। তারপর নিজেও দৌড় লাগান উপরের তলাগুলোর প্রতিবেশীদের ডেকে তোলার জন্য। এর মধ্যেই পরিবারের অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে পড়েন স্বাতী।স্বাতীর স্বামী বলেন, ‘‘আমি মেয়েকে নিয়ে ছুট লাগিয়েছিলাম ছাদের দরজার দিকে। সবাই সে দিকেই ছুটছিলেন। কিন্তু স্বাতী পিছিয়ে পড়েন।’’
আরও পড়ুন: এ বার চিনের কাছ থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪৮টি সামরিক ড্রোন কিনছে পাক সেনা
ভোর ৩টে ১০ মিনিট নাগাদ দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিন্তু যতক্ষণে দমকল কর্মীরা ছাদের দরজার কাছে পৌঁছন, ততক্ষণে মারা গিয়েছেন স্বাতী।কারণ ছাদের দরজা বন্ধ ছিল। ধোঁয়ার মধ্যে দরজা খুলতে পারেননি তিনি। অক্সিজেনের অভাবে একটু একটু করে অবশ হয়ে পড়ে তাঁর শরীরটা। তিনি যে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় ওই জায়গার দেওয়াল এবং দরজা দেখেই। দেওয়ালে এবং দরজায় হাতের ছাপ রয়েছে তাঁর, জানান দমকল কর্মীরা।
আরও পড়ুন: ভিলাইয়ের স্টিল প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, গ্যাস পাইপ ফেটে মৃত অন্তত ৯
পুলিশ জানিয়েছে, ওই আবাসনের ৬ তলার সিঁড়ির পাশেই মিটারবক্স ছিল। সেই মিটারবক্সেই কোনওভাবে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। আবাসনের একটাই বেরনোর রাস্তা। সিঁড়ির পাশের দরজা। কিন্তু দরজার মুখেই আগুন লাগায় কেউই সেখান দিয়ে বেরতে পারেননি।
আগুন প্রতিরোধের যথেষ্ট ব্যবস্থা না রাখার অভিযোগে টিউলিপ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
এত জনের প্রাণ বাঁচালেন যিনি, তাঁর প্রাণটাই যে এ ভাবে বেঘোরে চলে যাবে, তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না তাঁর স্বামী। বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রতিবেশীরাও।