পঞ্চকুলায় তাণ্ডবের ছক রাম রহিমের পরিকল্পিত

সে দিনের ঘটনায় আক্রমণকারী ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় যে ৮ রক্ষী বাবাকে ঘিরে ছিল, গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৫৮
Share:

পোশাক-বাহার: গুরুগ্রামে ডেরার আশ্রমে তল্লাশি। ছবি: পিটিআই।

রাম রহিমের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার খবর এল। সঙ্গে সঙ্গে ওই ডেরা প্রধানের কিছু অনুগতের মোবাইলে পৌঁছে গেল বার্তা— ‘টোম্যাটো ফোড়ো’।

Advertisement

হরিয়ানার পঞ্চকুলায় ডেরা ভক্তদের লাগামছাড়া তাণ্ডবের বলি হয়েছেন ৩৮ জন। জখম ২৫০-রও বেশি। হরিয়ানা সরকার প্রথমে তদন্ত নিয়ে নরম থাকলেও পরে আদালত এবং জনতার চাপে সেই অবস্থান বদলাতে বাধ্য হয় তারা। রাজ্য পুলিশের ডিজির সহযোগিতায় এখন ওই ঘটনার জোরদার তদন্তে নেমেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গোয়েন্দারা। তাঁরাই জানাচ্ছেন, সে দিনের ঘটনার পুরোটাই ছিল রাম রহিমের নিজের পরিকল্পিত ছক। তাঁর নাম নিয়ে তাণ্ডব চালানোটাও ছিল ওই ছকেরই অংশ।

সে দিনের ঘটনায় আক্রমণকারী ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় যে ৮ রক্ষী বাবাকে ঘিরে ছিল, গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরও। তাদের জেরা করেই এই তথ্য সামনে এসেছে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই পুরো ঘটনাটার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন টোম্যাটো ফোড়ো।’ ঠিক ছিল, বাবার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার খবর বাইরে এলেই ভিড়ের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে ওই বার্তা। সেই মতোই ২৫ অগস্ট আদালতের সামনে সাজানো হয়েছিল চিত্রনাট্যের মঞ্চ। কী রকম?

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সে দিন ভক্তরা যে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে এসেছিলেন, এমনটা নয়। আশ্রমের তরফেই তাদের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে দিয়ে সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তেরা যাতে সময় মতো আদালতের সামনে পৌঁছে যেতে পারেন, তার জন্য বাসের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কিছু জায়গায় এমনও বলা হয়েছিল যে, সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছে। বাবার প্রবচন শুনতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁদের। যা থেকে তদন্তকারীরা নিশ্চিত যে, ছকটা শুরু থেকেই ছিল প্ল্যানমাফিক।

ওই ভিড়েই মিশে ছিল বাবার নিযুক্ত ৫০ থেকে ৬০ জন ভাড়াটে গুন্ডা। গোয়েন্দাদের ভাষায় যাকে বলে ‘এজেন্ট প্রোভোকেটর’। তদন্তে জানা গিয়েছে, ঘটনার আগে থেকেই ওই চত্বরে বেশ কিছু গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার ডিকি ভরে রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডার, একে-৪৭, বোমা, রিভলভার, কার্তুজ, কেরোসিনের জার। অস্ত্র নিয়ে বার্তা পাওয়ার অপেক্ষায় তৈরিই ছিল গুন্ডাবাহিনী।

ঘটনার নীল নকশা কী ভাবে তৈরি করা হয়েছিল, ধৃতদের জেরা করে তা স্পষ্ট হচ্ছে তদন্তকারীদের কাছে। জানা যাচ্ছে, সে দিন গুন্ডাদের মোবাইলে হামলা শুরু করার ‘টোম্যাটো ফোড়ো’ সঙ্কেতটি পাঠানো হয়েছিল সিরসার ডেরা সচ্চা সৌদার আশ্রম থেকেই। বাবার নির্দেশে তাঁরই কয়েক জন সহযোগী গুন্ডাদের কাছে ওই বার্তা পৌঁছে দেন। তাঁরা কারা ছিলেন, ধৃতদের জেরা করে তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

ইতিমধ্যেই রাম রহিমের ধৃত ৮ রক্ষীর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ ও খুনের চেষ্টার মামলা হয়েছে। আগামী কাল রোহতক জেলে তাঁর সাজা ঘোষণা। একে ঘিরে যাতে কোনও রকমের অশান্তি না ছড়ায়, সেই জন্য বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২৯ অগস্ট পর্যন্ত হরিয়ানায় বন্ধ মোবাইল-ইন্টারনেটও। গোটা রোহতকই এখন বকলমে সেনার হাতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement