হার্দিক এবং পায়েল।
আজব প্রেম কি গজব কহানি। কিন্তু যে প্রেমের কাহিনি এটি, তা ‘আজব’ হলেও বড়ই মধুর। এই প্রেমকাহিনির নায়ক-নায়িকা হলেন এক পরীক্ষার্থী এবং তাঁকে পরীক্ষায় সহায়তা দানকারী এক ব্যক্তি।
প্রবাদ, প্রেম বলে কয়ে আসে না। কোথায়, কখন, কী ভাবে ‘সে’ আসবে, তার পূর্বাভাস কেউই দিতে পারেন না। গুজরাতের এই প্রেমকাহিনিও অনেকটা সে রকমই। ঠিক যেন, ‘লিখতে লিখতে প্যার হো গয়া’-র মতো।
কাহিনির নায়িকা পায়েল শর্মা। বছর ছাব্বিশের এই তরুণী তাঁর ভালবাসার মানুষটিকে খুঁজে পেয়েছেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। পায়েল দৃষ্টিহীন। বর্তমানে সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর করছেন।
স্নাতক স্তরে পড়াকালীন তাঁর হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এক জন লিখিয়েকে খুঁজছিলেন পায়েল। ঘটনাচক্রে সেই সূত্র ধরেই হার্দিক দাভে নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় পায়েলের। তিনি পায়েলের হয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে লিখে দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে যান। পায়েলকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, তাঁর হয়ে পরীক্ষা দেওয়া, আবার পরীক্ষা শেষে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া— এ সবই করতেন হার্দিক। শুধু পরীক্ষার সময়ই পায়েল এবং হার্দিকের সাক্ষাৎ হত। সেই সাক্ষাতের পরিণতি ছাদনাতলায় দু’জনের বন্ধন।
গত ২৮ নভেম্বর পায়েলের সঙ্গে বিয়ে হয় হার্দিকের। পায়েল জানিয়েছেন, চার বছর ধরে হার্দিক পরীক্ষায় তাঁর হয়ে লিখছেন। বিএ়ড পাশ করা পর্যন্ত তাঁর পাশেই থেকেছেন। কিন্তু কখনও তাঁর মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করতে পারেননি। অবশেষে চার বছর পর হার্দিক প্রেম নিবেদন করার সাহস দেখান। তা সাদরে গ্রহণ করেন পায়েলও। তাঁর কথায়, “হার্দিক যে ভাবে আমার খেয়াল রাখত, যে ভাবে প্রতিটি পরীক্ষার সময় আমাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া, পরীক্ষা শেষে বাড়িতে পৌঁছে দিত, তা সত্যিই তার প্রতি আমাকে আকৃষ্ট করেছিল।”
হার্দিক পেশায় এক জন জ্যোতিষী। তিনি বলেন, “দশটি বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু তাদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য ছিল, আমাকে জ্যোতিষীর পেশা ছাড়তে হবে। কিন্তু তাতে রাজি ছিলাম না। এই সময়েই পায়েল এক জন লিখিয়ে খুঁজছিল তার হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। সেটা গ্রহণও করেছিলাম। ধীরে ধীরে সেখান থেকে কখন যে দু’জনের সম্পর্ক গভীর হয়ে ওঠে, টেরই পাইনি।”
পায়েলকে বিয়ে করতে চান, এ কথা পায়েলের বাবা-মাকে জানান হার্দিক। কিন্তু তাঁরা বিষয়টি নিয়ে খুবই দোলাচলে ছিলেন বলে জানান হার্দিক। কেন না পায়েল দৃষ্টিহীন। স্বাভাবিক ভাবেই এই বিয়ের প্রস্তাবে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল পায়েলের বাবা-মায়ের মনে। হার্দিক বলেন, “পায়েলের বাবা-মায়ের আশঙ্কার কথা বুঝতে পরেছিলাম। তাঁরা যখন আমাকে বলেছিলেন পায়েল কোনও কাজ করতে পারে না। তাঁদের আশ্বস্ত করেছিলাম, উদ্বিগ্ন হবেন না। আমি পায়েলের সব দায়িত্ব নেব। তবে বিয়ের পরে সত্যিই আশ্চর্য হয়েছি জানতে পেরে যে, পায়েল ভালই রান্না করতে পারে।”