প্রচার: মোদী-রাজ্যে রাহুল। ফাইল ছবি।
গুজরাত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে দলিতদের দাবি যুক্ত করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন রাহুল গাঁধী। শুক্রবার নভসারি জেলায় কংগ্রেস সহ-সভাপতির নির্বাচনী প্রচারের সময় তাঁর সঙ্গে বৈঠক হয় দলিত নেতা জিগনেশ মেবানির। সেই বৈঠকেই রাষ্ট্রীয় দলিত অধিকার মঞ্চের নেতা জিগনেশকে এই আশ্বাস দিয়েছেন সনিয়া-পুত্র।
জিগনেশ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাহুল আমাকে বলেছেন, আমাদের দাবির ৯০ শতাংশ শুধু দাবি নয়, সাংবিধানিক অধিকার।’’ তিনি আরও জানান, দলিতদের এই দাবিগুলি কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে যোগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন রাহুল। আশ্বাস মেলার পরেই রাহুলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জিগনেশ কংগ্রেসের ‘নবসৃজন’ যাত্রায় অংশ নেন।
গুজরাত বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস যে কতটা মরিয়া, তা রাহুলের এই আশ্বাস থেকেই স্পষ্ট। এই প্রথম কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহারে অন্য কোনও দলের দাবি-দাওয়া যুক্ত করার আশ্বাস দিলেন রাহুল। কিন্তু এই আশ্বাসকে কংগ্রেস কাজে কতটা পরিণত করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। কারণ ইতিমধ্যেই পটেলদের জন্য সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন হার্দিক পটেল। পাতিদার (পটেল) সংরক্ষণ আন্দোলনের এই নেতা গুজরাতের ভোটে কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। বিজেপিকে হারাতে চান যুবনেতা অল্পেশ ঠাকোর এবং জিগনেশও। এবং প্রত্যেকেই সংরক্ষণের যে দাবি তুলছে, তা বাস্তবায়িত করা কঠিন বলেই মনে করছেন অনেকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে বিজেপি-কে ধাক্কা দিতে কংগ্রেস পটেল, মুসলমান এবং তফসিলি জাতি-উপজাতির ভোট ঘরে তুলতে মরিয়া। সে কারণেই তাদের মন জয়ে সংরক্ষণের দাবি মানার আশ্বাস। কংগ্রেসের একটি অংশের বক্তব্য, সমস্যা না-ও হতে পারে। রাহুল সম্প্রতি যে ভাবে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে একের পর এক মোদী-বিরোধী নেতাকে পাশে টেনেছেন, সেই অঙ্কেই সংরক্ষণের তাস কাজে লাগাবেন তিনি।
বিজেপিকে বড় ধাক্কা দিতে গত ক’দিন ধরেই গুজরাত চষে ফেলছেন রাহুল। এ দিন রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত বলসাড জেলার নানাপন্ধায় একটি জনসভা করেন তিনি। সেখানে বিজেপির সঙ্গে নির্বাচনী যুদ্ধকে মহাভারতের ধর্মযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। রাহুলের দাবি, গুজরাতে কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে যুদ্ধটা হল ‘সত্য ও মিথ্যার লড়াই’। যেখানে সত্য রয়েছে কংগ্রেসের দিকে।
এই সত্য-মিথ্যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়েই গুজরাতের নির্বাচনী প্রচারে রাহুল টেনে আনেন মহাভারতের প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সরকার, পুলিশ, সেনাবাহিনী, গুজরাত-উত্তরপ্রদেশ-মধ্যপ্রদেশ-ছত্তীসগঢ়ের সরকার রয়েছে। যেমন কৌরবদের সঙ্গে বিরাট সেনা এবং অস্ত্র ছিল। কিন্তু পাণ্ডবদের দিকে সত্য ছাড়া কিছুই ছিল না। আমাদের সঙ্গেও সত্য ছাড়া আর কিছু নেই। গুজরাতে জেতার জন্য কংগ্রেসের কিছুর দরকারও নেই।’’
এ দিন বিজেপিকে বিঁধে রাহুল বলেন, ‘‘গুজরাতের সত্যের সঙ্গে বিজেপির সত্যের কোনও সম্পর্ক নেই। গুজরাতের সত্য হল যুবকদের বেকারি। ব্যয়বহুল বেসরকারি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা, দুর্নীতি এবং জমি লুঠ। আর বিজেপির সত্য হল, পাঁচ-দশ জন ঘনিষ্ঠ শিল্পপতির পকেটে লাভ ঢোকানো। গুজরাতের জমি-জল লুঠ করা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘একমাত্র কংগ্রেসই যুবকদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি ঘটাতে পারে। আমরা ১৫ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার মতো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিই না।’’