প্রধানমন্ত্রীকে ‘অপমান’ করা হয়েছে, মনে করছেন কংগ্রেসের অনেক সমর্থকও। ছবি:রয়টার্স।
দুপুর গড়াতে শুরু করেছে। দোকানে এই সময় খদ্দের তেমন থাকে না। আক্ষরিক অর্থেই মাছি তাড়াচ্ছিলেন অমৃতভাই। মিডিয়া দেখে একটু যেন বিব্রতই হলেন। প্রথমে মুখ খুলতে চাইছিলেন না। কিন্তু কথায় কথা বাড়ল। অমৃতভাইও মন খুললেন। আর তাতেই বোঝা গেল, গুজরাতি অস্মিতার উনুনে বেশ গনগনে আঁচই ধরিয়ে দিতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদী।
নরেন্দ্র মোদীকে অপমান করা হচ্ছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে, এ কথায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন এই মুদি দোকানদার। পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রের তত্ত্বেও তিনি বিশ্বাস রাখছেন।
প্রথম দফার নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনেই গুজরাতি অস্মিতা নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন মোদী। সুরাতের জনসভা থেকে মোদী তোপ দেগেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারের বিরুদ্ধে। তাঁকে ‘নীচ’ বলেছেন মণিশঙ্কর, এটা কি শুধু তাঁর অপমান? নাকি গোটা গুজরাতের অপমান? মঞ্চ থেকে প্রশ্ন করেছিলেন মোদী। ভিড় উত্তর দিয়েছিল, ‘গুজরাতের অপমান’।
VIDEO: মোদীকে অপমানের বদলা নেবে গুজরাত?
দ্বিতীয় দফার ভোট প্রচার শুরু হতেই আরও একটি চরিত্রকে আসরে হাজির করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সলমন নিজামি। মোদীর বিরুদ্ধে কুরুচিকর এবং সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে নিজামির বিরুদ্ধে। মোদী বলছেন নিজামি কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেস নেতৃত্ব বলছেন, সলমন নিজামিকে তাঁরা চেনেনই না।
আরও পড়ুন: কে থামায় দেখে নেব: পাটিদার হুঙ্কারের মাঝে রোড শোয়ে হার্দিক
বিজেপি-কে সরিয়ে আহমেদ পটেলকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য পাকিস্তান সক্রিয় হয়েছে বলেও মোদী অভিযোগ করেছেন। মণিশঙ্কর আইয়ারের বাড়িতে তা নিয়ে পাক রাষ্ট্রদূত এবং প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে মনমোহন সিংহ এবং হামিদ আনসারির ‘গোপন’ বৈঠকও হয়েছে। দাবি মোদীর।
সব অভিযোগই যে আসলে গুজরাতি অস্মিতাকে সাংঘাতিক ভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করার জন্য, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অধিকাংশের কাছেই স্পষ্ট। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে ইতিমধ্যেই প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদীদের এই প্রচার। মুদি দোকানদার অমৃতভাই বললেন, ‘‘আমি মনে করছি, মোদীজিকে অপমান করা হয়েছে। এটা গুজরাতেরও অপমান।’’ এর প্রভাব ভোটে পড়বে? ‘‘অবশ্যই পড়বে। কংগ্রেস এর জন্য ধাক্কা খাবে।’’ মন্তব্য অমৃতের।
ভারত ঠাকোরের সঙ্গে দেখা হল অমদাবাদ থেকে কিছুটা দূরের এক গ্রামে। সে গ্রামে ঠাকোর সম্প্রদায়ের লোকই বেশি। বেশির ভাগই অল্পেশ ঠাকোরের অনুগামী। অতএব, এ বারের ভোটে সে গ্রাম কংগ্রেসের পক্ষে। ভোট কোন দিকে দেবেন? ভরত বললেন, ‘‘কংগ্রেসে।’’ কেন? ‘‘আমাদের গ্রামে কোনও উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাটা দেখুন না। দেখে বুঝতে পারছেন না?’’
কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা যিনি প্রকাশ্যে বলছেন, সেই ভরত ঠাকোরও কিন্তু মোদীর এবং গুজরাতের অপমানের প্রশ্নে স্পর্শকাতর। কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার যা বলেছেন বা সলমন নিজামি যা বলেছেন, সে সব মোদীজির জন্য অপমানজনক এবং গুজরাতের জন্যও অপমানজনক, মোদীজি নিজে এ কথা বলছেন। আপনি কি এমনটা মনে করেন? ‘‘হ্যাঁ, মনে করি। এই সব কথা অবশ্যই মোদীজির অপমান, গুজরাতেরও অপমান।’’ তা হলে কি বিজেপি-কে ভোট? ‘‘না, তা কেন? উন্নয়ন করেনি বিজেপি। আমাদের গ্রামের জন্য কিছুই করেনি। ভোট কংগ্রেসকেই দেব।’’
অমৃতভাই বা ভরতভাইদের সঙ্গে কথা বলে এটা কিন্তু স্পষ্ট যে, নরেন্দ্র মোদী প্রাথমিক ভাবে সফল। কংগ্রেসের ভোটারকে নিজের দিকে টানতে পারুন বা না পারুন, কংগ্রেস যে তাঁকে এবং গুজরাতকে অপমান করছে, এ তত্ত্ব বেশ ভাল ভাবেই খাইয়ে দিতে পেরেছেন মোদী। এর প্রভাব ভোটযন্ত্রে কিছুটা হলেও পড়বে। প্রকারান্তরে সে কথা মেনে নিচ্ছেন কংগ্রেস নেতারাও।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভরতসিন সোলাঙ্কি বললেন, ‘‘মনমোহন সিংহ যোগ্য জবাব দিয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীকে। প্রধানমন্ত্রী হয়ে এই রকম মিথ্যাচার মানায় না, বলেছেন মনমোহন সিংহ।’’ মনমোহন না হয় জবাব দিলেন। কিন্তু সে জবাবে কি সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট হবেন? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির জবাব, ‘‘সাধারণ মানুষ সব বোঝেন। তাঁরা মনস্থির করে নিয়েছেন যে, কোন দিকে ভোট দেবেন। সেটা বুঝেছে বলেই বিজেপি ভয় পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে বলেই রোজ নতুন নতুন মিথ্যা বাজারে ছাড়ছে।’’ তা হলে নরেন্দ্র মোদীর এই ‘অপমান’ তত্ত্ব এবং ‘পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব কাউকেই প্রভাবিত করতে পারবে না? এ প্রশ্নে একটু পিছু হঠতে হল ভরতসিন সোলাঙ্কিকে। বললেন, ‘‘এ সব কথার প্রভাব তাঁদের উপরেই পড়বে, যাঁরা দোদুল্যমান। কোন দিকে ভোট দেবেন, এখনও যাঁরা ভাবছেন, এই সব মিথ্যায় প্রভাবিত হয়ে তাঁরা বিজেপির দিকে হয়তো যাবেন। তবে তাতে বিজেপির খুব লাভ হবে না।’’