অমদাবাদে রোড শো-এ হার্দিক। ছবি :পিটিআই।
খবরটা ছড়াতেই বাড়তে শুরু করেছিল উত্তেজনা। রোড শো হবে না। হার্দিক পটেলকে রোড শো করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। খবর আসছিল নানা সূত্র থেকে। কিন্তু হার্দিক নাকি অমদাবাদের বুকে রোড শো করতে বদ্ধপরিকর, এমন খবরও আসছিল। অতএব ছুটতেই হল ঘুমার দিকে।
ঘুমা গ্রাম পাটিদার সম্প্রদায়ের শক্ত ঘাঁটি। অমদাবাদ শহর থেকে খুব দূরে নয় গ্রামটা। রবিবার দুপুর থেকে ঘুমার আশেপাশেই কোথাও ছিলেন হার্দিক। রোড শোয়ের প্রস্তুতি পর্ব সম্ভবত নিজেই তদারকি করছিলেন। এত প্রস্তুতির পরেও রোড শো-টা শেষ পর্যন্ত হবে কি না, এ দিন সকালে তা নিয়ে ঘোর সংশয় তৈরি হল। কিন্তু পুলিশি অনুমতির তোয়াক্কা না করে যে মিছিল শেষ পর্যন্ত করলেন হার্দিকরা, তা সত্যিই তাক লাগিয়ে দিল।
অমদাবাদের সীমানা ছাড়িয়ে থলতেজ পর্যন্ত পৌঁছতেই বেশ বোঝা যাচ্ছিল, পরিস্থিতি থমথমে। ব্যাপক পুলিশি বন্দোবস্ত জি এস হাইওয়ের দু’ধারে। আধাসামরিক বাহিনীও টহল দিচ্ছে কোথাও কোথাও। থলতেজ ছাড়িয়ে এগিয়ে যেতেই নীল পতাকায় মুখ ঢাকতে শুরু করল রাস্তাটা। হার্দিক পটেলের পতাকা, পাটিদার অনামত আন্দোলন সমিতির (পাস) পতাকা।
VIDEO: অমদাবাদে হার্দিকের রোড শো
ঘুমার একটি মন্দির থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল মিছিল। হার্দিক পৌঁছনোর ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই সে মন্দিরে বিপুল পাটিদার সমাগম। পুরুষ-মহিলা সবাই রয়েছেন। তবে ভিড়ের ৮০ শতাংশই তরুণ প্রজন্মের। প্রবীণ বা মধ্যবয়স্কের সংখ্যা নেহাতই নগণ্য। হাতে নীল পতাকা, মাথায় সাদা রঙের নেহরু টুপি। ডিজে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে তারস্বরে হার্দিকের নামে জয়ধ্বনি চলছে। খালি গলায় চলছে স্লোগান— জয় সর্দার, জয় পাটিদার।
আরও পড়ুন: শীলজ থাকবে হার্দিকের পাশেই, কিন্তু গোটা পাটিদার সমাজ থাকবে কি?
কখন শুরু হবে মিছিল? এক ঝাঁক তরুণ এগিয়ে এলেন উত্তর দেওয়ার জন্য। স্লোগানের মেজাজেই বললেন, ‘‘আমাদের ভাই (হার্দিক) এলেই শুরু হবে।’’ কখন আসবেন তিনি? আবার ভরপুর উত্তেজনা নিয়ে জবাব, ‘‘ভাই আমাদের কাছাকাছিই রয়েছেন। ২০-২৫ মিনিটেই চলে আসবেন।’’ কিন্তু পুলিশ তো অনুমতি দেয়নি। ‘‘সে আমরা বুঝে নেব। পুলিশ কী করে আটকায়, দেখে নেব।’’ চ্যালেঞ্জ ছোড়ার ভঙ্গি হার্দিক অনুগামী এক কিশোরের।
বড়সড় কনভয় নিয়েই ঘুমায় পৌঁছলেন হার্দিক। নিরাপত্তাও প্রবল। প্রথমে মন্দিরে গিয়ে আরতি করলেন। তার পর প্রবল উৎসাহিত সমর্থক-অনুগামীদের সঙ্গে হাত মেলাতে মেলাতে গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি ঘিরেও আছড়ে পড়ল ভিড়। খুব ধীরে এগোতে শুরু করল কনভয়।
ঘুমা থেকে যখন শুরু হল রোড শো, তখন শ’দুয়েক গাড়ি রয়েছে মিছিলে। হাজারখানেক বাইক। হার্দিকের জয়ধ্বনি আর নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে উত্তাল স্লোগান— অমদাবাদ শহরের দিকে এগোতে থাকলেন হার্দিকরা। ব্যাপক পুলিশি বন্দোবস্ত থাকলেও হার্দিকদের পথ আটকানোর চেষ্টা হয়নি। ঘুমা, থলতেজ হয়ে মিছিল যত এগিয়েছে, ততই বেড়েছে ভিড়ের বহর। কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ মিছিলটা বিজেপি-র কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে বাধ্য। রোড শোয়ের আয়োজকরা জানালেন, অন্তত হাজার দশেকের সমাগম হয়েছে হার্দিকের এ দিনের রোড শোয়ে।
প্রথম দফার ভোটগ্রহণের আগে রাজকোটে সুবিশাল জনসভা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন পাটিদার নেতা। দ্বিতীয় দফার আগে চোখ ধাঁধিয়ে দিলেন অমদাবাদের। হার্দিকের পিছনে ছুটতে থাকা এই ভিড়ের নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক দলের হাত যদি না থাকে, তা হলে দীর্ঘ দিনের অনুগত পটেল ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে এ বার চিন্তায় থাকতেই হবে গুজরাতের শাসকদের।