Gujarat Assembly Election 2022

বুধে দিল্লির ফলাফল, বৃহস্পতিতে গুজরাত ও হিমাচল, পরাজয়-জয়, ত্রিশঙ্কুর মাঝে বিজেপি

বুধবার দিল্লি পুরনিগমের ফল ঘোষণা। বৃহস্পতিবার গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের ফল। বুথফেরত সমীক্ষায় যা ইঙ্গিত, তাতে মনখারাপ কংগ্রেসের। আপের হারানোর কিছু নেই। আর বিজেপির?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৪০
Share:

নিজভূমে নিশ্চিত হলেও দিল্লি ও হিমাচল নিয়ে চিন্তায় মোদী, শাহ। — ফাইল চিত্র।

বুধ আর বৃহস্পতিবারের অপেক্ষায় গোটা দেশ। প্রথম দিন দিল্লি পুরসভা নির্বাচনের ফলঘোষণা। পর দিন দুই রাজ্য গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনা। বুথফেরত সমীক্ষা তিনটি নির্বাচনে তিন রকম ফলের আভাস দিয়েছে। ঐতিহাসিক ভাবে দেখা গিয়েছে, বুথফেরত সমীক্ষা যে সব সময় সঠিক হয়, তা নয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ওই সমীক্ষা মিলে যায় বলে ভোটপণ্ডিতদের একটি অংশ বুথফেরত সমীক্ষার উপর ভরসা করেন।

Advertisement

একাধিক সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষা আভাস দিয়েছে, দিল্লি পুরসভায় টানা তিন বারের জয়ী বিজেপির এ বার পতন হতে পারে। যদিও গুজরাতে টানা ছ’বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে বিজেপি। যে হিমাচল প্রদেশ সাম্প্রতিক কালে ফি-বছর শাসক বদল করার নজির তৈরি করেছে, সেখানেও পর পর দু’বার ক্ষমতায় আসতে পারে বিজেপি। কিন্তু এ-ও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে, বিজেপিই সেখান ক্ষমতায় আসবে। কয়েকটি বুথফেরত সমীক্ষায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিজেপি-কংগ্রেস সমান সমান হওয়ার ইঙ্গিতও মিলেছে। ফলে দেশের ‘শাসক’ বিজেপি জয়, পরাজয় এবং ত্রিশঙ্কুর মাঝে দোদুল্যমান। কংগ্রেসের হারানোর ভয়ই বেশি। ৫ বছর আগেও তুলনায় ভাল ফল করা গুজরাতে কংগ্রেস ধরাশায়ী হবে বলেই একাধিক বুথফেরত সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে। আপের হারানোর কিছু নেই। শুধু প্রথম বার জয় করার জন্য রয়েছে দিল্লি পুরসভা।

২৫০ আসনের দিল্লি পুরসভার ফলাফলের ক্ষেত্রে সব বুথফেরত সমীক্ষাই বলছে, অরবিন্দ কেজরীবালের আপ ১৪০ থেকে ১৫৬টি আসন পেতে পারে। সেখানে বিজেপি পেতে পারে ৭০ থেকে ৯৫টি আসন। কংগ্রেস ৩ থেকে ১০টি। দিল্লি সরকার বিজেপির হাতছাড়া হয়েছিল বছর পঁচিশ আগে। বুথফেরত সমীক্ষা বলছে, ১৫ বছর পর দিল্লি পুরসভাতেও ক্ষমতা হারাতে চলছে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ভোটে দিল্লির তিনটি পুরসভা মিলিয়ে মোট ২৭২টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ১৮১টিতে। আপ পেয়েছিল ৪৮ এবং কংগ্রেস ২৭টি ওয়ার্ড। এ বার তিনটি পুরসভা এক হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

হিমাচল প্রদেশের ফল নিয়ে চাপে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসও। — গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

দিল্লির পুরভোটে প্রথম থেকেই প্রশ্ন ছিল, টানা চতুর্থ বার ক্ষমতা দখল, না কি বিজেপির ‘দুর্গ’ ভেঙে এ বার দিল্লি পুরনিগমে প্রথম বার ঢুকে পড়বে পঞ্জাব দখলের পরে চাঙ্গা আপ। গত ১৫ বছর দিল্লির পুরনিগমে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। এই দেড় দশকে পর পর দু’বার দিল্লির মসনদে বসছেন কেজরীওয়াল। শুধু সরকার চালানোই নয়, সংগঠনও মজবুত করেছে আপ। এ বার যখন তিন পুরসভা এক করে দেওয়া হল, তখনই অনেকে দাবি করেছিলেন, লড়াই ‘কঠিন’ বুঝেই ওই পথ নিয়েছে বিজেপি। দিল্লির ভোট রাজনীতি যাঁরা বোঝেন, তাঁদের দাবি, রাজধানী শহরে আর্থিক ভাবে উচ্চবিত্ত ও উচ্চবর্ণের ভোটই এখন বিজেপির সম্পদ। অন্য দিকে, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে আপের আধিপত্য বেড়েছে। পাশাপাশিই বহু দিন দিল্লির ক্ষমতায় না থাকা বিজেপির ভিত খানিকটা দুর্বল হয়েছে।

বুথফেরত সমীক্ষায় বিজেপির হারের ইঙ্গিতের পিছনে আরও যে কারণগুলি রয়েছে, সেগুলি হল দিল্লি সরকারের কাজ। কেজরীবালের সরকার অনেক প্রকল্পই এনেছে মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের কথা ভেবে। বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। প্রতি রবিবার পাড়ায় পাড়ায় মহল্লা ক্লিনিকে এমসের চিকিৎসকদের নিয়ে এসে চিকিৎসা করানো বা পঠনপাঠনের স্কুল চালু করা তার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু দিল্লির তিনটি পুরসভা গত কয়েক বছর ভাল করে কাজ করতে পারেনি। তবে অভিযোগ, বিজেপির হাতে থাকা পুরসভাগুলি পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পায়নি রাজ্যের আপ সরকারের থেকে। সরকার বনাম পুরনিগম সংঘাত থেকে মুক্তি চেয়ে আপের ‘ডবল ইঞ্জিন’ চাইতে পারেন দিল্লির বাসিন্দারা।

দিল্লিতে আপের মুখে হাসি ফুটলেও হিমাচল বা গুজরাতে তেমন সম্ভাবনা কম। হিমাচল নিয়ে খুব বেশি আশা না করলেও গুজরাতে বড় সাফল্যের স্বপ্ন দেখেছিল আপ। কিন্তু বুথফেরত সমীক্ষা তেমন ইঙ্গিত দেয়নি। হিমাচল তাদের শূন্যহাতে ফেরাতে পারে। আর গুজরাতে সর্বোচ্চ ২১টি আসন পাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। যার জেরে আপের জাতীয় রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি মেলা ছাড়া আর কিছুই প্রাপ্তি হবে না।

সব সমীক্ষাই বিজেপিকে এগিয়ে রেখেছে গুজরাতে। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

তবে হিমাচল প্রদেশের অঙ্ক আলাদা। গত ৩৭ বছরে এই রাজ্যে কোনও দল পর পর দু’বার ক্ষমতায় আসতে পারেনি। এ বারের ভোটে সেই ‘রেকর্ড’ ভাঙতে মরিয়া বিজেপি স্লোগান তুলেছিল ‘রাজ নহি রেওয়াজ বদলো’ (ক্ষমতার বদল নয়, প্রথা বদল করো)। কিন্তু সেই স্লোগানে জয় যে সহজ নয়, তার ইঙ্গিত মিলেছে বুথফেরত সমীক্ষায়। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো বিষয় তো আছেই, সেই সঙ্গে এই রাজ্যে আপেলের ‘ন্যায্য’ দাম না পাওয়া, সারের অপ্রতুলতার মতো অভিযোগও চিন্তা শাসকশিবিরের কাছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের ৬৮টির মধ্যে অন্তত ২০টি আসনে দলের মধ্যে বিদ্রোহের মুখে পড়তে হয়েছিল বিজেপিকে। এর পরেও বিজেপি জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে সরকার গড়তে পারলে তাকে বড় সাফল্য হিসাবেই ধরতে হবে। পর পর দু’বার জেতার নজির তৈরি হবে দলের সভাপতি জেপি নড্ডার রাজ্যে। যে কারণে বিজেপির কাছে হিমাচল ‘সম্মানের লড়াই’ও বটে।

বাকি রইল গুজরাত। পাঁচ বছর আগে বিজেপি পেয়েছিল ৯৯টি আসন। সেখানে এ বার সর্বনিম্ন ১২৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের জয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। আর সর্বোচ্চ ১৫০। কংগ্রেস আটকে থাকতে পারে ১৯ থেকে ৪৩টির মধ্যে। যে কংগ্রেস গত বিধানসভা ভোটে ১৬টি আসন বাড়িয়ে ৬১ হয়েছিল, গুজরাতে তার এ বার শক্তিক্ষয়ের ইঙ্গিত। সমীক্ষা অনুযায়ী, আপ পেতে পারে সর্বোচ্চ ২১টি আসন। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আপ গুজরাতে এসে কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দিতে পারে। সেটা হলে বিজেপির নাকের বদলে নরুণ প্রাপ্তি বলা যেতে পারে। দিল্লি পুরনিগমে হারলেও গুজরাতে সহজ ও শক্তিবৃদ্ধির জয়।

গুজরাতে যে বিজেপির ফল ভাল হতে পারে, সে আঁচ নির্বাচন-পর্বের গোড়া থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। প্রচারে সে ভাবে লড়াকু ভঙ্গিতে হিসাবে দেখা যায়নি কংগ্রেস বা আপ-কে। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্যে জানকবুল লড়াইয়ে ছিল বিজেপি। মোদী-শাহ প্রচারে অনেক সময় দিয়েছেন। ২০০২ সালের নির্বাচনে ১২৭টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। গোধরাকাণ্ডের পরে সেটাই ছিল প্রথম নির্বাচন। তার পরে আড়াই দশক ক্ষমতায় থাকলেও রাজ্যে বিজেপির বিধায়কের সংখ্যা ক্রমশ কমেছে। ২০১৭ সালে কংগ্রেস ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছে। সেই ক্ষত মোকাবিলায় কসুর করেনি বিজেপি। মাঝপথে মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement