ন্যাশনাল হেরাল্ড অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে নিয়মিত নিশানা করছেন নরেন্দ্র মোদী।
অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রকে কি কেউ গাঁধী পরিবারকে সাহায্য করছে? আয়কর দফতরের একটি নির্দেশিকা ঘিরে এমন প্রশ্নেই এখন সন্দেহের মেঘ নর্থ ব্লকের অলিন্দে।
ন্যাশনাল হেরাল্ড অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে নিয়মিত নিশানা করছেন নরেন্দ্র মোদী। জনসভায় গিয়ে বলছেন, ‘মা-বেটা’ জামিনে বাইরে রয়েছেন। আজ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও এই মামলার প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেসকে বিঁধেছেন। সুপ্রিম কোর্টে ৮ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে আয়কর দফতরের ৩১ ডিসেম্বরের একটি নির্দেশিকা ঘিরে জলঘোলা শুরু হয়েছে মোদী সরকারের অন্দরমহলে। কারণ ওই নির্দেশিকায় কংগ্রেস নেতাদের সুবিধা হয়ে যেত বলে অভিযোগ। ন্যাশনাল হেরাল্ড অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালে গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ দাঁড়াত না।
শুক্রবার ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করেছে আয়কর দফতর। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ এমন নির্দেশিকা জারি হয়েছিল কেন?
বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী দাবি তুলেছেন, এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক। কারণ ওই নির্দেশিকায় অ্যাসোসিয়েটেড জার্নাল থেকে ইয়ং ইন্ডিয়ানকে ন্যাশনাল হেরাল্ডের মালিকানার শেয়ার হস্তান্তরকে পুরো ‘ক্লিন চিট’ দেওয়া হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে স্বামীর আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক সুবিদিত। স্বামীর প্রশ্ন, ‘‘অর্থমন্ত্রীর স্তরে কি এই নির্দেশিকা জারির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল?’’ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ঘনিষ্ঠ কোনও অফিসার এর পিছনে রয়েছেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
আরও পড়ুন: হ্যাল নিয়ে সরব রাহুল, জবাব দিলেন নির্মলাও
সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তাঁরাই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আয়কর দফতরের এই নির্দেশিকা নিয়ে অভিযোগ জানান। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশেই ৪ জানুয়ারি রাতে ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা হয়। আয়কর দফতর মেনে নেয়, অভিযোগ পেয়েই প্রত্যাহার হয়েছে। তা ছাড়া বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। ঘটনাচক্রে, ওই দিন রাতেই কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল ও বিবেক তাঙ্খা সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, এই নির্দেশিকার সুবাদে যে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় এত দিন কংগ্রেস নেতাদের হেনস্থা করা হচ্ছিল, তা আর দাঁড়াচ্ছে না।
আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে তৈরি অখিলেশ
অ্যাসোসিয়েটেড জার্নাল (এজেএল) প্রকাশ করে কংগ্রেসের মুখপাত্র ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা। লোকসানে পড়া সংস্থাটি কংগ্রেসের ঋণ নিয়ে চলছিল। ২০১০-এ এজেএল-এর মালিকানা হাতে তুলে নেয় সনিয়া-রাহুলের তৈরি ইয়ং ইন্ডিয়ান। কংগ্রেসের ঋণকে শেয়ারে বদলে ফেলা হয়। তাতেই অভিযোগ ওঠে, কংগ্রেসের টাকায় গড়ে তোলা এজেএল-এর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি সনিয়া-রাহুলের ব্যক্তিগত মালিকানায় চলে এল। সুব্রহ্মণ্যম স্বামী তাঁদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলা করেন। কংগ্রেসের যুক্তি, ইয়ং ইন্ডিয়ান অলাভজনক সংস্থা। তা থেকে সনিয়া, রাহুল বা অন্য কারও ব্যক্তিগত মুনাফার প্রশ্ন নেই। ক’দিন আগেই দিল্লি হাইকোর্ট এজেএল-কে হেরাল্ড হাউস ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আজ ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছে কংগ্রেস।
আয়কর দফতরের ৩১ ডিসেম্বরের নির্দেশিকায় আয়কর আইনকে ব্যাখ্যা করে বলা হয়, ওই ধরনের লেনদেনে কর ফাঁকির প্রশ্ন নেই। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের মন্তব্য, ‘‘সরকার যখন বুঝতে পারল, ওই নির্দেশিকায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মামলা দাঁড়াচ্ছে না, তখন সরকারের নির্দেশে তা প্রত্যাহার হল। এর পিছনে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্যই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’