প্রতীকী ছবি।
লোকসভা ভোটের আগে ফ্ল্যাট-বাড়ির ক্রেতাদের জন্য বিরাট উপহার।
মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে থাকা ফ্ল্যাটে জিএসটি-র হার ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হল। পাশাপাশি দামি ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রেও জিএসটি এখনকার ১২ শতাংশ থেকে কমে হচ্ছে ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে থাকা ফ্ল্যাটের সংজ্ঞাও বদলানো হয়েছে। ৪৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দামের ফ্ল্যাটকে এখন থেকে সাধ্যের মধ্যে থাকা ফ্ল্যাট হিসেবে ধরা হবে। মেট্রো শহরের ক্ষেত্রে তার মাপ হবে সর্বাধিক ৬০ বর্গমিটার। অন্যান্য শহরের ক্ষেত্রে ৯০ বর্গমিটার। তবে প্রোমোটারেরা কাঁচামালে মেটানো কর ফেরত বা ‘ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট’-এর সুবিধা পাবেন না। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
আজ জিএসটি পরিষদের এই সিদ্ধান্ত এক দিকে যেমন ফ্ল্যাট-বাড়ির ক্রেতাদের জন্য সুখবর, তেমনই প্রোমোটার বা আবাসন নির্মাতাদের জন্যও সুরাহা। কারণ ফ্ল্যাট-বাড়ির উপরে জিএসটি-র বোঝা কমলে ফ্ল্যাটের দাম কমবে বলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির আশা। সে ক্ষেত্রে বিক্রি বাড়বে। নোট বাতিল এবং জিএসটি-র ধাক্কায় আবাসন ক্ষেত্র ধুঁকছিল। ফ্ল্যাটের বিক্রি বাড়লে সেই আবাসন ক্ষেত্র চাঙ্গা হবে। অ্যানারক প্রপার্টি কনসালট্যান্টের চেয়ারম্যান অনুজ পুরীর হিসেবে, দেশের প্রধান সাতটি শহরে ৫.৮৮ লক্ষ নির্মীয়মান ফ্ল্যাট অবিক্রিত পড়ে রয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের আশা, আজকের সিদ্ধান্তে শহরে ফ্ল্যাট-বাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখা নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মুখে হাসি ফুটবে। সেই ভোটব্যাঙ্কের মন জয়ের লক্ষ্যেই আজ জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্তের পরে জেটলি বলেন, ‘‘এতে সকলের জন্য বাড়ির লক্ষ্য পূরণ হবে। নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণির উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।’’
জিএসটি পরিষদের সভায় অরুণ জেটলি। রবিবার। ছবি: পিটিআই
মধ্যবিত্তকে এই সুরাহা পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। কেন্দ্রের প্রস্তাব ছিল, মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে থাকা ফ্ল্যাটে জিএসটি-র হার ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ হোক। কিন্তু অমিতবাবুর যুক্তি ছিল, এতে মধ্যবিত্ত ক্রেতার উপর বোঝা বাড়বে। কারণ আদতে এখনই ১ শতাংশ হারে জিএসটি চাপে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে শতকরা ৭০ ভাগ ফ্ল্যাটের দাম ৪০ লক্ষ টাকার নীচে।
আরও পড়ুন: স্বেচ্ছা-পিএফে কাটাতে পারেন বাড়তি টাকা
একই ভাবে দামি ফ্ল্যাটে জিএসটি কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব নিয়েও আপত্তি তুলেছিলেন অমিত। তিনি একে ৫ শতাংশে রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আজ জিএসটি পরিষদের বৈঠকে অধিকাংশ রাজ্যের অর্থমন্ত্রীই অমিত মিত্রকে সমর্থন করেন। জেটলিও তাঁর যুক্তি মেনে নেন। বৈঠকের পর আজ অমিত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেই এই দাবি তুলেছিলাম। বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত তা কাল ভাবে— তা আবার প্রমাণিত হল।’’
তবে কাঁচামালে মেটানো কর ছাড় তুলে দেওয়ার ফলে নগদে কারবার, কালো টাকার লেনদেন, হাওয়ালা লেনদেন আবার ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অমিত মিত্র। তা ঠেকাতে একটি প্রস্তাব হল, আবাসন নির্মাতাদের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল নথিভুক্ত ডিলারদের থেকে কিনতে হবে। কিন্তু তাতেও জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে অমিতের যুক্তি। জেটলিও তা মেনে নিয়েছেন। ঠিক হয়েছে, আমলাদের কমিটি আলোচনা করে ১০ মার্চের মধ্যে খসড়া বিধি তৈরি করবে। তার পরে ভিডিয়ো কনফারেন্সে জিএসটি পরিষদের আলোচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।