শ্রীনগরের বাজারে হামলার পুর নিরাপত্তা কর্মীরা। ছবি- টুইটার
গত মাসেই দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের ফল বেরিয়েছে। বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে রাফিয়া পাশ করেছিল ৯৩ শতাংশ নম্বর নিয়ে। বাবা নাজ়ির আহমেদ টিন্ডা স্বপ্ন দেখছিলেন ছোট মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবেন। দারিদ্র সত্ত্বেও মেয়ের লেখাপড়ার জন্য যথাসাধ্য খরচের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু আজ সকালে হাসপাতাল থেকে আসা একটা ফোনে সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে গিয়েছে নাজ়ির পরিবারের।
গত কাল শ্রীনগরের ব্যস্ত বাজারে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন বছর উনিশের রাফিয়া নাজ়ির। তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করেও বাঁচানো যায়নি। শ্রীনগরের এসএমএইচএস হাসপাতালে আজ সকালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
রাফিয়ার আত্মীয়া। নিজস্ব চিত্র
হজরতবালের নাজ়িরদের দু’কামরার ছোট্ট বাড়িতে ভিড় উপচে পড়ছে। রাফিয়ার বাবা নাজ়ির আহমেদের কার্পেটের ব্যবসা সন্ত্রাস ও অতিমারিতে বিধ্বস্ত উপত্যকায় তত ভাল চলে না। সংসার চালাতে দোকানে কাজ করেন রাফিয়ার এক দাদা, সুহেল হুসেন। তাঁর আরও এক দাদা ও দিদি রয়েছেন।
গত কাল মা ফাহমিদা বেগম ও দিদি ফারহানা নাজ়িরের সঙ্গে বাজারে গিয়েছিলেন রাফিয়া। আচমকা বোমা বিস্ফোরণে জখম হন তিন জনেই। কিন্তু রাফিয়ার আঘাত ছিল সবচেয়ে গুরুতর। তাঁর মা ও দিদিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ছোট বোনের মৃত্যুতে ফারহানা শুধু বলেন, ‘‘বোনের থেকেও বেশি ও আমার প্রিয় বন্ধু ছিল।’’
হামলার ঘটনা ধরা পড়েছে বাজারের সিসি ক্যামেরায়। এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। গত কাল ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন মহম্মদ আসলাম নামে এক বয়স্ক ব্যক্তি।
রাফিয়ার দাদা সুহেল বলেন, ‘‘রাফিয়া যাতে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হতে পারে, তার জন্য আমার পরিবার সব রকমের চেষ্টা করছিল। আমি নিজে দোকানে কাজ করতাম। চাইতাম সব রকম ভাবে ওকে সাহায্য করতে। আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল ওর উপরে।’’ নাজ়ির আহমেদও বললেন, ‘‘খুব বুদ্ধিমান আর পরিশ্রমী মেয়ে ছিল। আমার সব স্বপ্ন ছারখার হয়ে গেল। কেন যে ওকে আমাদের থেকে ঈশ্বর ছিনিয়ে নিলেন!’’