বিতর্কিত সেই রকেট লঞ্চার (বাঁ দিকে)। উদ্ধার হওয়া ‘চকলেট বোমা’।
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) দিল্লি উত্তরপ্রদেশের ঘাঁটি থেকে জঙ্গিদের গ্রেফতার করতেই প্রশ্নের মুখে আইএস সম্পর্কে সরকারের এত দিনের অবস্থান।
নরেন্দ্র মোদী সরকার শুরু থেকেই বলে এসেছে, এ দেশে আইএস-এর কোনও ঘাঁটি নেই। এ যাবৎ কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, কিছু বিপথগামী যুবক আইএস-এর ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ‘ধর্মযুদ্ধে’ অংশ নিতে সিরিয়ায় গিয়েছে। কেরল ও কাশ্মীরে এদের আনাগোনার কথা বলা হলেও এত বড় আকারে ঘাঁটি গেড়ে বসার কথা কখনও সামনে আসেনি। উত্তরপ্রদেশে কিছু দিন আগে আইএস সেলের সন্ধান মিলেছিল। তখন তাদের সাংগঠনিক অস্তিত্বের কথা স্বীকার করলেও তা যে এত বড় আকারে, তা তখন বলা হয়নি।
আবার গত কাল দাবি করা হয়েছিল, প্রজাতন্ত্র দিবসের সময়ে দিল্লিতে হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল জঙ্গিরা। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের একাংশ আজ দাবি করে, আগামী মাসে প্রয়াগরাজে শুরু হওয়া কুম্ভমেলাও জঙ্গিদের নিশানায় ছিল। রাজ্যের সন্ত্রাস দমন বাহিনীর প্রধান ভি কে সিংহকে জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। এনআইএ জানিয়েছে, গত চার মাস ধরে ‘হরকত উল হর্ব ই ইসলাম’-এর মডিউল উত্তরপ্রদেশে সক্রিয় ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, চার মাস ধরে ওই জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় থাকার অর্থ, আদিত্যনাথের পুলিশ তাদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। পাল্টা যুক্তিতে অবশ্য বলা হয়েছে, শুরু থেকেই জঙ্গিরা গোয়েন্দাদের নজরে ছিল। প্রমাণ জোগাড়ের জন্যই তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। তবে গ্রেফতারির পরেও ভারতে আইএস-এর বিস্তার নিয়ে গোয়েন্দাদের ধন্দ রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাংশের বক্তব্য, আইএসের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত যুবকদের সিরিয়ায় পাঠানো ‘মডিউলে’র উদ্দেশ্য হতে পারে। ঘাঁটি শক্ত করার পরেই সাধারণত হামলা চালিয়ে থাকে আইএস। আবার অন্য অংশের বক্তব্য, আইএস ‘লোন উল্ফ’ বা একা হামলাতেও বিশ্বাস করে। এ ক্ষেত্রেও আত্মঘাতী জঙ্গি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে।
তবে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের গুণগত মান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হতেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, গোটাটাই কেন্দ্রের নজরদারির সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতে করা হয়নি তো! তাঁদের আরও প্রশ্ন, অর্থ, প্রযুক্তি বা মেধাবী সদস্যের অভাব নেই মাওবাদীদের মধ্যে। তাঁরা রকেট লঞ্চার তৈরি করে উঠতে পারেনি। আর সেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রের সাহায্য নিয়ে কয়েকজন জঙ্গি তা তৈরি করে ফেলল? সরকারের পাল্টা যুক্তি, বিরোধীদের একাংশ কোনও গ্রেফতারির পরেই প্রমাণের ফাঁক খোঁজে। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, ‘‘কোনও জঙ্গি গ্রেফতার হলেই সংবাদমাধ্যম ধৃতের মায়ের কাছে পৌঁছে যায়। কোনও মা বলবেন তাঁর ছেলে সন্ত্রাসবাদী?’’