চূড়ান্ত এনআরসিতে যাঁদের নাম থাকবে না, তাঁদের বিরুদ্ধেই ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ‘বিদেশি’ সন্দেহে মামলা চালাবে। কিন্তু সেই সময়ে যদি তাঁদের খুঁজে না পাওয়া যায়! এই আশঙ্কা থেকেই সরকারের প্রস্তাব, এনআরসির খসড়াছুটদের হাতের ছাপ, চোখের কর্নিয়ার ছবি তুলে রাখা হোক।
আর তা নিয়েই চিন্তায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। সুপ্রিম কোর্ট এনআরসি প্রকাশের চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেও ওই সময়ের মধ্যে ৪০ লক্ষ খসড়াছুটের বায়োমেট্রিক করানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাব রয়েছে। ফলে অধিকাংশ মানুষই বায়োমেট্রিক পরিচয় লিপিবদ্ধ করানোর নোটিস পাননি এখনও। নোটিস পেলেও নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থেকেও কাজ হচ্ছে না। খসড়াছুটদের বায়োমেট্রিক করানোর সরকারি প্রস্তাব মেনে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, আধার কার্ড যাঁদের রয়েছে, তাঁদের আধার নম্বর লিখে দিলেই হবে। কিন্তু কাজ শুরু হতেই নতুন নির্দেশ, আধার থাকলেও প্রত্যেক খসড়াছুটকে ১৫ জুনের মধ্যে ‘বায়োমেট্রিক এন্ট্রি’ করাতে হবে।
এনআরসি কোঅর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা বলেন, বিষয়টি রাজ্য সরকার দেখছে। বায়োমেট্রিক সেন্টারের কর্তাদের জবাব, আধারের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। আধারের প্রক্রিয়াটাই শুধু মানা হচ্ছে। শুনানির দিনেই খসড়াছুটদের বায়োমেট্রিক করানোর কথা থাকলেও তা হয়নি। পরে নোটিস দিয়ে বায়োমেট্রিক করানোর জন্য ডাকা হচ্ছে। সরকারি বক্তব্য, উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী মিলছে না।
এ দিকে আজই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে বিদেশি ঘোষিত কারও নাম নাগরিকপঞ্জির অন্তর্ভুক্ত হলেই তিনি ভারতীয় হয়ে যাবেন না। এনআরসির উপরে সর্বদা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রায় গ্রহণযোগ্য হবে। কারণ এনআরসি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, কিন্তু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ আইনি প্রক্রিয়া। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে আব্দুল কুদ্দুস বনাম ভারত সরকারের মামলায় বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ও বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। বাদিপক্ষের আইনজীবি কপিল সিব্বল দাবি করেন, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করার পরেও যাঁদের নাম এনআরসিতে উঠেছে তাঁদের ক্ষেত্রে ‘অ্যাপিলেট ফোরাম’ গঠন করা হোক। বেঞ্চ আবেদন নাকচ করে দেন। অবশ্য বেঞ্চ জানায়, কোনও ঘোষিত বিদেশির নাম বা তাঁর রক্তের সম্পর্কের কারও নাম এনআরসির অন্তর্ভুক্ত হলে তার ভিত্তিতে, বংশবৃক্ষ সংক্রান্ত বা অন্য অতিরিক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে ওই মামলার ফের শুনানি চালানোর আবেদন করা যাবে।