ব্যবসায় পাল্লা দিয়ে মুকেশ অম্বানীতে টপকে এখন দেশের সব থেকে ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি। শুধু দেশেরই না, বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী আদানি এখন এশিয়ারও ধনীতম ব্যক্তি। তবে নতুন একটি সমীক্ষা বলছে, আদানি গোষ্ঠীর সাফল্যের চাকচিক্যের পিছনে রয়েছে পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা।
এই সমীক্ষা অনুযায়ী, এই মুহূর্তে বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি আদানির ঋণের পরিমাণ প্রায় ২.২২ লক্ষ কোটি টাকা।
হিসাব বলছে, গত বছর বিশ্ব বাজারে আদানির ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৫২ লক্ষ কোটি টাকা। এক বছরে এই ঋণের পরিমাণ তো কমেইনি, উল্টে ৪২ শতাংশ বেড়ে ২.২২ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে। এই ঋণের ভার মারাত্মক হতে পারে বলে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত।
বিদেশি আর্থিক লগ্নি সংক্রান্ত পরামর্শদাতা সংস্থা ‘ক্রেডিট সাইট’-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসার বাড়বাড়ন্তের পিছনে রয়েছে ব্যাপক আর্থিক দেনা। এই দেনার কারণে আদানি গোষ্ঠীকে বিপদে পড়তে হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে এই সমীক্ষায়।
বর্তমানে বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পা বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী। তার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ এবং গ্রিন এনার্জিও রয়েছে। আদানির এই রমরমা দেশ-বিদেশের খ্যাতনামী ব্যবসায়ী সংস্থারও নজর কেড়েছে।
‘ক্রেডিট সাইট’-এর এই সমীক্ষা অনুযায়ী, ব্যবসা বৃদ্ধি করতে আদানি গোষ্ঠী যে ঋণ নিয়েছে, তাতে বড় বিপদে পড়তে পারে সংস্থা।
সমীক্ষা আরও বলছে, আদানির বিদেশি মুদ্রায় নেওয়া ঋণের পরিমাণও অনেক। সূত্রের খবর, বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) কাছ থেকে নতুন করে প্রায় ১৪ হাজার কোটির ঋণ নেওয়ার আবেদন করেছেন আদানি। এই নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে গ্রিন এনার্জি সংক্রান্ত ব্যবসাও। এর ফলে ঋণের বোঝা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইতিমধ্যেই পলিভিনিল ক্লোরাইড প্ল্যান্ট তৈরির কাজে লেগেছে আদানি গোষ্ঠী। কয়লা থেকে পলিভিনিল ক্লোরাইড উৎপাদন করার লক্ষ্যেই গুজরাতের মুন্দ্রায় তৈরি হবে এই প্ল্যান্ট।
অন্য একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, আদানি গোষ্ঠীর অন্তর্গত সমস্ত সংস্থাগুলির মধ্যে আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেডই সব থেকে বেশি ঋণগ্রস্ত। শুধু তাই নয়, এশিয়ার মধ্যেও সব থেকে ঋণগ্রস্ত সংস্থার তালিকায় এই সংস্থার স্থান দ্বিতীয়। প্রথমে রয়েছে চিনের একটি সংস্থা।
কিন্তু কেন এত ঋণ নিচ্ছে আদানি গোষ্ঠী? অনেকে এর জন্য আদানি গোষ্ঠীর সব ব্যবসায়ির ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের কারণকেই দায়ী করছেন।
আবার অনেকের মতে, দীর্ঘ দিন ধরেই পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ব্যাপারে মাথা ঘামাচ্ছেন গৌতম। আর সেই সংক্রান্ত একাধিক বিনিয়োগের ফলেই এই ঋণের অঙ্ক বেড়েছে।
একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠছে, কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার নামে এত টাকার ঋণ থাকা দেশের অর্থনীতির উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে।
এত টাকার ঋণের বোঝা কাঁধে চাপিয়ে সম্প্রতি আবার দেশের টেলিকম সেক্টর এবং মিডিয়াতেও পা রেখেছেন আদানি। এ নিয়ে যথেষ্ট শোরগোলও পড়েছে। ৫জি নিলামেও অংশ নিয়েছিলেন আদানি।
প্রসঙ্গত, ব্যাপক ঋণের ভারে নুয়ে পড়ে এর আগেও বিভিন্ন সংস্থাকে দেউলিয়া হতে দেখা গিয়েছে। ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে নীরব মোদী এবং বিজয় মালিয়ার মতো ব্যবসায়ীকেও দেশ ছাড়তে দেখেছে সাধারণ মানুষ।
উল্লেখযোগ্য যে, এত ঋণ সত্ত্বেও কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্য সরকারও আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগের প্রতি আস্থা রেখেছে। আদানি গোষ্ঠী নতুন ভারতের রূপ গড়তেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে, এই আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীও।