তিনিই আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন, দাবি বিজেপি নেতা প্রমোদ সবন্তের। ফাইল চিত্র।
ভোট পরবর্তী বুথফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত মিলেছিল। বৃহস্পতিবার গোয়া বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার প্রথমার্ধে বিজেপি-কংগ্রেসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ছবি তার সঙ্গে মিলে গেলেও শেষমেশ এগিয়ে গেল গেরুয়া শিবিরই। ৪০ আসনের বিধানসভায় সরকার গঠনের ‘জাদু সংখ্যা’ ২১। সেই অঙ্কে না-পৌঁছলেও নির্দলদের সমর্থন তাদের সঙ্গে আছে দাবি করে গোয়ার রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানাচ্ছে বিজেপি।
বেলা তিনটে পর্যন্ত যা ফলাফল, তাতে গোয়ায় বিজেপি পেয়েছে ২০টি আসন। ‘জাদু সংখ্যা’-র থেকে মাত্র একটি কম। কংগ্রেস পেয়েছে ১১টি আসন। কংগ্রেসের জোটসঙ্গী গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি পেয়েছে ১টি আসন। মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির (এমজিপি) পেয়েছে ২টি আসন। অরবিন্দ কেজরীবালের আপ পেয়েছে ২টি আসন। ৪টি আসন পেয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা। তিন মাস আগে পদার্পণ-করা তৃণমূল একটি আসনও পায়নি। ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে যাচ্ছে, তাতে সরকার গঠনের বিষয়ে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই রাজ্যপাল পিএস শ্রীধরণ পিল্লাইয়ের কাছে যাচ্ছে বিজেপি।
পশ্চিম ভারতের এই সমুদ্রশহরে হাড্ডাহাড্ডি ল়ড়াই হওয়ার কথা ছিল কংগ্রেস-বিজেপির। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেল, কংগ্রেস অনেকটা পিছিয়েই রয়েছে বিজেপি-র থেকে।
বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার শুরু থেকেই জোটসঙ্গী এমজিপি-র জয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলেছিল তৃণমূল। এমজেপি-র উপর নজর ছিল বিজেপি-রও। তবে পদ্মশিবিরের দাবি, অন্য কাউকে দরকার হবে না। এবার নির্দলের সমর্থনেই সহজে সরকার গড়ে নেবে তারা। গোয়ায় বিজেপি-র বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা প্রমোদ সবন্তের মন্তব্য, ‘‘এই জয়ের কৃতিত্ব দলের কর্মীদের। গোয়ায় বিজেপি সরকার গড়ছে।’’ তিনিই জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলেই সরকার গঠনের দাবি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন।
২০১৭ সালের গোয়া বিধানসভা ভোটের ফলাফল বলছে, ৪০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে জিতেছিল বিজেপি। কংগ্রেস জিতেছিল ১৭টি আসনে। এমজিপি জিতেছিল ৩টি আসনে। গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি এবং নির্দলরা পেয়েছিল ৩টি করে আসন। শরদ পওয়ারের এনসিপি পেয়েছিল ১টি আসন।
পাঁচ বছর আগের বিধানসভা ভোটে ১৭টি আসন পেয়ে একক গরিষ্ঠতা নিয়েও শেষ পর্যন্ত সরকার গড়তে পারেনি কংগ্রেস। মাত্র ১৩টি আসন পেয়েও দীপক ধাভেলিকরের নেতৃত্বাধীন এমজিপি পার্টি, গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি এবং নির্দল বিধায়কদের নিয়ে সরকার গড়ে ফেলেছিল বিজেপি। গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপি-র নেতা তথা তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। ক্যানসার রোগাক্রান্ত পরীকরের অকালমৃত্যুর পর গোয়ায় বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী করেছিল প্রমোদকে। তাঁর নেতৃত্বেই এবার বিধানসভা ভোটে লড়েছে পদ্মশিবির।
এবার সেই এমজিপি-র সঙ্গেই জোট করে গোয়ায় প্রথম বার নির্বাচন লড়েছিল তৃণমূল। সূত্রের খবর, ঘোড়া কেনাবেচা আটকাতে প্রার্থীদের ভোটগণনার আগেই হোটেলে ‘বন্দি’ করেছিল এমজিপি। গোয়ায় বিজেপি-কে আটকাতে দিল্লি ও পঞ্জাবে তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী আপ-এর সঙ্গেও জোটে যেতে রাজি ছিল গোয়া কংগ্রেস। কিন্তু বিজেপি-র দাবি ছিল এবং আছে যে, সেসবের আর দরকার নেই। সরকার তারাই গড়ছে।
তিনিই কি আবার গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হবেন? সবন্তের জবাব, ‘‘আমার নেতৃত্বেই গোয়ায় ভোট হয়েছে। আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতি থেকে রাজ্য সভাপতি সবাই একাধিক বার বলেছেন, আমার নেতৃত্বেই গোয়ায় সরকার হবে।’’ এখন দেখার, রাজ্যপাল সবন্ত এবং তাঁর দলকে বিধানসভায় আস্থা প্রমাণের জন্য কবে ডাকেন। দেখারও এ-ও যে, তখন আরও কিছু বিধায়ক বিজেপি তাদের শিবিরে টেনে নিতে পারে কি না।