তোমাকেই এগোতে হবে, বলেন মা

ডিনারের মেনুটা মনে নেই। তবে আলোচনাটা যে শেষ পর্যন্ত তর্কে গড়িয়েছিল সেটা মনে আছে। ডিনারটা শেষ করেছিলেন? নাকি রেগে উঠে গিয়েছিলেন? আনন্দবাজারের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হাসতে শুরু করলেন শ্রেয়া।

Advertisement

সুজিষ্ণু মাহাতো

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৫:২৬
Share:

মা-মেয়ে। ছবি মানালি সিঙ্ঘলের সৌজন্যে।

ডিনারের মেনুটা মনে নেই। তবে আলোচনাটা যে শেষ পর্যন্ত তর্কে গড়িয়েছিল সেটা মনে আছে।

Advertisement

ডিনারটা শেষ করেছিলেন?

নাকি রেগে উঠে গিয়েছিলেন? আনন্দবাজারের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হাসতে শুরু করলেন শ্রেয়া।

Advertisement

শ্রেয়া সিঙ্ঘল। বছর চব্বিশের যে তরুণীর হাসিমুখটা আজ গোটা দেশ চেনে। সেই হাসি জয়ের হাসি। তাঁর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার জেরেই মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা। শীর্ষ আদালতের রায়, ওই ধারা অসাংবিধানিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন বাক্‌স্বাধীনতার জয় উদ্‌যাপন চলছে, তখন সত্যিই শ্রেয়ার মুখে তৃপ্তির হাসি।

তবে বছর তিনেক আগের ওই রাতটায় তাঁর মুখে হাসি ছিল না। “শি ওয়াজ ভেরি আপসেট”, বুধবার ফোনে বললেন শ্রেয়ার মা মানালি সিঙ্ঘল। মায়ের মনে পড়ল সেই ডিনার টেবিলের কথা। “২০১২-র নভেম্বর। তার কয়েক মাস আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। সেটা শ্রেয়ার মনে ছিল। তার পরে ওই দিন মহারাষ্ট্রে দুই তরুণীকে গ্রেফতারির খবর পেতেই ওর খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। খেতে বসেই আমাদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শ্রেয়া বারবার বলছিল, এটা নিয়ে কি কিছু করা যায় না? আমি বলেছিলাম, করতে গেলে তোমাকেই এগিয়ে আসতে হবে।”

শ্রেয়া এগিয়ে এসেছিলেন। আর মা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানালি ‘শ্রেয়া সিঙ্ঘল

ভার্সাস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’-র লড়াইয়ে প্রথম থেকেই মেয়ের পাশে ছিলেন। একটা গোটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটা ২১ বছরের মেয়ে! তিন বছর ধরে সেই লড়াইটা ছোট ছিল না।

আজ তাঁর ২৪ বছরের মেয়ের লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা দেশ। মানালি বলছিলেন, “আসলে আমার মেয়ে যে প্রজন্মের, সেই প্রজন্মের হাতেই এখন দেশের দায়িত্ব। সমস্ত স্তরে তরুণ প্রজন্ম দায়িত্ব নিচ্ছে, তা যথাযথ ভাবে পালন করছে। তা হলে সমাজ, দেশ বদলানোর কাজেই বা তারা

পিছিয়ে থাকবে কেন? তাদেরই তো ভবিষ্যত্‌ গড়তে হবে।”

তবে শ্রেয়ার মতে, এই জয় কেবল তরুণ প্রজন্মের নয়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সকলের। তাঁর কথায়, “আজকের দিনে জীবনের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ইন্টারনেট। সেটা নবীন-প্রবীণ সব প্রজন্মের লোকেরাই ব্যবহার করেন। ৬৬এ আইনে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছিলেন তাঁরাও তো সকলে তরুণ নন। এখন গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সব জায়গাতেই স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। যত দিন যাবে তা আরও বাড়বে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে মতপ্রকাশের এই স্বাধীনতা দরকার ছিল।”

তবে সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমার যুগে বেড়েছে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা। মাঝে মধ্যেই খবর মেলে, ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিতদের হাতে তরুণীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। কিন্তু ৬৬এ বাতিল করার ফলে এই ধরনের অপরাধে রাশ টানা যাবে না, মানতে নারাজ মা-মেয়ে দু’জনেই। তাঁদের মতে, দেশের আইনে এই ধরনের অপরাধ রুখতে যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। মানালির মন্তব্য, “আইন সব সময় মানুষের সাহায্যের জন্যই হওয়া উচিত। বিরোধিতার জন্য নয়। অপরাধ রুখতেও দেশের আইনে যথেষ্ট সংস্থান রয়েছে।”

আইন পড়া এখনও সম্পূর্ণ হয়নি শ্রেয়ার। কিন্তু তার আগেই যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা তাবড় আইনজীবীদের সারা জীবনের স্বপ্ন। শ্রেয়া জানাচ্ছেন, এটা কারও একার জয় নয়। ভারতের মতো বৈচিত্র্যে ভরা দেশে সকলের বাক্‌স্বাধীনতা স্বীকৃত হওয়া দরকার। তাই এই জয় সকলের। তবে হেসে এটাও স্বীকার করছেন “আমি যে সত্যিই সত্যিই এতটা করব, সেটা বোধ হয় প্রথমে কেউই ভাবেনি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement