পুরীর জগন্নাথ মন্দির
শুক্রবার পুরীর মন্দির খুলতেই প্রায় সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়েছিল। বছর শেষের ছুটিতে পুরীতে ভিড় করে জগন্নাথ দর্শনে ব্যর্থ হন বহু ভক্তই। এর পরে শনিবার সকালে মন্দির যথা সময়ে খুললেও ভিড়ে-ঠাসা মন্দির চত্বরে পুলিশের বিরুদ্ধে এক কিশোরীর সঙ্গে অশালীন ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার জনৈক ভক্ত মহিলার মন্দিরে ঢোকা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে এক পান্ডার টক্করের জেরে সেবায়েতদের একাংশ মন্দিরের ‘নীতি’ বা আচার পালনে অসম্মত হয়েছিলেন। ফলে, শুক্রবার দিনভর মন্দিরের দরজাই খোলেনি। তাতে প্রভু জগন্নাথদেবের দৈনিক কর্মসূচি পিছিয়ে গিয়েছিল প্রায় ১১ ঘণ্টা। সন্ধ্যায় মঙ্গল-আরতির পরে প্রভু প্রাতঃরাশ সারেন রাত ন’টা নাগাদ। তবে এর পরে যাবতীয় আচার দ্রুত সম্পন্ন করা হয়। এবং জগন্নাথদেব শুক্রবার রাত তিনটের মধ্যে শয্যাগত হন বলে পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি। এর পরে শনিবার ঠিক সময়েই মন্দির খোলা গেলেও দিনের শুরুতেই ভিড়ে এক কিশোরীকে ধাক্কাধাক্কি নিয়ে ফের বিতর্কের সূত্রপাত। তবে এ দিন আর মন্দিরের নির্দিষ্ট কর্মসূচি ব্যাহত হয়নি।
দু’দিন আগে মন্দিরের দর্শনার্থী এক মহিলা বিদেশিনি কি না, তা নিয়ে বিতর্ক বেঁধেছিল। তাঁর সঙ্গী পান্ডা ওই মহিলা ‘বাঙালি হিন্দু’ বলে দাবি করলেও পুলিশ বনাম পান্ডা হাতাহাতি ঠেকানো যায়নি। পরে এই নিগ্রহের প্রতিবাদে ওই সেবায়েত মন্দিরে তাঁর দায়িত্বপালনে অস্বীকার করেন। ফলে, খোলেনি মন্দিরের জয় বিজয় দরজা। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুরীর গজপতি মহারাজ দিব্যসিংহ দেব সব সেবায়েতের উদ্দেশে একটি আবেদন জানান। তাঁর বার্তা, সবার আগে জগন্নাথদেবের স্বার্থ। মন্দিরের জগন্নাথ সংস্কৃতির পরম্পরা অটুট রাখাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। মন্দির পরম্পরা অনুযায়ী, গজপতি রাজা নিজেই মন্দিরের প্রধান সেবায়েত। তিনি বলার পরে সব সেবায়েতরা ফের তাঁদের দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হন। কিন্তু তাও কিছু না কিছু বিপত্তি পুরীর মন্দিরে ঘটেই চলেছে।
এ দিন সকালে মন্দিরের গর্ভগৃহের কাছে ‘ভিতরকাঠে’ প্রার্থনার সময়ে জাজপুরের এক কিশোরীর সঙ্গে তাঁর কাছে দাঁড়ানো পুলিশকর্মী অভব্য ব্যবহার করে বলে যেমন অভিযোগ। পুরীর পুলিশ সুপার সার্থক ষড়ঙ্গীর আশ্বাস, ‘‘সিসি টিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত পুলিশকর্মী ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যায় করলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তবে সেই সঙ্গে আসন্ন বর্ষশেষ ও নতুন বছরের শুরুতে পুরীর মন্দিরে জনবিস্ফোরণ সামাল দেওয়াই পুলিশ-প্রশাসনের
বিশেষ মাথাব্যথা। মন্দিরের সরকার নিযুক্ত ম্যানেজিং কমিটির সদস্য তথা প্রবীণ সেবায়েত রামচন্দ্র দয়িতাপতি বলেন, ‘‘মন্দিরে এখন রোজ আড়াই লক্ষ ভক্ত ঢুকছেন। ৩১ ডিসেম্বর বা পয়লা জানুয়ারি প্রভুর দর্শনে ৪-৬ লক্ষ ভক্ত সমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।’’ এই বিশাল ভক্তসমাবেশে মন্দিরে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কিছু পদক্ষেপ করতে চলেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দির সূত্রের খবর, ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি ভক্তদের সিংহদ্বার দিয়ে মন্দিরে ঢুকতে হবে। এবং বেরোতে হবে মন্দিরে অন্য তিনটি দরজার কোনও একটি দিয়ে। বছরশেষে মন্দির চত্বর সুশৃঙ্খল রাখতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর।