ফিরোজ শাহ কোটলা দুর্গ
কলকাতার ডাকসাইটে ভূতসন্ধানী ভূতনাথ নন্দী নরহরিবাবুর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যদি ভূতের গ্যারান্টি থাকে তা হলে বাড়ির জন্য মেলা টাকা খরচ করতে তিনি প্রস্তুত! ওই ‘পাতালঘর’ উপন্যাসেই মুম্বইয়ের থিওজফিক্যাল সোসাইটির কিছু ‘আড়কাঠি’ও গরম পকেটে ভূতের বাড়ি খুঁজেছে। কিন্তু ‘ভূতের গায়ের আঁশও’ দেখতে পায়নি!
যুদ্ধ-ষড়যন্ত্র-খুন-গণহত্যার শাহী দিল্লিতে কিন্তু আপাতত ভূতই সরকারি ও বেসরকারি পর্যটন শিল্পের অন্যতম ভবিষ্যৎ! খুনি নদী, অগ্রসেন কি বাওলি, ফিরোজ শাহ কোটলা দুর্গ, খুনি দরওয়াজা, জামালি কামালি মসজিদের মত অসংখ্য ‘স্পট’-এ এখনও কান পাতলে নাকি শোনা যায় ‘তেনাদের’ অস্পষ্ট কান্না। কৃষ্ণপক্ষের রাতে ‘ভুলি ভাটিয়ারিন কা মহলে’র বাতাসে নাকি মিশে থাকে অতৃপ্ত আত্মার দীর্ঘশ্বাস।
অসংখ্য বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি দিল্লি সরকারের পর্যটন বিভাগ দু’বছর আগে শুরু করেছিল এই ভূত পর্যটন। এখন তা রমরম করে চলছে বলে জানাচ্ছেন দিল্লি পর্যটন বিভাগের জনসংযোগ প্রধান সুধীর সোব্দি। মধ্য দিল্লির বঙ্গভবনের কাছেই রয়েছে তুঘলকি আমলের ‘অগ্রসেন কি বাওলি’। একসময় যা বিশাল জলাধার ছিল, এখন তা শুকিয়ে স্থাপত্য নির্দশন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সুধীর জানাচ্ছেন,‘‘এমনটাই বলা হয় যে, ওই শূন্য কুয়ো নাকি রাতের বেলা মানুষকে নিজের ভিতরে টানে! অনেকের কানেই ধরা পড়ে কম্পন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লিতে এমন অনেক জায়গায় রয়েছে যেখানে ভুত থাক বা না থাক, রক্তাক্ত ইতিহাস এবং মিথ রয়েছে। পর্যটকদের সামনে সেই কেল্লা বা কবরখানা বা সৌধের ভিতরে লুকিয়ে থাকা অতীতকে সামনে নিয়ে আসা হয় হাঁটার সময়। বহু ক্ষেত্রে প্রমাণও হাজির করা হয়।’’
ভূতের উপস্থিতির ‘প্রমাণ’? এই ভুতুড়ে-হন্টনের সঙ্গে যুক্ত কর্তারা জানাচ্ছেন, সরাসরি ভূতের প্রমাণ দেওয়ার মতো কোনও বুজরুকি নয়। সৌধগুলিকে ঘিরে যে গল্পগাথা রয়েছে, তার ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণই দাখিল করা হয়। ‘‘বহু হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী দিল্লি। আমরা সেই কাহিনিগুলি অকুস্থলে দাঁড়িয়ে যথাসম্ভব ডিটেলসমৃদ্ধ করে বলি। বাকিটা পরিবেশ এবং কল্পনাশক্তির খেলা!’’
পাঁচশো থেকে পাঁচ হাজার— বহু রকম দামের ভূত পর্যটন রয়েছে দিল্লিতে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে কর্মরত পুনীত গুপ্তর কথায়, ‘‘প্রতি সপ্তাহে ভূত পর্যটনে যাওয়া, আমার কাছে নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামালি কামালিতে গিয়ে এমন অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা বলে বোঝানোর নয়।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘দিল্লিতে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যার কথা অনেকেই জানেন না। সে সব জায়গায় যাওয়াটাও একটা আকর্ষণ। যেমন রিজ অঞ্চলের উত্তরে রয়েছে ‘খুনি ঝিল’। ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই ঝিলটি গা ছমছমে। সিপাহী বিদ্রোহের সময় বহু ব্রিটিশ সেনাকে মেরে এখানে চুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় মানুষেরা এখানে সন্ধ্যার পর যেতে নিষেধ করেন। আর আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় মাঝরাতে!’’ একই ভাবে খুনি দরওয়াজা (বাহাদুর শাহ জাফরের ছেলেদের হত্যা করে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল এখানে), চোর মিনার (আলাউদ্দিন খিলজির শাসনে এখানকার ২২৫টি গর্তে তস্করদের মুন্ডু কেটে সাজিয়ে রাখা হত), ফিরোজ শাহ কোটলা দুর্গে (খন্ডহরে নাকি জিনের উপস্থিতি) মাঝরাতের গা ছমছমে অভিজ্ঞতার নেশায় বুঁদ এখন দিল্লিবাসী।