নটরাজন (বাঁ দিকে) ও বেঙ্কটেশনের (ডান দিকে) সঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলা ও ত্রিপুরা শূন্য হাতে ফিরিয়েছে। কেরল থেকে ঝুলিতে মাত্র এক! কেরলের পাশের তামিলনাড়ু সেখানে দিয়েছে চার সাংসদ। দক্ষিণের এই রাজ্যই আপাতত বামেদের জন্য মরূদ্যান!
ডিএমকে এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়ে এ বার দুর্দিনের বাজারে তামিলনাড়ু থেকে দু’টি করে আসন ঘরে তুলেছে সিপিএম এবং সিপিআই। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসা নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় জমানায় লোকসভায় কণ্ঠস্বর হিসেবে তামিল সাংসদদের উপরেই এখন ভরসা রাখছেন বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের লোকসভার নেতার পদও যেতে চলেছে তামিলনাড়ুর দখলে। সিপিএমের তিন চেনা ঘাঁটির বাইরে অন্য রাজ্য থেকে নির্বাচিত সাংসদদের বাম রাজনীতিতে এমন ‘গুরুত্ব’ সাম্প্রতিক কালে এই প্রথম।
কোয়ম্বত্তূর এবং মাদুরাইয়ের মতো দুই নামী কেন্দ্রে সাংসদ এ বার সিপিএমের। তার মধ্যে কোয়ম্বত্তূরের পি কে নটরাজন আগেও সংসদে গিয়েছিলেন। এ বার বিজেপি প্রার্থীকে নটরাজন হারিয়েছেন ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ১৪৩ ভোটে। মাদুরাইয়ে তরুণ মুখ এস বেঙ্কটেশন জয়ী হয়েছেন ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৩৯৫ ভোটে। নাগাপট্টিনাম কেন্দ্রে সিপিআই প্রার্থী এম সেলভারাজের জয়ের ব্যবধান আরও বেশি— ২ লক্ষ ১১ হাজার ৩৫৩। আর তিরুপুরে সিপিআইয়ের কে সুব্বারায়ন জিতেছেন ৯৩ হাজার ৩৬৮ ভোটে। নটরাজন ছাড়া বাকি তিন জনই হারিয়ে এসেছেন এডিএমকে প্রার্থীদের।
কেরলে ভরাডুবির সময়ে তামিলনাড়ুতে বাম সাফল্য কী ভাবে? সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য এম এ বেবির কথায়, ‘‘বিজেপি-বিরোধী পূর্ণাঙ্গ জোট হয়েছিল। বিজেপি এবং এডিএমকে-র বিরুদ্ধে ডিএমকে, কংগ্রেস এবং বামেরা মসৃণ বোঝাপড়া করতে পেরেছিল। যে সব জায়গায় বাম আন্দোলনের ভিত ছিল, সেখানেই আমরা প্রার্থী দিয়েছিলাম।’’ নির্বাচনী পর্যালোচনার জন্য দলের সদ্যসমাপ্ত পলিটব্যুরো বৈঠকে তামিলনাড়ুর সিপিএম নেতা জি রামকৃষ্ণনও তাঁদের আসন জয়ের জন্য জোটকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশিই তিনি বলেছেন, ওই রাজ্যের শিল্পাঞ্চলে বাম শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের ইতিহাস বেশ পুরনো। এখন সাংসদ পাওয়ার পরে শিল্পাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় দলের সংগঠনকে শক্ত ভিতে দাঁড় করানোই তাঁদের লক্ষ্য থাকবে।
মাদুরাইয়ের জয়ী সিপিএম সাংসদ বেঙ্কটেশন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক। তামিলনাড়ুর প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের তিনিই রাজ্য সম্পাদক। তাঁর কথায়, ‘‘মাদুরাই আন্তর্জাতিক হেরিটেজ শহর। কিন্তু কোনও কেন্দ্রীয় সরকারই মাদুরাইকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দেয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এখানে নেই। সাধ্যমতো চেষ্টা করব, মাদুরাইয়ের জন্য সংসদে সরব হওয়ার।’’
নটরাজন ও বেঙ্কটেশন মঙ্গলবার সংসদে নাম নথিভুক্তির পরে দিল্লির এ কে জি ভবনে গিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরির সঙ্গে দেখা করতে। ইয়েচুরি তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন, কঠিন সময়ে গোটা দেশের মানুষের পক্ষে বামপন্থী কণ্ঠ হিসেবে তাঁদের ভূমিকা নিতে হবে। শুধু তামিলনাড়ুর প্রতিনিধি হিসেবে নয়।