ভূপেশ বাঘেল, কমল নাথ এবং অশোক গহলৌত, চোখের সামনে ধস দেখলেন এইতিন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী।
বলা হচ্ছিল সেমিফাইনাল। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, দেশের সমস্ত প্রান্তে লাগাতার হারের পর যখন সারা দেশে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেস দলের কোনও অস্তিত্ব, ঠিক তখনই মৃতসঞ্জীবনী সুধার মতো কংগ্রেসকে অক্সিজেন জুগিয়েছিল ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান আর মধ্যপ্রদেশ। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে গো-বলয়ের প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে বিজেপির কাছ থেকে এই তিন রাজ্য ছিনিয়ে নিয়েছিল কংগ্রেস, যা আক্ষরিক অর্থেই জমিয়ে দিয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের ময়দান।
রমন সিংহ, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া এবং শিবরাজ সিংহ চহ্বণ। মাত্র সাত মাস আগে বিজেপির দুর্ভেদ্য দুর্গে ঢুকে গেরুয়া শিবিরের এই তিন সেনাপতির পতন ঘটিয়েছিল কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই কংগ্রেসের এই উত্থানে অনেক রাজনৈতিক পন্ডিতই পালাবদলের ইঙ্গিত দেখতে পেয়েছিলেন। বলা হচ্ছিল, গো-বলয়ের চাকা অন্য দিকে ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে। এই ইঙ্গিতে ভর করেই দিল্লি দখলের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল কংগ্রেস। একই স্বপ্ন দেখছিলেন আঞ্চলিক দলগুলির নেতারাও। মনে করা হচ্ছিল, নোটবন্দি, জিএসটিতে তিতিবিরক্ত মানুষ তাঁদের অবস্থান বদলাতে শুরু করেছেন। মনে করা হচ্ছিল, খরা আর ঋণের জালে জর্জরিত কৃষকরাও বিজেপি বিরোধী অবস্থান নিতে শুরু করেছেন, যে অবস্থান ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলবে সারা দেশ।
সেই আশা থেকেই ক্ষমতায় আসার জন্য কৃষকদের আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলেন রাহুল। বিধানসভা ভোটের জনাদেশ পাওয়ার মুহূর্তেই কৃষিঋণ মকুবের ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা। বিধানসভা নির্বাচনের সাত মাস পর অবশ্য কংগ্রেসের কাছে স্বপ্নভঙ্গ ছাড়া আর কিছুই থাকল না। দুরন্ত গতিতে এই তিন রাজ্যে প্রত্যাবর্তন হল বিজেপির। ছত্তীসগঢ়ে ভূপেশ বাঘেল, মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ এবং রাজস্থানে অশোক গহলৌত, এই তিন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই দেখলেন কংগ্রেসি তেরঙ্গার পতন। গো-বলয়ের এই তিন রাজ্যের রং এখন শুধুই গেরুয়া। তাদের দাপটে এখানে ফের আণুবীক্ষনিক হয়ে গেল কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে ছুটল বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া, মুখ থুবড়ে পড়ল বুয়া-বাবুয়ার মহাজোট
সাত মাসের মধ্যে ভোটারদের আশীর্বাদ এই ভাবে ফিরে আসাটা বোধহয় আশা করেননি অতি বড় বিজেপি সমর্থকও। যদিও ভারতীয় গণতন্ত্রে এমন নজির নতুন নয়। একই দিনে মানুষ লোকসভায় এক জনকে ভোট দিয়েছেন, আর বিধানসভায় অন্যকে, এমন ঘটনার নিদর্শন আছে এই দেশেই। তাই বিধানসভায় যখন ভোটারদের পছন্দ কংগ্রেস, লোকসভাতে তখন তাঁরা যাচ্ছেন মোদীর দিকেই। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফে কোনও নেতৃত্বের মুখ না থাকার কারণেই তাঁরা ফের বেছে নিলেন নরেন্দ্র মোদী, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পণ্ডিতরা। নিশ্চিত ভাবেই গো-বলয়ের তিন রাজ্যের এই ঘটনা বর্ণময় ভারতীয় গণতন্ত্রে আরও একটু রং ছড়িয়ে দিল।
আরও পড়ুন: ম্যায় বহত খুশ হুঁ, সকাল থেকে উপোস ওঁর জন্যই, বললেন যশোদাবেন