এক জন পলিটব্যুরোর দাপুটে নেতা এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অন্য জন তরুণ সাংসদ এবং দলে আপাতত শাস্তির কোপে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদলের পরে বিজেপি নেতাদের অভিনন্দন জানাতে গিয়ে সিপিএমে বিতর্ক আমদানি করলেন প্রবীণ ও নবীন দুই নেতাই। ঘটনাচক্রে, পার্টি কংগ্রেসের আগে সিপিএমে কেরল ও বাংলা শিবিরের দ্বন্দ্ব যখন তুঙ্গে, তখন পিনারাই বিজয়ন ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিতর্কে অন্তত সমতা রক্ষা করেছেন!
মন্ত্রিসভা হোক বা সংগঠন, বিজেপি-র কারও পদোন্নতি হলে তাঁদের প্রকাশ্যে অভিনন্দন জানানোর রেওয়াজ সিপিএমে নেই। বিজয়ন এবং ঋতব্রত, দু’জনেই এ বার সেই রেওয়াজ ভেঙেছেন। নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার তিন সদস্য নির্মলা সীতারামন, স্মৃতি ইরানি ও মুখতার আব্বাস নকভিকে টুইটে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত। আর কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বাড়তি দায়িত্বপ্রাপ্ত ও নতুন সব মুখকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তার মধ্যে তাঁর নিজের রাজ্যের বিজেপি নেতা আলফন্স কান্নানতামনের জন্য একটু বাড়তি উচ্ছ্বাসই দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাক্তন আইএএস আলফন্স বামেদের সমর্থনেই কেরলে নির্দল বিধায়ক হয়েছিলেন। বিজেপি-তে যোগ দেন ২০১১ সালে। এখন অবশ্য তিনি সাংসদ নন। মন্ত্রিত্ব লাভে ‘দীর্ঘ দিনের বন্ধু’ ওনামের উপহার পেয়েছেন বলে খুশি গোপন করেননি বিজয়ন।
তদন্ত কমিশন বসিয়ে সাংসদ ঋতব্রতকে রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সিপিএম। তাঁর তিন মাসের সাসপেনশনের মেয়াদ সবে শেষ হয়েছে। এখন দলে তাঁর অবস্থান ঠিক কী, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা নেই! স্বভাবতই তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি মন্ত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে ঋতব্রতের টুইট দেখে বাম কর্মী-সমর্থকদের একাংশই ধরে নিয়েছেন, তা হলে সাংসদ বোধহয় গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে সখ্য বাড়াচ্ছেন। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেকে! তার উপরে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে ঋতব্রত আরও টুইট করেছেন, ‘‘তিনটি অডিও টেপ শুনছি। আমার মনে হয়, জনতারও এই টেপ শোনা উচিত।’’ তাঁর এই মন্তব্যের সঙ্গে দলীয় তদন্ত কমিশনের কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তৈরি হয়েছে সে জল্পনাও।
ঋতব্রত অবশ্য যুক্তি দিচ্ছেন, ‘‘সাংসদ হিসাবে আমি কিছু সমস্যার কথা জানিয়ে ওই মন্ত্রীদের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছি। যেমন, পার্শ্ব শিক্ষকদের সমস্যা মেটাতে স্মৃতি ইরানির ভূমিকা ছিল। তাই সাংসদ হিসাবেই ওঁদের অভিনন্দন জানিয়েছি। এতে বিতর্কের কী আছে?’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির জন্মদিনে স্বয়ং মোদী যে শুভেচ্ছার চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ।
বিজয়নকে নিয়ে বিতর্ক আবার অন্য। কেরলে আরএসএসের সঙ্গে সিপিএমের সংঘর্ষে যখন রক্তপাত হচ্ছে, সেই সময়ে বিজেপি-র মন্ত্রীদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর উষ্ণ বার্তায় প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপি বড় বিপদ বলে তার মোকাবিলায় কংগ্রেসের হাত ধরা হোক, ইয়েচুরিদের এই লাইনের কট্টর বিরোধী বিজয়নেরা। ফলে, সেই বিজয়নের টুইটে বিজেপি-কে অভিনন্দন সিপিএমের চলতি বিতর্কে নয়া মাত্রা যোগ করেছে।