বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। —ফাইল চিত্র
ছিল ১৪ জন। কমে হয়েছে ৫। সরকারি কর্মীসংখ্যা এ ভাবে তাঁর জন্য বরাদ্দ সরকারি কর্মী না কমানোর আর্জি আগেও করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কিন্তু আবেদন খারিজ হওয়ার পর ফের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একই আবেদনপত্র পাঠালেন মনমোহন। নিয়ম না থাকলেও কর্মী সংখ্যা একই রাখাই দস্তুর। সেই প্রশ্নেই সরিয়ে দেওয়া কর্মীদের পুনর্বহালের জন্য মোদীকে লিখেছেন মনমোহন। উল্লেখ করেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কিন্তু অটল বিহারী বাজপেয়ী বা অন্য কোনও প্রধানমন্ত্রীর কর্মীসংখ্যা কমাননি। কেন্দ্রের তরফে মনমোহনের আবেদনের বিষয়ে এখনও সাড়া মেলেনি।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর জন্য ১৪ জন সরকারি কর্মী বরাদ্দ হয়। তার মধ্যে থাকেন ডিরেক্টর, আন্ডার সেক্রেটারি, ডেপুটি সেক্রেটারি, ব্যক্তিগত সহকারী, পিয়ন, করণিকের মতো কর্মী। ২০১৪ সালের মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে পর্যন্ত মনমোহনই ছিলেন ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। প্রাক্তন হওয়ার পর থেকে গত পাঁচ বছর তাঁর জন্য সেই ১৪ জন কর্মীই বরাদ্দ ছিল। প্রাক্তন হিসেবে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মনমোহন সিংহ তাঁর কর্মী না কমিয়ে একই রাখার আর্জি জানান।
কিন্তু দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই গত ২৬ মে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে মনমোহনকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বার্তা ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর আর্জি খারিজ করেছেন। অর্থাৎ জন্য বরাদ্দ কর্মীর সংখ্যা ১৪ জন রাখার আবেদন বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে তাঁর কর্মীর সংখ্যা ৫ জন করে দেওয়া হচ্ছে।
এর পরই মনমোহন মোদীকে চিঠি লিখে তাঁর স্টাফদের পুনর্বহালের আর্জি জানান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর, প্রাক্তনের সেই আবেদন কার্যত খারিজই করে দিয়েছেন বর্তমান। তার পর ফের একই আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন মনমোহন।
কিন্তু স্টাফ বা কর্মীসংখ্যা কমানো কী বিধিসম্মত। এ ক্ষেত্রে উঠে এসেছে নরসিংহ রাও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একটি সিদ্ধান্ত। সেই সময় ঠিক হয়, বিভিন্ন পদমর্যাদা মিলিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের জন্য প্রাক্তন হওয়ার পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ১৪ জন কর্মী বরাদ্দ থাকবে। তার পর কর্মী সংখ্যা কমিয়ে পাঁচ করা হবে।
আরও পডু়ন: বর্ধিত শুল্ক তুলে নেওয়া উচিত ভারতের, কথা বলব মোদীর সঙ্গে, জি-২০-র আগে চাপ বাড়ানোর কৌশল ট্রাম্পের?
আরও পড়ুন: তৃণমূলে পুনরুত্থান শোভনের? পার্থর লাগাতার সক্রিয়তায় জল্পনা জোরদার, নস্যাৎ করছেন বৈশাখী
কিন্তু তার পর থেকে সেই নিয়মে ছাড় দিয়েছেন সব কর্মরত প্রধানমন্ত্রীই। অর্থাৎ প্রাক্তন কোনও প্রধানমন্ত্রীর কর্মীসংখ্যাই কমাননি তাঁদের উত্তরসূরিরা। ফলে সেটাই কার্যত দস্তুর হয়ে গিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের সম্মান এবং সৌজন্যের কথা মাথায় রেখেই আগের কোনও প্রধানমন্ত্রী কর্মীসংখ্যা কমাননি। সেক্ষেত্রে আইন না ভাঙলেও এই প্রথম প্রচলিত রীতির উল্টো পথে হাঁটলেন নরেন্দ্র মোদী। মনমোহনের দ্বিতীয় আবেদনের পরও মোদী সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে রীতিভঙ্গই হবে। পর্যবেক্ষকদের একাংশ এই ঘটনাকে এক দিকে যেমন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মতো পদকে অসম্মান হিসেবে দেখছেন, একইসঙ্গে মোদী সরকারের অসৌজন্যতা এবং ঔদ্ধত্য বলেও ব্যাখ্যা করছেন।
আর ১০ বছর প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব সামলানো মনমোহন নিজে কী বলছেন? প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, মনমোহন তাঁর নিজের এবং বাজপেয়ীর উদাহরণই টেনে এনে মোদীকে বার্তা দিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্য পাঁচ বছর তো ১৪ জন কর্মী বরাদ্দ রেখেছিলেনই, তার পরেও কমানো হয়নি এবং বাজপেয়ী নিজেই দু’জন কর্মী কমানোর কথা বলায় ১৪ থেকে কমিয়ে ১২ করা হয়েছিল— এ কথা মোদীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মনমোহন।