Madan Lokur

‘মামলা তালিকাভুক্ত করুক কম্পিউটার’

ক্যাম্পেন ফর জুডিশিয়াল অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যান্ড রিফর্মস নামে একটি সংস্থার আয়োজনে শনিবার রাজধানীতে একটি আলোচনাসভা ছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৩
Share:

প্রাক্তন বিচারপতি মদন বি লোকুর। — ফাইল চিত্র।

সুপ্রিম কোর্টে কোন মামলা শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হবে, সেটা কম্পিউটারের উপরে ছেড়ে দিলে পক্ষপাতের আশঙ্কা দূর হতে পারে বলে মনে করছেন প্রাক্তন বিচারপতি মদন বি লোকুর। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসর নেওয়ার পরে বিচারপতি লোকুর বর্তমানে ফিজির সুপ্রিম কোর্টে প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

Advertisement

ক্যাম্পেন ফর জুডিশিয়াল অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যান্ড রিফর্মস নামে একটি সংস্থার আয়োজনে শনিবার রাজধানীতে একটি আলোচনাসভা ছিল। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিচারপতি লোকুর শুনানির জন্য মামলা তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া এবং কোন বেঞ্চে সেই মামলা যাবে, তার রস্টার নির্মাণের প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনায় সরব হন। বিচারপতি লোকুরের আগে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন সু্প্রিম কোর্টের আর এক প্রাক্তন বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফও। তার পরেই তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বিচারপতি লোকুর বলেন, ‘‘অমুক বেঞ্চে মামলা গেলে তমুক রায়ই হবে, এমন একটা ধারণা এখন তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’ উদাহরণস্বরূপ তিনি উমর খালিদের প্রসঙ্গ তোলেন। সম্প্রতি উমরের জামিনের আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। বিচারপতি লোকুর বলেন, ‘‘উমরের জামিনের মামলা দীর্ঘদিন তালিকাভুক্ত হয়নি। ১৩ বার উঠেও মুলতুবি হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আইনজীবী বললেন, কী রায় হবে আমরা জানি। আবেদন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’’ এই প্রসঙ্গেই মামলা তালিকাভুক্তির দায়িত্ব কম্পিউটারের উপরে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন বিচারপতি লোকুর। দাবি করেন, সেটা করা গেলে স্বেচ্ছাচারের প্রকোপ কমে যাবে। নোটবন্দি, অনুচ্ছেদ ৩৭০, নির্বাচনী বন্ডের মতো বহু মামলাই দীর্ঘদিন তালিকাভুক্ত না হয়ে পড়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

তবে বিচারপতি লোকুর এ কথাও মনে করিয়েছেন যে, তালিকাভুক্তি নিয়ে সমস্যা আগেও ছিল। আইনজীবী থাকার সময়ে তিনি দেখেছেন, প্রধান বিচারপতির ঘরে ‘মাছের বাজারের’ মতো ভিড় জমিয়ে তারিখ পাওয়া নিয়ে চেঁচামেচি চলত। পরে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পি এন ভগবতী তাঁর সময়ে ‘লিস্টিং প্রোফর্মা’ ব্যবস্থা চালু করেন। সেখানে মামলা তালিকাভুক্তির সময়ে আইনজীবীদের জানাতে হত, কোন বিচারপতির কাছে মামলাটি আগে উঠেছিল এবং মামলার আইনি দিকটি উল্লেখ করে বলতে হত একই ধরনের অন্য কোনও মামলা জমে আছে কি না। বিচারপতি লোকুরের মতে, এই ব্যবস্থায় ধারাবাহিকতা অনেক বেশি ছিল। পক্ষপাত একেবারে এড়ানো না গেলেও রায়টা সবাই মন থেকেই
মেনে নিত।

Advertisement

এর পরেই বিচারপতি লোকুর রস্টার ব্যবস্থার কথা তোলেন। মনে রাখা যেতে পারে, মোদী জমানার প্রথম মেয়াদে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে রস্টারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে নজিরবিহীন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন চার জন বিচারপতি। বিচারপতি লোকুর এবং বিচারপতি জোসেফ দু’জনেই সেই দলে ছিলেন। আর ছিলেন বিচারপতি চেলমেশ্বর এবং বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। গগৈ পরবর্তী কালে প্রধান বিচারপতি হন। কিন্ত রস্টার বিতর্কের মীমাংসা হয়নি। হয়নি যে, সেটা বিচারপতি লোকুরের এ দিনের কথায় ফের স্পষ্ট হয়েছে। বিচারপতি লোকুর বিচারপতি রাজিন্দর সাচারের লেখা উদ্ধৃত করে বলেন, শিখ দাঙ্গা মামলার সময় থেকে রস্টার নিয়ে ‘কলকাঠি নাড়ার’ দৃষ্টান্ত দেখা গিয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামী এবং শিক্ষক-সমাজকর্মী জি এন সাইবাবার মামলার তুলনা টানেন বিচারপতি। বলেন, ‘‘যখন এক সাংবাদিক জামিন চাইলেন, সে দিনই সন্ধেয় শুনানি হয়ে গেল। আবার এক জন হাই কোর্টে জামিন পেলেন, সরকার পক্ষ বলল ভুল হয়েছে। তড়িঘড়ি বিশেষ বেঞ্চ বসিয়ে জামিন স্থগিত করা হল।’’ মামলা তালিকাভুক্তি এবং রস্টার নির্মাণ, দুই ক্ষেত্রেই অধিকতর স্বচ্ছতা না এলে বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসবে না বলেই মত প্রকাশ করেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement