প্রমোদচন্দ্র মোদী
গত লোকসভা নির্বাচন পর্বে মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশে একের পর এক বাড়িতে হানা দিতে শুরু করেছিল আয়কর দফতর। যাঁদের বাড়ি, তাঁরা কোনও না কোনও বিজেপি-বিরোধী নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অভিযোগ উঠেছিল, বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘কাজে লাগানো হচ্ছে’ আয়কর দফতরকে। সেই সময়ে কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের চেয়ারপার্সন ছিলেন প্রমোদচন্দ্র মোদী। অভিযোগ পেয়ে তাঁকে নির্বাচন কমিশনে ডেকেও পাঠানো হয়েছিল। সেই রাজস্ব অফিসার (আইআরএস) প্রমোদচন্দ্র মোদীকে শুক্রবার আচমকা নিয়োগ করা হল রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে। ওই পদ থেকে পি পি কে রামাচারিয়ুলুকে সরিয়ে দিয়ে। যা নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী শিবির।
১ সেপ্টেম্বর রামাচারিয়ুলুকে রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনিই রাজ্যসভার সচিবালয়ের প্রথম অফিসার, যিনি ওই পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু তার পরে কেন মাত্র ৭৩ দিনের মাথায় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল, তার কোনও কারণ অবশ্য দেখানো হয়নি। রাজ্যসভার সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁকে নতুন সেক্রেটারি জেনারেল প্রমোদ মোদীর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে।
এ দিনই কাজে যোগ দিয়েছেন প্রমোদ। তাঁকে এক বছরের মেয়াদে নিয়োগ করা হয়েছে। অথচ সেপ্টেম্বরে রামাচারিয়ুলুকে নিয়োগের সময়ে কোনও মেয়াদ বেঁধে দেওয়া ছিল না। উল্লেখ্য, এর আগে প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের শীর্ষ পদেও অবসরের পরে প্রমোদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে যে সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠদের ডেরায় আয়কর দফতর হানা দিয়েছিল, সেই তালিকায় ছিলেন মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা কমল নাথ, তামিলনাড়ুর ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন। আয়কর দফতরকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর অভিযোগ পেয়ে নির্বাচন কমিশন তৎকালীন রাজস্ব সচিব অজয়ভূষণ পাণ্ডে ও প্রমোদকে তলব করে। তাঁদের কাছ থেকে আয়কর হানার ব্যাখ্যা চেয়ে কমিশন নির্দেশ দিয়েছিল, নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি জারি হওয়ার পরে আয়কর দফতর যেন নিরপেক্ষ পদক্ষেপ করে। কোনও বাছবিচার না করা হয়। আয়কর হানার আগে যেন কমিশনকেও জানানো হয়।
সাধারণত প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের চেয়ারপার্সন পদে কারও মেয়াদ বাড়ে না। কিন্তু সেই ‘প্রথা’ ভেঙে ১৯৮২ সালের ব্যাচের ইন্ডিয়ান রেভেনিউ সার্ভিসের (আইআরএস) অবসরপ্রাপ্ত অফিসার প্রমোদচন্দ্র মোদীর পর পর তিন বার ওই পদে মেয়াদ বেড়েছিল। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত টানা ২৭ মাস তিনি ওই পদে ছিলেন। খুব কম অফিসারই এত দীর্ঘ সময় ওই পদে থেকেছেন। মে মাসে অবসর নেওয়ার পরে এ বার মোদীর সেক্রেটারি জেনারেল পদে নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে তাই প্রশ্ন উঠেছে।
রাজ্যসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক জয়রাম রমেশের মন্তব্য, “এর কারণ বুঝতে হবে।’’ রামাচারিয়ুলুর অপসারণ নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “উনি পেশাদার, নিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি। মোদী জমানায় এই তিনটিই ভয়ঙ্কর পাপ।’’ রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘কেন রামাচারিয়ুলুকে ৭৩ দিনের মাথায় সরিয়ে দেওয়া হল, তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই। রাজ্যসভার ইতিহাসে এ ধরনের নিয়োগ, অপসারণ ও পুনর্নিয়োগের দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে।’’
নরেন্দ্র মোদীর জমানায় আয়কর অফিসারদের অবসরের পরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ অবশ্য এই প্রথম নয়। প্রমোদের পূর্বসূরি সুশীল চন্দ্র দীর্ঘ সময় পর্ষদের চেয়ারপার্সন পদে ছিলেন। অবসরের পরে তাঁকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এখন তিনি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। তাঁর আগে পর্ষদের আর এক প্রাক্তন চেয়ারপার্সন কে ভি চৌধুরীকে নিয়োগ করা হয় কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনার হিসেবে।