সুপ্রিম কোর্ট অসমের চা জনগোষ্ঠীর মানুষদের ‘আদি বাসিন্দা’ বলে ঘোষণা করলেও ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বিদেশি সন্দেহে চা শ্রমিকদের নোটিস পাঠাচ্ছে। এ নিয়ে বাগান অঞ্চলে নতুন করে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
এত দিন বাঙালি পরিবারে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নোটিস যাচ্ছিল। বাদ যাননি বিধায়কের ভাই, চার দশক ধরে বাইরে থাকা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসার, ৬১-র ভাষাসংগ্রামীও। গত সপ্তাহে নোটিস ছড়িয়ে পড়ে চা বাগানগুলিতে। নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেখে দিশাহারা অবস্থা শ্রমিকদের।
শিলচর জেলা বার সংস্থার সভাপতি চূণীলাল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, শুধু তাঁর কাছে ১৮ জন এই ধরনের নোটিস নিয়ে এসে আইনি পরামর্শ চেয়েছেন। তাঁরা বেশিরভাগ হাতিছড়া ও কুম্ভা বাগানের। চূণীবাবু বলেন, ‘‘কোথাও সমন্বয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, এনআরসি নবায়নে সুপ্রিম কোর্ট চা বাগানের মানুষদের আদি বাসিন্দা বলে ঘোষণা করেছে। চা ও প্রাক্তন চা পরিবারের সদস্যদের নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণপত্র দেখানোর প্রয়োজন নেই বলে রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা। এরপর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল প্রমাণপত্র দেখতে চাইছে। একই মন্তব্য আইএনটিইউসি নিয়ন্ত্রিত বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহকারী সম্পাদক ব্রহ্মানন্দ কুর্মি, সিপিএম নেতা সমীরণ আচার্য, প্রাবন্ধিক সনৎ কৈরির।
সনৎবাবু ২০১৫ সালের ২১ জুলাইয়ের সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের প্রতিলিপি দেখিয়ে বলেন, ‘‘এর পরও তাঁদের হয়রানি করা অর্থহীন।’’ বিস্মিত কুর্মিবাবুর প্রশ্ন, ‘‘চা শ্রমিকরা আবার কী করে বিদেশি হন!’’ একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন সমীরণবাবু।
কাছাড়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক রাজীব রায় জানান, এখন নতুন করে কাউকে বিদেশি সন্দেহে নোটিস পাঠানো হচ্ছে না। ১৯৯৭ সালের রিপোর্টের ভিত্তিতেই ডাকা হচ্ছে। এত দিন ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা কম ছিল, ধীরে ধীরে নোটিস পাঠানো হচ্ছিল। এখন জেলায় ছ’টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কাজ করছে। ফলে মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বেশি হারে নোটি, যাচ্ছে। বাগান শ্রমিক বা যাঁকেই অভিযুক্ত করা হোক না কেন, আইন অনুসারেই তাঁকে নোটিস পাঠাতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায় বা অন্য বক্তব্য থাকুক, ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে বলতে হবে।
অন্য দিকে, রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে রাজ্য সরকার জেলায় জেলায় আজ নাগরিক সভার আয়োজন করেছিল। ব্যতিক্রম ছিল না হাফলংও। কিন্তু আজ জেলাশাসকের কনফারেন্স-রুমে নাগরিক সভায় বাঙালি কোনও সংগঠনের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। এ নিয়ে হাফলঙয়ের বিভিন্ন বঙ্গভাষী সংগঠন ক্ষুব্ধ। ভোক্ষ ছড়িয়েছে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন ও বাঙালি যুব ছাত্র পরিষদেও। সমাজসেবী মণীন্দ্র দাস বলেন, ‘‘বাঙালিদের বিরুদ্ধে এ এক ষড়যন্ত্র। নাগরিক সভায় বাঙালি কোনও প্রতিনিধিকে না ডেকে আমাদের জনগোষ্ঠীকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।’’ নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সন্মেলনের কার্যনির্বাহী সদস্য লিটন চক্রবর্তী জেলা প্রশাসনের এই আচরণে ক্ষোভপ্রকাশ করেন।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এ দিনের নাগরিক সভায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও সংগঠনের প্রতিনিধিদের জেলাশাসক রঞ্জিৎ হাজরিকা জানিয়েছেন, ডিমা হাসাও জেলায় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) কাজ ঠিকমতো চলছে। জেলার ৫টি ব্লকের ২৮টি সেবাকেন্দ্রে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। নথিপত্র পরীক্ষার কাজ শেষের পথে। শীঘ্রই খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। জেলাশাসক আরও জানান, নথিপত্র পরীক্ষার কাজ শেষ হতে এলেও এ বিষয়ে প্রবীণ নাগরিকদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। কারণ সঠিক নাগরিকপঞ্জি তৈরিতে সকলের সহযোগিতা জরুরি। সভায় নাগরিকপঞ্জির নোডাল অফিসার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক মেঘঞ্জয় থাওসেন উপস্থিত ছিলেন।