প্রতীকী ছবি।
ভাল চাকরির আশায় কায়রোয় গিয়ে একটি কিডনি খুইয়ে ভেলোরে ফিরে আসতে হয়েছে তাঁকে।
কিডনি খুইয়ে সংসার চালাতে এখন ভেলোরে অটো রিকশা চালাচ্ছেন ২৯ বছর বয়সী ইয়াসের আহমেদ বাসা। সেই যৎসামান্য রোজগারেই মা, বাবার দেখাশোনা করছেন। দূরে থাকা স্ত্রীকেও টাকা পাঠাচ্ছেন।
কায়রোতে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল মধু নামে এক জন। ইয়াসের জানিয়েছেন, মধুই তাঁকে একটা অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে ছিলেন আরও ৫ জন। পরের দিনই ইয়াসেরকে নিয়ে যাওয়া হয় নীল বাদরাওই হাসপাতালে। বলা হয়, সেখানে তাঁকে নানা রকমের রক্ত পরীক্ষা করানো হবে। করানো হবে মাথার স্ক্যানও। সেখানেই টাকার লোভ দেখিয়ে তাঁর শরীর থেকে তুলে নেওয়া হয় বাঁ দিকের কিডনিটি। সেটি বেচা হয় তামিলনাড়ুর মালাড়ের বাসিন্দা পঙ্কজ রাওকে। পঙ্কজও ছিলেন তখন কায়রোতেই। ইয়াসের এখনও জানেন না, দুষ্ট চক্রের হাতে তাঁর একটি কিডনি তুলে দেওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক কিডনি চক্রের সঙ্গে এখন তিনিও অভিযুক্ত।
স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ৭ লক্ষ টাকা ধার হয়েছিল ইয়াসেরের। ২০১১ সালে। নিজের গ্রাম ভেলোরে অটো রিকশা চালিয়ে আর কতই বা রোজগার হত ইয়াসেরের। সেই রোজগারে ৭ লক্ষ টাকার ধার মেটানো সম্ভব হত না তাঁর। তাই ভাল কাজের খোঁজে ২০১৪-য় পাড়ি জমিয়েছিলেন মুম্বইয়ে। ভেবেছিলেন সেই মুলুকে গেলে ভাল টাকা কামানো যাবে। সেখানে ট্যাক্সি চালাতেন। কিন্তু তাতে খুব একটা রোজগার হত না ইয়াসেরের।
ফলে, হন্যে হয়ে একটা ভাল মাইনের চাকরি খুঁজতে শুরু করলেন। দরখাস্ত পাঠাতে শুরু করলেন এখানে ওখানে। চাকরির একের পর এক অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম ভরতে শুরু করলেন, ইন্টারনেটে। আর সেই ভাবেই তাঁর যোগাযোগ হল আমদাবাদের শিক্ষা কনসালটেন্সির সঙ্গে। ইয়াসের তখনও জানতেন না, ওই কনসালটেন্সি চালান একটি আন্তর্জাতিক কিডনি চক্রের মাস্টার মাইন্ড সুরেশ প্রজাপতি।
ইয়াসেরের কথায়, ‘‘প্রথমে আমি আমদাবাদে যাই। ২০১৫-র জুনে। সেখানে আমাকে তোলা হয় ‘আকাশ লজ’-এ। তার পর সেখানে হঠাৎই নমুনা পরীক্ষার জন্য আমার কাছে রক্ত চাওয়া হয়। অবাক হয়ে জানতে চাই, রক্ত দিতে হবে কেন? ওরা বলে, বিদেশে চাকরি জোটাতে হলে শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা দেওয়াটা জরুরি। আর তার জন্যই রক্ত দিতে হবে আমাকে। তার পরই দ্রুত চাকা গড়াতে শুরু করে। জুলাইয়েই আমাকে পাঠানো হয় কায়রোয়। বলা হয়, সব রেডি। উবের চালাতে হবে। ওখানে গেলেই চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু আমি ৯৯ শতাংশ ঠকেছিলাম। আর বাকি ১ শতাংশ ছিল আমার লোভ।’’
একটি কিডনি বেচলেও ইয়াসের কিন্তু হাতে পেয়েছিলেন সামান্য কিছু অর্থ। উবেরের চাকরি তাঁর ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গিয়েছিল।
ইয়াসের এখন আর স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন না। ভয় পান। ছোট ছোট দু’টো ছেলে, মেয়েকেও ছেড়ে থাকতে হয় তাঁকে। জানতে পারলে তো তাঁকে দিবারাত্র জ্বালিয়ে মারবেন স্ত্রী! জানতে চাইবেন, তাঁর একটা কিডনি কোথায় গেল? সেটা তিনি খোয়ালেন কী ভাবে? টাকার লোভে?
স্ত্রী তো আর তখন বুঝতে চাইবেন না, ইয়াসের প্রথমে পড়েছিলেন ফাঁদে। একটা দুষ্ট চক্রের খপ্পরে। কাজ জোটানোর আশায় গিয়ে দারুণ ভাবে ঠকেছিলেন। টাকা কামানোর জন্য তখন উঠেপড়ে লেগেছিলেন তিনি। ধারকর্জে যে ডুবে গিয়েছিল মাথা। ফলে, টাকার লোভেও পড়েছিলেন। তাঁকে ভয়ও দেখানো হয়েছিল। তার জন্যই খুইয়েছিলেন তাঁর একটি কিডনি।
আরও পড়ুন- তরুণীর পেটে অস্ত্রোপচার করে এ কী পেলেন চিকিৎসকেরা?
আরও পড়ুন- অধস্তনের মেয়েকে ধর্ষণ, গ্রেফতার ভারতীয় সেনার কর্নেল
চাকরির লোভে একটি কিডনি খুইয়ে এখন চেন্নাই থেকে অনেক দূরে তালোজা গ্রামে স্ত্রী, ছেলে, মেয়েকে ফেলে রেখে ভেলোরে মা, বাবার কাছে থেকে অটো রিকশা চালিয়ে যৎসামান্য রোজগারে বাঁচতে হচ্ছে ইয়াসেরকে। সেই টাকাতেই দেখাশোনা করতে হচ্ছে মা, বাবার। দূরে থাকা স্ত্রীর হাতেও ঠিক সময়ে পৌঁছে দিতে হচ্ছে টাকা, সংসার চালানোর জন্য।